ঠিকানা রিপোর্ট : প্রবাসীদের অনেকেই দেশে বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু প্রবাসে থাকার কারণে তাদের এনআইডি কার্ড নেই। এ কারণে অনেক প্রবাসী ইচ্ছে থাকলেও দেশে বন্ড কিনতে পারতেন না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন থেকে ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগে প্রয়োজন হবে না জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। ২৪ অক্টোবর সোমবার এক সার্কুলার জারি করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এমন সুসংবাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসেন, তখন তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, যাদের এনআইডি নেই, তাদের পাসপোর্ট থাকলে সেই পাসপোর্ট নম্বর তারা এনআইডির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলার খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ঘোষণা দেওয়ায় এখন অনেক প্রবাসীর দেশে বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ তৈরি হবে।
জানা গেছে, এ-সংক্রান্ত সার্কুলারটি সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশনা সাধারণ তফসিলি ব্যাংকগুলোর জন্য করা হয়েছে। তবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য নয় বলে সেখানে বলা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এখন থেকে ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকলে পাসপোর্টের নম্বরকে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আর পাসপোর্ট নম্বর ইউনিক আইডি হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রে এনআইডি বাধ্যতামূলক নয়।
সোনালী এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার বন্ড- এই তিন ধরনের সঞ্চয় বন্ড রয়েছে। প্রবাসে বসেই প্রবাসীরা সোনালী এক্সচেঞ্জ ও তফসিলি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে এই বন্ড কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে লভাংশও ভালো দেওয়া হয়। দেশে গত বছরের নভেম্বরে এই তিনটি বন্ডের লেনদেন অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে ওই সময় এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হয়। এর পর থেকে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না, তারা প্রবাস থেকে ইচ্ছে থাকলেও বন্ড কিনতে পারছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে পাসপোর্টকে প্রবাসীদের জন্য এনআইডির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার ঘোষণা দেওয়ায় প্রবাসীদের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ উন্নতি হলো। প্রবাসীরা আশা করছেন, যাদের এনআইডি নেই, দেশে তাদের যেসব সেবা নিতে এনআইডির প্রয়োজন হয়, সেখানেও বিকল্প আইডি হিসেবে পাসপোর্ট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। এতে করে তাদের ভোগান্তি কমবে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বন্ডের মধ্যে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে প্রবাসীরা নিজ নামে কেনার পাশাপাশি দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের নামেও বিনিয়োগ করতে পারবেন। অন্য দুটি বন্ড প্রবাসীরা নিজ নামে বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের শাখা, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিস, বিদেশে বাংলাদেশি ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংক শাখা থেকে বন্ড বিক্রি করা হয়।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মুনাফার হার কমানো হয়। এ জন্য সরকার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। দুটি বন্ডেই চার স্তরের মুনাফা কমিয়ে স্তর করা হয় তিনটি। আগে বন্ড দুটিতে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার সমমূল্যের ডলার বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। এখন এর উপরেও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে আগের মতোই ৫ বছর শেষে মুনাফার হার ১২ শতাংশ রাখা হয়।
ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে প্রথম বছর শেষে মুনাফা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। দ্বিতীয় বছর শেষে ৫ শতাংশ এবং তৃতীয় বছর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১ লাখ ১ থেকে ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করে প্রথম বছর শেষে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৪ শতাংশ ও তৃতীয় বছর শেষে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। আর ৫ লাখ ১ ডলার থেকে তার বেশি অর্থ বিনিয়োগের বিপরীতে প্রথম বছর শেষে ২ দশমিক ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৩ শতাংশ এবং ৩ বছর শেষে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
এদিকে ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে প্রথম বছর শেষে ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ আর তৃতীয় বছর শেষে ৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১ লাখ ১ থেকে ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে প্রথম বছর শেষে ৩ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও মেয়াদান্তে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। ৫ লাখ ১ থেকে তার বেশি ডলারের বিনিয়োগের বিপরীতে প্রথম বছর শেষে ২ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৩ বছর শেষে ৩ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।