নিজস্ব প্রতিনিধি : রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ-প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ, অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা।
সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে রেমিট্যান্স আয় আনার ক্ষেত্রে ফরম-সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। সম্প্রতি রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। রেমিট্যান্স পাঠাতে চার্জ মওকুফ ও ছুটির দিনে অর্থ পাঠানোর সুবিধা এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সের ২৩০ জন বেনিফিশিয়ারির হিসাবে সাময়িকভাবে উত্তোলন স্থগিত করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বলা হয়, ভবিষ্যতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে- এমন প্রতিশ্রুতি দিলে হিসাবগুলো খুলে দেওয়া হবে। হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রতিরোধে এমন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে বিএফআইইউ।
রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়াতে নানা সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানা উদ্যোগের ফলও মিলছে। এক যুগে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ২ মার্চ প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের পুরো সময়ের তুলনায় তিন বিলিয়ন ডলার বেশি। অর্থাৎ গত এক যুগের রেমিট্যান্স-প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্তমানে রেমিট্যান্স দ্বিগুণে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে প্রায় প্রতিবছরই রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এসেছে ১৪ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্সে এমন সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি সহায়তাসহ রেমিট্যান্স বাড়াতে নিরলস কাজ করছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো ও প্রবাসীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বোপরি সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্সে এমন সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা।