এক অনুষ্ঠান করেই জিরো থেকে হিরো আলম

নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রবাসের মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং একে প্রসারিত করার জন্য দীর্ঘ ২১ বছর ধরে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এক তরুণ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির ইয়র্ক কলেজ থেকে বিজনেসে ব্যাচেলর পাস করার পরও কোনো চাকরি না করে পেশা হিসেবে বেছে নেন শো অর্গানাইজকে। ১৯৯৪ সালে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে প্রথম পা রেখেছিলেন নিউইয়র্কে। এখানে আসার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। সেই সঙ্গে ভিটামিন তৈরির একটি কোম্পানিতেও কাজ পান। সেই কাজ করেই লেখাপড়ার খরচ চালাতন। ১৯৯৭ সালে কলেজে একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বভার পড়ে তার ওপর। আর এই অনুষ্ঠানই নিউইয়র্কে তার সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেয়। বনে যান জিরো থেকে হিরো। সেটা ১৯৯৭ সালের ঘটনা। সেই অনুষ্ঠান দিয়েই শুরু তার শো অর্গানাইজ। সেই স্টুডেন্ট বর্তমানে নিউইয়র্কে সফল এক বাংলাদেশি তরুণ। এরপর করেছেন প্রায় ৪০০ অনুষ্ঠান। দেশের প্রায় সব স্বনামধন্য শিল্পীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এনেছেন। করিয়েছেন শো। মালিক হয়েছেন মিলিয়ন ডলারের। এখন স্বপ্ন দেখেন বিলিয়নিয়ার হওয়ার। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম, তিনি নিউইয়র্কের ভীষণ পরিচিত মুখ, বাংলাদেশের সকল তারকাদের প্রিয় আলম ভাই। পুরো নাম আলমগীর খান আলম। থাকেন নিউইয়র্কের ইস্ট এলমহার্স্টে। তার দেশের বাড়ি চাঁদপুরে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি একাই নিউইয়র্কে থাকেন। আগামী জুলাইয়ে বাংলাদেশে আইইউবি ইউনিভার্সিটিতে ল ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্রীকে বিয়ে করছেন।
এত পেশা থাকতে কেন তিনি প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হলেন এবং কীভাবে এ পেশায় সফর হলেন, সেই গল্প জানাতে গিয়ে ঠিকানাকে বলেন, প্রোগ্রামের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এবং শোবিজের মানুষের সঙ্গে চেনা-জানা না থাকার পরও ইয়র্ক কলেজের বাংলাদেশ ক্লাবের প্রেসিডেন্টের সুবাদে প্রথম কালচালার প্রোগ্রাম করেন। ওই প্রোগ্রামে বাংলাদেশ থেকে সাবিনা ইয়াসমীন, শুভ্র দেব, শাকিলা জাফর, মৌ, হানিফ সংকেতসহ বেশ কয়েকজন নামী শিল্পীকে নিয়ে এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। হল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। কলেজ বাজেট দিয়েছিল প্রোগ্রামের কিন্তু অনুষ্ঠান করতে কলেজের টাকা লাগেনি। টিকিট বিক্রির টাকা থেকে অর্জিত আয় দিয়ে প্রোগ্রামের ব্যয় বহন করে উল্টো কলেজের ফান্ডে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করেন আলম। এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ খুশি হয়ে ওই অর্থ দিয়ে স্টুডেন্টদের জন্য পিকনিকের আয়োজন করে। এভাবেই আলমের শোবিজ জগতে পদার্পণ। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে একে একে প্রায় ৪০০ শো করেছেন আলম। বর্তমানে প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম বাংলাদেশি আলম। বাংলাদেশের নায়ক রাজ রাজ্জাক থেকে শুরু করে মৌসুমী, শাবনূর, পপিসহ এই প্রজন্মেরও প্রায় সব নায়ক-নায়িকা; রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন থেকে শুরু করে আজকের নতুন শিল্পীদের প্রায় সবাইকে নিউইয়র্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বাদ যাননি বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী