এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন : ডালাস বাংলা উৎসব ও বইমেলা-২০২২

ডালাস বাংলা উৎসব ও বইমেলা-২০২২

কাজী হাসান : বছর চারেক আগের কথা। উইক এন্ডের ডিনার পার্টিতে পরিচয় হলো কেন কাদের (Ken Kader) ভাইয়ের সাথে। তিনি তখননতুন নিউইয়র্ক থেকে ডালাসে মুভ হয়ে এসেছেন। অল্প সময়ে বেশ অনেক কথা হয়ে গেল। জানতে পারলাম তিনি নিউইয়র্কে বাঙালি সাংস্কৃতিক কর্ম কাণ্ডের সাথে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সেই সময়টাতে তার ক্যানসার রোগের চিকিৎসা চলছিল। তখনই বুঝে নিয়েছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে এলে ডালাসেও বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে একই ধরনের কাজ আরম্ভ করবেন। আগুনকে তো আর ছাই চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তা ছাড়া ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তিনি ডালাসকে বাঙালিদের বিশাল বড় অনুষ্ঠান ঠিকই উপহার দিবেন। এইটা শুধু এখন সময়ের ব্যাপার।
মাস ছয়েক আগের কথা। কেন কাদের ভাই আমার সাথে যোগাযোগ করে বললেন, তিনি ডালাসে শুধু বাংলা বই নিয়ে একটা মেলা করতে চান। এর আগে এখানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু লেখকের বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে; কিন্তু বই মেলা হয়নি। তিনি আমার থেকে ডালাস অঞ্চলের যারা লেখালেখি করেন, তাদের সবার নাম জানতে চাইলেন। আমি যাদের চিনতাম তাদের সবার বৃত্তান্ত দিলাম। তিনি জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহর থেকেও কিছু উৎসাহী লেখক-কবিদেরও আমন্ত্রণ করবেন। আমরা যারা ডালাসের দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা হয়েও পরিকল্পনা পর্যন্ত করতে পারিনি, তিনি নিউইয়র্ক থেকে মাত্র কয়েক বছর আগে এসে তার স্বপ্ন দেখে ফেললেন। মনে মনে তাকে সাধুবাদ জানালাম।


বলতে গেলে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় সেপ্টেম্বর ২৪ (২০২২) আয়োজন করলেন ‘ডালাস বাংলা উৎসব।’ কেন কাদেরের সহধর্মিণী সাবেরা কাদের ছিলেন অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান সংগঠক। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডালাস বাংলা উৎসব ২০২২’-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ডালাসের লেখক কাজী হাসান ছিলেন প্রথম বক্তা। তিনি আশা করেন ঢাকার বই মেলার মতো ডালাসের বই মেলাও এক দিন অনেক বড় আকারের হবে এবং ফলে প্রবাসে বাংলা শিল্প ও সাহিত্য চর্চা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। এর পরে মঞ্চে আসেন মূল বক্তা ডা. হুমায়ুন কবির। তিনি টেনেসি অঙ্গ রাজ্য থেকে তার বইয়ের সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন। পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হলেও তিনি বহুদিন ধরে সাহিত্য চর্চা ও প্রকাশনা সাথে জড়িত। তিনি বহুদিন ধরে ‘ঘুংঘুর’ নামের একটা সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। ডা. হুমায়ুন ডালাস বাংলা উৎসব ও বই মেলার সাফল্য কামনা করেন। এর পরে আমন্ত্রিত লেখক ফরহাদ হোসেন, আলি তারেক, সালাহউদ্দিন চৌধুরী, আদিবা ঊর্মি, তারেক ইয়াসিন উজ্জ্বল বক্তব্য রাখেন। সবাই কেন কাদেরকে বিশাল আয়োজন করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং আশা প্রকাশ করেন উনার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
ডালাসে বাংলা বইয়ের যে এত পাঠক আছে সেটি আমার জানা ছিল না। যতটুকু আশা করা হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি বই বিক্রি হয়েছে। আমার নিজের লেখা বইগুলো সোল্ড আউট হতে বেশি সময় লাগেনি। তারপরেও অনেকে আমার বই খোঁজ করেছেন। বইমেলা অনুষ্ঠানের মুখ্য বিষয় হলেও মেলার আমেজ ধরে রাখতে সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশনা হয়েছিল। ৩০ জনের বেশি শিল্পী এক এক করে মঞ্চে এসে পারফর্ম করেছেন। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা জনপ্রিয় গান করে আসর একেবারে মাতিয়ে দিয়েছিল। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি নিউইয়র্কের বাচিক শিল্পী লুবনা কাইজার কবিতা আবৃত্তি, হিউস্টনের নাট্যজন আলি তারেক ও নাহিদ শ্রতি নাটক পরিবেশন করেন। বেলা ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠান চলে। সাবিরা কেয়া পুরো অনুষ্ঠানটা উপস্থাপনা করে। বিশাল বড় শাড়ির পসরা নিয়ে স্টল বসেছিল। টঙ্গের দোকান থেকে চা, ঝাল-মুড়ি, পিঠাসহ হরেক রকম দেশি খাবার কেনার জন্য উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো ছিল।
কেন কাদের ভাই শুধু একজন স্বপ্ন-দ্রষ্টা বললে কম হবে; তিনি জানেন স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তব করতে হয়। এ জন্য কেন কাদের ও সাবেরা কাদের দম্পতি দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। অবশ্য সাথী করে নিয়েছেন ডালাসের এক ঝাঁক উচ্ছল সাংস্কৃতিক কর্মী বাহিনীকে। তারা সবাই মিলে এই বিশাল অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করে ডালাস তথা উত্তর এমেরিকায় বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি উপস্থাপনে এক নতুন মাইল ফলক স্থাপন করেছে। এই জন্য তাদের প্রত্যেকের জন্য রইলো সু-বিশেষ ও সু-বিশাল অভিনন্দন।