ঢাকা : এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠক হতে পারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ওই সময় চোগামে (কমনওয়েলথ হেড অব গভর্নমেন্ট মিটিং) যোগ দিতে ব্রিটেনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছেন শেখ হাসিনাও। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ওই সম্মেলনের ফাঁকে তাদের মধ্যে একটি বৈঠকের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে দুইপক্ষ।
ঠিক এক বছর হতে চলল মোদি-হাসিনার শীর্ষ বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে কোনো তৃতীয় দেশেও মুখোমুখি হননি তারা। দু’টি দেশেই নির্বাচন কড়া নাড়ছে। লন্ডনের বৈঠকটি সম্ভব হলে, কূটনৈতিক শিবিরের হিসাব মতো বর্তমান সরকারের আমলে এটাই দুই দেশের শেষ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হবে। ফলে এই বৈঠকের গুরুত্ব গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই যথেষ্ট। সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বিমস্টেকের নিরাপত্তাবিষয়ক বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা গিয়েছিলেন। এরপর যাবেন বিদেশসচিব বিজয় গোখলে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বাংলাদেশ সরকারের আরো বেশি আস্থা অর্জন করাটাকে এখন অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সাংস্কৃতিক দৌত্যের মাধ্যমে ‘ট্র্যাক টু’ কূটনীতির দিকেও জোর দেয়া হচ্ছে। ১০ এপ্রিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে ঢাকা যাচ্ছেন রবীন্দ্রভারতীর ভিসি সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী এবং বিশ্বভারতীর ভিসি সবুজকলি সেন।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, লন্ডনে বৈঠক হলে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে ওই বৈঠকে তিস্তা নিয়ে কোনো পাকা কথা দেয়া সম্ভব হবে না মোদির পক্ষে। সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিস্তা ছাড়াও আরো অনেকগুলো দিক রয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত পাশে রয়েছে। যে কাজগুলো ইতোমধ্যেই চলছে তার পাশাপাশি, নতুন কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কথা বলবেন মোদি-হাসিনা। কথা হবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়েও। কট্টর মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের মোকাবেলা করতে পারস্পরিক সহযোগিতা আগামী দিনগুলোতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করে বিদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে নির্বাচনের মুখে হিংসার ঘটনা বাড়লে তার প্রভাব সীমান্তে পড়তে পারে এই উদ্বেগ রয়েছে নয়াদিল্লির। নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো আঁটোসাঁটো করা নিয়ে কথা চলছে দুই দেশের।
তবে তিস্তা নিয়ে আশু নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত যে ঐকান্তিক, এবার সে কথা স্পষ্টভাবেই জানানো হবে ঢাকাকে। রাখাইন প্রদেশকে আর্থসামাজিকভাবে ঢেলে সাজার জন্য কী পদক্ষেপ করলে সুবিধা হয়, সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে ভারত। গত বছরের শেষে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলা রাখাইনের উন্নয়নের জন্য একটি চুক্তিপত্রে সই করেছে ভারত। সেখানে প্রস্তাবিত আবাসন তৈরির প্রকল্পগুলো শুরু করে দিতে সক্রিয় হচ্ছে মোদি সরকার। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট রসদ রাখাইন প্রদেশে রয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।