ও মডেলরাও। তাদেরকেও যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছেন ও প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করেছেন। শুধু নিউইয়র্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৩০টি অঙ্গরাজ্যে তিনি প্রোগ্রাম করেছেন এবং প্রতিটি অনুষ্ঠানই ছিল দর্শকে ঠাসা। এবার আলমের পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গ-ি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার প্রোগ্রাম অর্গানাইজকে বিস্তৃত করার। এ জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে টার্গেট করেছেন ফ্রান্স, ইতালি, লন্ডনে, দুবাই, কাতার, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, সুইজারল্যান্ডসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন দেশ ও শহরকে। আগামী দু-এক বছরের মধ্যেই তিনি ৪০-৫০ হাজার দর্শক নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে তার ঢালিউল অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান করতে চাইছেন। আগামী ১৭ এপ্রিল ও ২২ এপ্রিলের ঢালিউল অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান নিয়ে এখন তিনি ভীষণ ব্যস্ত। পর পর দুটি অনুষ্ঠান হবে। একটি নিউ আটলান্টিক সিটিতে, অন্যটি নিউইয়র্কে। দুটি অনুষ্ঠানেই যোগ দেবেন প্রায় ৩০ জন শিল্পী।


প্রোগ্রাম অর্গানাইজার না হলে কী হতেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ভিটামিন কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। সেখানে থাকলে এত দিনে আরও অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে পারতাম। এছাড়া এ জাতীয় অন্য কোনো কোম্পানিতে কাজ করলেও অনেক বড় পদে চাকরি করতে পারতাম। সেখানে প্রচুর ডলার আয়ের সুযোগও ছিল। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। কেন জানি শো বিজ ও প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করাটাই নেশা হয়ে গেল। মানুষের নানা রকমের নেশা থাকে। কিন্তু আমার নেশা একটাইÑপ্রোগ্রাম অর্গানাইজ করা।
কেন এটা করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যখন স্টুডেন্ট হিসেবে এ দেশে আসি, তখন নিজের টাকায় পড়তে আসি। স্কলারশিপ তেমন পাইনি। তাই চিন্তা করেছি, আমাকে কিছু একটা করতে হবে। কেবল লেখাপড়া শেষ করে চাকরি-বাকরি করলেই হবে না, দেশের জন্যও কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু এ রকম অর্গানাইজার হব, সেটা চিন্তায়ও ছিল না। প্রথম প্রোগ্রামটি সফল হওয়ার পর তাতেই পূর্ণ মনোযোগ দিই।
প্রথম প্রোগ্রামের অনুভূতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলম বলেন, ওই সময়ে এ দেশের কমিউনিটির লোকজনের সঙ্গে আমার তেমন একটা পরিচয় ছিল না। সাপ্তাহিক ঠিকানায় ওই অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। এর মাধ্যমেই সবাই অনুষ্ঠানের খবর জেনে টিকিট কেনে। কলেজ কর্তৃপক্ষ যখন আমাকে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়েছিল, তখন একটু টেনশনেই ছিলাম। কিন্তু পরে সব ভালোমতো হওয়ায় আত্মবিশ্বাস ও সাহস পাই।
তিনি বলেন, ওই সময়ে মানুষ অনেক টিকিট কিনত। কোনো অনুষ্ঠান করলে কানায় কানায় হলরুম পূর্ণ থাকত। কিন্তু এখন সেটা খুব কমই হয়। কারণ এখন মানুষ টিকিট কিনতে চায় না। ফ্রি টিকিট বেশি চায়। একটি অনুষ্ঠান করতে অনেক খরচ। তাই ফ্রি টিকিট দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আবার আগে এমন ছিল স্পনসররাই ১০-২০ হাজার ডলারের টিকিট কিনত। কিন্তু এখন এত বড় স্পনসর নেই। যা আছে তারাও বেশি অর্থ ব্যয় করতে চায় না।
অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, জানি না মানুষের আয় কমে গেছে নাকি তারা বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। তবে একটি শ্রেণি এখনো টিকিট কেনে। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে আমেরিকায় টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য তিনি আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
দেশের কতসংখ্যক শিল্পীকে আমেরিকায় নিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে আলমগীর খান আলম বলেন, সংখ্যাটা বলতে পারব না। এক-একটি অনুষ্ঠানে ১০-১৫ জন শিল্পী থাকেন। সেই হিসাবে একটি ধারণা পেতে পারেন। তবে এটা বলতে পারি, শাকিব খান আর অপু বিশ্বাস ছাড়া এমন কোনো বড় শিল্পী নেই, যাদের আমি এ দেশে আনিনি। সিনেমা, গান ও নাটক, মডেলিং ও নৃত্যকলা সব সেক্টরের সবাই এসেছেন। শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসও আসছেন এ বছরেই। তবে তারা একই অনুষ্ঠানে আসছেন না, আলাদা অনুষ্ঠানে আসছেন। শাকিব খান জুলাইতে আর অপু আসবেন আগস্টে।
আমেরিকায় বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে কতখানি প্রসারিত করতে পেরেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় ২১ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। আমি যতখানি করেছি তাতে সন্তুষ্ট। তবে আরও করতে পারলে ভালো লাগবে। আমি যেখানে এনে রেখে গেলাম, অন্য কেউ না কেউ সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আপনার কোনো উত্তরসূরি কি তৈরি করেছেন, যিনি এটাকে এগিয়ে নিতে পারেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো তেমনটি তৈরি করতে পারিনি। কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে পারেনি।
নিজের পেশা সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে নিউইয়র্কে আসার পর ১৯৯৮ সালে বিজনেসে ব্যাচেলর পাস করি। এরপর ২০০১ সাল পর্যন্ত চাকরি করি। এটি আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ছিল। বর্তমান পেশায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজে প্রোগ্রাম করার পর দেখলাম, ভারতের দেব ঘোষ নামের এক ব্যক্তি তাদের দেশ থেকে শিল্পী এনে অনুষ্ঠান করেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্পীদেরও এনেছেন। শিল্পীদের এনে তিনি প্রচুর অর্থ আয় করতেন। তাকে দেখে আমি উৎসাহিত হই এবং চিন্তা করি তিনি পারলে আমি কেন পারব না। এরপর থেকে আমিই বাংলাদেশের শিল্পীদের এখানে নিয়ে আসি। হানিফ সংকেত ও শুভ্র দেব এ ক্ষেত্রে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আইয়ুব বাচ্চুর সহযোগিতাও পেয়েছি।
বাংলাদেশি ছাড়া অন্য কোনো দেশের শিল্পীকে এখানে নিয়ে এসেছেন কি না জানতে চাইলে তরুণ এই অর্গানাইজার বলেন, ভারতের বেশ কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে ২০০৩ সালে কারিশমা কাপুর, ২০০৫ সালে রানী মুখার্জি, ২০০৬ সালে শিল্পা শেঠি, ২০০৭ সালে তানশ্রী, কিম শর্মাকে নিয়ে আসি। তাদের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০০০ সালে এনেছিলাম বাপ্পি লাহিড়ী, মিঠুন চক্রবর্তী ও হৈমন্তী শুক্লাকে। তিনি বলেন, ভারতের শিল্পীদের মধ্যে যখন যার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল, তখনই তাদের এনেছি। তবে শিল্পা শেঠির বিষয়টি ছিল আলাদা। তিনি তখনো অত জনপ্রিয় নন। আমার অনুষ্ঠানে আসার পর তিনি বিগ বস অনুষ্ঠানে যান এবং সেখানে প্রচ- রকম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
এত দিন ধরে ধৈর্য ধরে যে এর পেছনে লেগে আছেন, তাতে কোন বিষয়টি কাজ করেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমার নেশা। এরপর পেশা হয়ে গেছে। নেশা-পেশা দুটির কারণেই এখনো এটা করছি। তবে আগামী দিনে নতুন কিছু করার কথাও ভাবছি।
