
বিশ্বচরাচর ডেস্ক : সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় মিসরের ঐতিহ্যবাহী আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শাইখুল আজহার ড. আহমদ তাইয়িবের ইসলামের একাধিক বিয়ে সংক্রান্ত একটি বক্তব্য নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তার বক্তব্য ভিন্নভাবে মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ায় মুসলিম বিশ্বজুড়ে শাইখুল আজহারকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আল আজহারের অফিসিয়াল সাইটে লিখিতভাবে এবং মিডিয়ায় তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, তার বক্তব্য মিডিয়ায় ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
তিনি বলেছেন, বহুবিবাহ ইসলামি শরিয়তে অনুমোদিত বিধান। তবে বিষয়টি স্ত্রীদের প্রতি ন্যায়বিচার ও সমতাবিধানের সঙ্গে শর্তযুক্ত। তাই যদি এই আদল বা ন্যায়বিচার না পাওয়া যায় তাহলে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হবে। কারণ, বিয়ের ক্ষেত্রে কুরআনের মূলনীতি হলো, ‘যদি তোমরা সমতা বিধান করতে না পারার আশঙ্কা কর তবে একজন স্ত্রীই যথেষ্ট।’ (সূরা নিসা : ৩)।
গত ১ মার্চ এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘আল মাসরিয়া’কে দেওয়া সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে শাইখুল আজহার আরও বলেন, কুরআনে মাসনা-সুলাসা-রুবায়ার আয়াতটি মুস্তাকিল বা স্বতন্ত্র হুকুম হিসেবে নাজিল হয়নি। অর্থাৎ, এমন বলা হয়নি যে, ‘হে মোমিনরা তোমরা দুই, তিন বা চারজনকে বিবাহ করো।’ বরং এটি শর্তযুক্ত বিধান। অনেকটা অজুর মতো। আর সমতা বিধানের শর্তটি আপেক্ষিক বা তাজরিবা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয় নয় যে, একজন দ্বিতীয় বিয়ে করল, পরে সমতা করতে না পেরে তালাক দিয়ে দিলো। এ জন্যই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমরা সমতা বিধান করতে না পারার আশঙ্কা করো।’
সুতরাং বোঝা গেল, এটিই বিবাহের ক্ষেত্রে মূলনীতি। এবং আমি পূর্ণ দায়িত্ববোধ থেকে বলছি, যারা বলে, বহুবিবাহই শরিয়তে মূল বিধান, তাদের বক্তব্য সঠিক নয়; বরং এটি একটি রুখসাহ (অবকাশ) পর্যায়ের হুকুম। অর্থাৎ, আবশ্যক নয়, সুযোগ রয়েছে এমন বিধান। তিনি আরও বলেন, বহুবিবাহের অধিকার খর্ব হয় এমন কোনো আইন প্রণয়নের সমর্থন আমি করি না; বরং কুরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে দূরতম সাংঘর্ষিক হয় এমন যেকোনো আইনের পরিষ্কার বিরোধিতা করি। যাতে সুযোগসন্ধানী কেউ শরিয়তের বিধানের অপব্যাখ্যা বা এর আড়ালে কোনো ফায়দা লুটতে না পারে। কিন্তু পাশাপাশি এই অধিকারের অন্যায় প্রয়োগ করে প্রথম পক্ষের স্ত্রী-সন্তানদের কষ্ট দেওয়াও আয়াতের উদ্দেশ্যের সঙ্গে কতটা সংগতিপূর্ণ তাও আমাদের ভাবতে হবে।
মিসরে তালাক ও বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বহুবিবাহের প্রবণতা। তাই এ বিষয়ে শরিয়তের বিধিবিধান স্পষ্ট করার লক্ষ্যে শাইখুল আজহার উপরোক্ত বক্তব্য দেন। বোদ্ধা মহলে তার এ বক্তব্য প্রশংসিত হলেও একশ্রেণির সংবাদমাধ্যমে তথ্য বিকৃতি করে ছাপানোর কারণে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ বিষয়ে আল আজহার কর্তৃপক্ষ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সবাইকে সতর্ক থাকার ও ভুল না বোঝার আহ্বান জানিয়েছে।