এখন বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে গাইতে হবে আওয়ামী লীগ এল দেশে : ফখরুল

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জ্বালানি খাতকে সরকার দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ অন্যান্য খাতে দুর্নীতি করে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তারা। তার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের জনগণকে। এককথায় বলা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের জনগণ জ্বলছে।’

২২ আগস্ট সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির আয়োজনে ‘দুর্নীতি, জ্বালানি সংকটের উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিজ দেশের গ্যাস, কয়লা এবং সমুদ্রে অনুসন্ধানের কাজ করেনি। বরং সরকার নিজেদের সমর্থক কিছু ব্যবসায়ীকে লাভবান করার জন্য বিদেশ থেকে তরল গ্যাস আমদানির সুযোগ দিয়েছে। আজকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে সরকার বেকায়দায় পড়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একসময় বাংলা সিনেমার নাম শুনেছি ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’। এখন বলতে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জ্বলছি, সেই জ্বালা দিনকে দিন বাড়ছে, অসহনীয় হয়ে পড়ছে। করোনার মধ্যে আপনারা দেখেছেন মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কীভাবে দুর্নীতি করেছে। উত্তরায় গার্ডার পড়ে পাঁচজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে প্রতি এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য খরচ হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা। আমি জানি না এ ধরনের খরচ কোনো দেশে হয় কি না। হাতিরঝিল থানায় পুলিশের অত্যাচারে মামুনের মৃত্যু হয়েছে। জনগণ থানা ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। চা-শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তাদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে।’

তিনি বলেন, ‘গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী একটি কর্মসূচি পালন করেছেন। সেখানে হাই সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কেন তাকে টেন্টে থাকতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ আবার ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। তাহলে আপনারা এই ১৫ বছরে কী এমন দেশ পরিচালনা করলেন যে এই ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের মায়েরা গান শোনাত খোকা ঘুমাল, পাড়া জুড়াল, বর্গি এল দেশে। আজকে এ সরকার বর্গিদের ভূমিকা পালন করছে। এখন আমাদের বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে হবে আওয়ামী লীগ এল দেশে এই কথা বলে। এই সরকার দেশকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কোথাও কথা বলতে পারবেন না, লিখতে পারবেন না, কোথাও যেতে পারবেন না।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তিনি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে বলেন, ‘এক ধাপে জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের অন্য বিকল্প পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। গভীর রাতে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে সংকটে ফেলেছে। সরকার জনকল্যাণের চেয়ে দলীয় ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় সব খরচ চাপিয়ে দিয়ে জনগণকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা সরকারের অধীনে অর্থনীতিকে চাঙা করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি নেই।’

মূল প্রবন্ধের ওপর বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের যেকোনো দেশের সরকার ধনীদের থেকে গরিবদের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকে। গরিবরা যেন সমাজে একটা সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারে, তারা সেটা নিশ্চিত করে এবং এই দায়িত্বটা পালন করাই হলো সরকারের কাজ। বাংলাদেশে এটার উল্টোটা করা হয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নীতিমালা তৈরি করেছে। যেখানে জ্বালানি ও বিদ্যুৎকে রাজনৈতিক পণ্য বানিয়েছে। তারা জ্বালানি তেলের মূল্য বাজারভিত্তিক নির্ধারণ না করে পলিটিক্যালি নির্ধারণ করেছে। এটা এখন পলিটিক্যাল কম্যুডিটি হয়ে গেছে।’

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা কামাল মজুমদার, জাকির হোসাইন খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন।

ঠিকানা/এনআই