কী করবেন ঠিক করেছেন? তিনি বলেন, ঠিক করেছি। এখন সিনেমা প্রযোজনা করব। এ জন্য পরিকল্পনা করছি। বাংলাদেশ ও এ দেশে ছবির শুটিং হবে। এছাড়া নাটক তৈরি করব। নাটকের কাজও শিগগিরই শুরু করব। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থাৎ শো টাইম মিউজিকের ব্যানারেই এগুলো করা হবে।
এত দিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে আছেন, কখনো নিজের পারফর্ম করতে ইচ্ছে হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজের আগে কখনো তেমন ইচ্ছে হয়নি। এখন ইচ্ছে হচ্ছে। এ জন্য নাটকে অভিনয় করব। সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছে নেই। গানও আমার দ্বারা হবে না। তিনি বলেন, অভিনয়ের জন্য অফারও পেয়েছি। কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি।
দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দর্শকেরাই অনুষ্ঠানের প্রাণ। তাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা বাংলাদেশকে ভালোবাসুন। শিল্প-সংস্কৃতিকে ভালোবাসুন। এ দেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে লালন করুন। একে পৃষ্ঠপোষকতা করুন। আমরা যারা অনুষ্ঠান করছি তাদের পাশে থাকুন। একটি কিংবা দুটি টিকিট কিনেই আপনি সেই ভূমিকা রাখতে পারেন। সেই সঙ্গে নিজের ছেলেমেয়েদেরও বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করুন।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় শিল্পীদের আনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলম বলেন, এটা সহজ নয়। এখন আরো কঠিন। একজন শিল্পীকে এই দেশে শো করার জন্য আসতে হলে তাকে অবশ্যই এই দেশে তিনি যা আয় করবেন, তা থেকে তাকে ট্যাক্স দিতে হবে। সেটা হতে পারে ১৫-২০ শতাংশ। যিনি কর দেবেন না, তিনি অনুষ্ঠান করতে পারবেন না। এছাড়া একজন শিল্পীকে এ দেশে আনতে হলে আগে কথাবার্তা ফাইনাল হওয়ার পর আমরা আমন্ত্রণ পাঠাই। ভিসার জন্য আমাদের কোম্পানি থেকে চিঠি লিখি। এরপর ফরম পূরণ করে ভিসা ফি প্রদান করা থেকে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। এরপর তাদের ইন্টারভিউতে ডাকা হয়। ইন্টারভিউতে যিনি ভালো করবেন, তাকে ভিসা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আগে একা একা ইন্টারভিউ হলেও এখন একটি টিমে যারা আসবেন তাদের গ্রুপভিত্তিক ইন্টারভিউ হয়। একে অপরকে চেনেন কি না এমন প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয়। এ কারণে যারা প্রকৃত শিল্পী ও যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে, তারাই কেবল আসতে পারেন। শিল্পী পরিচয় দিয়ে ভুয়া কারো আসার সুযোগ নেই।
কখনো এমন হয়েছে কি অনুষ্ঠানের নাম করে এখানে এসে আপনার টিমের সদস্যরা থেকে গেছেন? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ রকম হয়নি। কারণ আমি যে অনুষ্ঠান করি, সেখানে চুক্তিতে সাইন করতে হয়। চুক্তি করার পর তারা কটি প্রোগ্রাম করবেন এবং প্রোগ্রাম করে কবে চলে যাবেন, সেটাও বলা থাকে। তাই এয়ারপোর্টে তাদের আসা ও অনুষ্ঠান করা এবং এখান থেকে ফিরে যাওয়া সবই ঠিক করা থাকে। আমার চিঠি নিয়ে কেউ এখানে আসার পর যদি দেশে ফিরে না যায়, তাহলে আমাকে খেসারত দিতে হবে, সেই দায়িত্ব তো আমি নেব না। একবার থেকে গেলে পরে আর আমার কোম্পানি থেকে কেউ ভিসা পাবে না। তাই এমন যাতে না হয়, সে জন্য আমি সতর্ক থাকি।
আপনি এখানে আনার পর কোনো শিল্পী কারো প্রেমে পড়ে বিয়ে করেছেন এমন ঘটনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম আছেন কয়েকজন। তারা অনুষ্ঠানে আসার পর পরিচয় হয়েছে। পরে দেশে ফিরে গেছেন। এখানে একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কয়েক বছর পর বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রুমানা, জনা ও আরও কয়েকজন।
আপনি কি কোনো শিল্পীর প্রেমে পড়েছেন? তিনি বলেন, আমি খুব সতর্ক থেকেছি। নিজের অজান্তে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হতেই পারে। তবে আমি কোনো দিন কোনো তারকাকে বিয়ে করব, এমনটা ভাবিনি। আমি নাম বলতে চাই না। একজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছিল। কিন্তু সেসব কথা বলতে চাই না। তিনি অন্য কাউকে বিয়ে করে এখন সুখে আছেন।
আপনাকে নিয়ে বাজারে কিছু রিউমার আছে, সেটাকে কীভাবে দেখেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল সব সময় অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করেছে। সত্যি না জেনে অনেক কথা বানিয়ে বানিয়ে প্রকাশ করেছে। আমার চরিত্র হনন করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু আমি ওই সব কথা আমলে নিইনি। এটা আসলে শত্রুতাবশত করেছিল। কিন্তু পরে ওই শত্রুতরাও আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছে যে তারা কাজটি ঠিক করেনি। যারা অপপ্রচার করেছে, এখন তাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক।
তারকারা কেউ কি কোনো বিষয়ে অভিযোগ করেছেন? তিনি বলেন, আগে কেউ কেউ অভিযোগ করতেন। বলতেন আমরা শিল্পীদের এখানে এনে ভালো খাবারদাবার দিই না। অথচ দোষটা আমার নয়, তাদেরই। কারণ শিল্পীরা সকালের নাশতা সকালে খেতে পারেন না ঘুমের কারণে। আমার লোক দেখা গেল নাশতা নিয়ে গেল আটটার সময়ে। কিন্তু শিল্পী ঘুমাচ্ছেন। তখন তিনি নাশতা খেতে পারলেন না। আবার দুপুরেও যখন গেলেন দেখা গেল তখনো তিনি ঘুমাচ্ছেন। তখনো খেতে পারলেন না। তিনি ঘুমাচ্ছেন এটা কি আমাদের দোষ? আর একজনের জন্য কি বারবার খাবার নিয়ে যাওয়া সম্ভব? এ কারণে এখন আর খাবারের দায়িত্ব আমরা নিই না। টাকা দিয়ে দিই। বলে দিই তাদের পছন্দমতো খেয়ে নিতে।
অভিযোগ শোনা যায় অনেকেই নাকি প্রাপ্য পেমেন্ট পান না? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা কেউ কেউ বানিয়ে বলতে পারে। আমি যাদের যে পেমেন্ট দেব, তা চুক্তিতে লিখেছি। ওই সব তারকাকে আমি সেই পেমেন্টই দিয়েছি। কাউকে পেমেন্ট দিইনি এমন নজির নেই। যা যা কথা দিয়েছি তা দিয়েছি। এখানে শিল্পীদের অবস্থান ও জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে কারো পেমেন্ট কম-বেশি হয়। যেমন ধরুন রুনা লায়লা আপা আর সাবিনা ইয়াসমীন আপাকে যে পেমেন্ট দেব, অন্য একজন শিল্পীকে কি তা দেব? তিনি বলেন, কেউ যদি বলে থাকেন পেমেন্ট ঠিকমতো দিইনি বা ঠকিয়েছি, তা সঠিক নয়। চুক্তির চেয়ে কম কাউকে দিইনি।
রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনকে এক মঞ্চে অনুষ্ঠান করানোর বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের দুজনকে প্রথম ২০১৬ সালে এক মঞ্চে নিয়ে আসি। এরপর ২০১৭-তে আরেকবার। আবার ২০১৮-তেও তারা আসবেন। দুজনের অনুষ্ঠানের কোনটি বেশি সফল ছিল এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ২০১৬ সালেরটি বেশি সফল ছিল। কারণ ওই সময়ে হলটি হাউসফুল ছিল। ২০১৭ সালের অনুষ্ঠানের সময়ে আমি ফোবানা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বেশি সময় দিতে পারিনি। এ জন্য টিকিট বিক্রি হয়েছিল ৮০ ভাগ। আগামী ২২ জুলাই তারা আবার আসছেন। তাদের সঙ্গে কুমার শানু কিংবা এন্ড্রু কিশোর থাকতে পারেন।
বর্তমানে আলম ভীষণ ব্যস্ত। আগামী ১৭ এপ্রিল ঢালিউল মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত হবে নিউ আটলান্টিক সিটিতে শেরাটন কনভেনশন সেন্টারে। ২২ এপ্রিল হবে নিউইয়র্ক সিটি থেকে। সেটা হবে ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড। ১৭ এপ্রিলের অনুষ্ঠানে তাহসান, টুটুল, শুভ্র দেব, সেলিম চৌধুরী, সজল, সাজু খাদেম, শখ, পায়েল, ফকির আলমগীরসহ ১৫ জন থাকছেন। ২২ এপ্রিলের অনুষ্ঠানে তারা ছাড়াও তিশা, মাহী, নাদিয়া, নওশীন, দেবাশীস, কনকচাঁপা, রিজিয়া পারভিন, মডেল রাখি, পিয়া বিপাশা থাকবেন। এর বাইরে নায়িকা রোজিনা থাকবেন। তিনি এই প্রথম আসছেন পারফর্ম করার জন্য। রোজিনা লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢালিউল অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটি ৪০-৫০ হাজার দর্শকের সামনে করব ঢাকা কিংবা দুবাইতে। এটা চলতি বছর বা আগামী বছরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠান করার বিড়ম্বনার কথা বলতে গিয়ে আলম বলেন, মাঝে মাঝে এমন সমস্যা হয় যে মনে হয় আর না করি। কিছু কিছু শিল্পীর ব্যাপারে এমন সময় এমন জায়গা থেকে অনুরোধ আসে, না পারি রাখতে, না পারি ফেলতে, তখন বিব্রত হতে হয়। তিনি বলেন, আমার অনুষ্ঠানে সুযোগ পেয়েছেন। এরপর এখানে পরে আবারও অনুষ্ঠান করতে এসেছেন এবং দেশে গিয়েও জনপ্রিয় হয়েছেন এমন নজিরও আছে। তারা যদিও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে চান না। এ নিয়ে আমার অবশ্য কোনো দুঃখ নেই।
আগামী জুলাইতে বিয়ের পিঁড়িতে বসা প্রসঙ্গে আলম বলেন, ব্যস্ততার কারণে বিয়ে করা হয়নি। বিয়ে করছি বাংলাদেশি একজনকে। তিনি ল’র ছাত্রী। বাংলাদেশি বিয়ে করার বিশেষ কোনো কারণ নেই। তিনি এখানে এসেছিলেন বেড়াতে। আমার সঙ্গে শপিং সেন্টারে দেখা হয়েছিল। সেখানে পরিচয়, কথাবার্তা, কফি খাওয়া। এরপর ফেসবুকে একজন আরেকজনের বন্ধুত্ব। পরে ভালোবাসা। আগামী জুলাইতে বিয়ে হবে। এরপর আমরা নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠান করব। বাংলাদেশেও একটি অনুষ্ঠান করব। বিয়ের বিষয়টি ফেসবুকে দেওয়ার পর এত মানুষ আমাকে এত কমেন্ট করেছে যে যেটা অনেক তারকাও পাননি। নায়িকা, গায়িকা, মডেল, নৃত্যশিল্পী কেউ আপনাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, এমনও হয়েছে। তবে আমি সেটা চাইনি। কারণ সেটা করলে বদনাম হয়ে যেত। আমার ওই জগতে তেমনভাবে জড়ানো হয়নি। নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা ও অন্যান্য সেক্টরে কাজ করেন শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই আমার বন্ধু আছেন। শিল্প-সংস্কৃতির কাউকে বিয়ে করতে চাইছেন না ঘরোয়া মেয়ে চান বলেই নাকি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন নয় যে বউ হিসেবে ঘরোয়া মেয়ে চাই। আমি রাইট পারসনকে খুঁজে পেতে চেয়েছি। সেটাই পেয়েছি বলে মনে করছি। বিয়ের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, তখন অনুষ্ঠান কিছু কমিয়ে দেব। কারণ তখন পরিবারে সময় দিতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথাও চিন্তা করতে হবে।


আপনি কি চান আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিল্পী হোক? এ বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। কিন্তু হতে চাইলেও আপত্তি নেই।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কী কী পুরস্কার পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজে পুরস্কার দিয়েছি। কখনো পাব এটা চিন্তা করিনি। তাই আমি ভীষণ প্রচারবিমুখ থেকেছি। আমি ইন্টারভিউও দিতে চাই না ও দিই না। কেবল কাজই করতে চাই। আমাকে সিটি কাউন্সিল থেকেও পুরস্কার পাওয়ার জন্য বন্ধুরা নিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু যাইনি। আসলে পুরস্কার পাওয়ার জন্য কাজ করি না। দেওয়ার জন্য করি। তিনি আরো বলেন, আমি এ দেশে এত কাজ করলেও সরকারের কাছ থেকেও কোনো পৃষ্ঠপোষকতা চাইনি। একবার সেলিমা রহমান সংস্কৃতিমন্ত্রী থাকতে শিল্পীদের জন্য বিমানের টিকিটের ব্যাপারে সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর আর কখনো চেষ্টাই করিনি। আসলে আমাদের দেশে কেউ এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন না। ভারত সরকার অনেক করে। তারা তাদের এয়ার ইন্ডিয়ায় শিল্পীদের জন্য ফ্রি টিকিট দেয়। আমাদের বিমান দেয় না। এগুলো আসলে দেওয়া দরকার। সরকারের উদ্যোগে বিদেশে শিল্পীদের আনা উচিত। অনুষ্ঠান করানো উচিত। সংস্কৃতিতে ভিন্ন দেশের সঙ্গে পরিচিত করে তোলা দরকার। এ জন্য কনস্যুলেট অফিস কাজ করতে পারে।
সুখের স্মৃতি বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নায়ক রাজ রাজ্জাক ভাই আমার অনুষ্ঠানে এসেছেন। লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। বলেছিলেন, ২০০৪ সালে এ দেশে এত বড় শো হতে পারে এটা চিন্তা করিনি। তিনি আমার সাফল্য কামনা করেছিলেন। ধারাবাহিকভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
শাবানাকে কখনো আনতে না পারার বিষয়ে বলেন, তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। গত সপ্তাহেও তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। বলেছি, আপা আপনি আমার অনুষ্ঠানে একবার আসেন। তিনি বলেন, আলম কিছু মনে করবেন না, আমি আসলে কোনো অনুষ্ঠানে আর পারফর্ম করি না। তিনিও আমার সাফল্য কামনা করেছেন।
আলমগীর খান আলম নিজের শেষ জীবনটা বাংলাদেশেই কাটাতে চান। এ জন্য এখন থেকে দুই দেশেই কাজ করবেন বলে চিন্তা করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে রাজনীতি করার চিন্তাও আছে। তার নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৬। কোন দল থেকে রাজনীতি করবেন কিংবা নির্বাচন করবেন, তা এখনো ঠিক করেননি। তবে যে দল তাকে সাদরে নেবে, সে দলেই যাবেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনীতি করা সম্ভব হবে না। এ জন্য ১০-১৫ বছর সময় লাগবে। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে রকম অভিজ্ঞতা নেই। কেবল ইয়র্ক কলেজে স্টুডেন্ট গভর্নমেন্টের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলাম ১৯৯৭ সালে। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই। তিনি বলেন, দেশে তো অনেকেই অনেক কিছু করেছেন। আমি রাজনীতি করে প্রকৃতপক্ষে কিছু করতে চাই। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারের জন্য আরও কাজ করতে চাই।
কমিউনিটির জন্য কিছু করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একবার সিডরের সময়ে ১০ লাখ টাকা ও ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সোসাইটির ভবন করার জন্য ১০ হাজার ডলার দিয়েছি। এছাড়া সব সময় ছোটখাটো অনুদান দিচ্ছি। আগামী দিনে সেটা হয়তো বাড়বে।
আলম জানান, তার ছোটবেলা কেটেছে ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে। সেখানেই তাদের বাড়ি। পড়াশোনা করেছেন রায়েরবাজার হাইস্কুল আর সিটি কলেজে। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে সোজা নিউইয়র্কে চলে আসেন। এরপর থেকে এখানেই আছেন। গ্রিন কার্ড নিয়েছেন। দেশে নির্বাচন করবেন বলে সিটিজেনশিপ নিতে চান না। বলেন, গ্রিন কার্ডই রাখতে চাই। তার বাবা সাধারণ বীমা করপোরেশনে চাকরি করতেন। মা গৃহিণী। তবে বাবা-মা তার এই পেশা পছন্দ করেন না। তারা ইচ্ছা ছিল, ছেলে অনেক বড় চাকরি করবে। এই পেশায় বদনাম হবে এটা তারা পছন্দ করেন না। তাই তিনি চিন্তা করছেন, আগামী দিনে শো অর্গানাইজ করার পাশাপাশি অন্য কিছু করারও। সেটা হতে পারে রেস্টুরেন্ট বা রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা।