ঠিকানা রিপোর্ট: অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিদায় নিলেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার টম বোসার্ট। ১০ এপ্রিল হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বোসার্টের বিদায় বার্তা ঘোষণা করা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডারস এক বার্তায় বলেন, আমাদের মহান দেশের নিরাপত্তা রক্ষা ও প্রহরায় বিশেষ ভূমিকার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যাডভাইজার টমের প্রতি কৃতজ্ঞ। সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষায় ও আমাদের সাইবার প্রতিরক্ষাকে জোরদার করতে টম হোয়াইট হাউজের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং নজিরবিহীন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভাবনীয় সাড়া দিয়েছেন। তার দেশপ্রেমিক কর্মকা-ের জন্য প্রেসিডেন্ট টমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তার শুভ কামনা করেছেন।
টমের বিদায়ের মাত্র কয়েকদিন আগেই কক্ষচ্যুত হয়েছিলেন ভেটারন অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি ড্যাভিড শালকিন। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অ্যাডমিরাল রনি জ্যাকসন। এর আগে বৃন্তচ্যুত হয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেঙ টিলারসন। তারও আগে বরখাস্ত করা হয়েছিল ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এফবিআই সাবেক প্রধান জেমস কোমীকে।
আর ট্রাম্পের বিতর্কিত অভিবাসন নীতিমালা কার্যকর না করতে বিচার বিভাগের আইনজীবীদের পরামর্শ দেয়ায় চাকরিচ্যুত হলে ভারপ্রাপ্ত এটর্নি জেনারেল সেলি ইয়েটস। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনকেও বরখাস্ত হতে হয়েছিল নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে। প্রিট বারারাকেও ট্রাম্প বরখাস্ত করলেন হুকুম না মানার অভিযোগে। সরকারের এথিকস কমিটির প্রধান ন্যায়নিষ্ঠ ওয়াল্টার সৌবকেও ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল অপ্রত্যাশিতভাবে। হোয়াইট হাউজ কমিউনিকেশন ডাইরেক্টর মাইকেল ডুবকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল সঠিক সমন্বয় সাধনের অভিযোগে। হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ রিনস প্রেইবাসকে বিদায় নিতে হয়েছিল অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে।
হোয়াইট হাউজ প্রেস সেক্রেটারির পদ থেকে শন স্পাইসার বিদায় নিলেন অভ্যন্তরিণ বিরোধের জের ধরে। একই কারণে হোয়াইট হাউজ কমিউনিকেশনস পরিচালক অ্যান্তনি স্কারামুচিও বিদায় নিলেন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে। ট্রাম্পের অত্যন্ত আস্থাভাজন চিফ স্ট্যাস্ট্রেটেজিস্ট স্টিভ ভেননকেও শেষ পর্যন্ত বরখাস্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আর বিদায় নিতে হয়েছিল সেভাস্তিয়ান গোরখা, ট্রাম্পের অন্যতম খয়ের খাঁ টম প্রাইস, আফ্রিকান-আমেরিকান বিষয়ক সিনিয়র সহকারী ওমারোসা মেনিগোল্ট, এফবিআই ডেপুটি ডাইরেক্টর অ্যান্ড্রু ম্যাককেইব, রব পর্টার, ড্যাভিড সোরেনসন, হোপ হিকস, গেরি কন প্রমুখকে।
সীমান্তে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন: অরক্ষিত আমেরিকা-মেক্সিকান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ৯ এপ্রিল আরিজোনা থেকে ন্যাশনাল গার্ডের ( জাতীয় প্রহরীর) ২২৫ জন সদস্য সাউথ মেক্সিকান সীমান্তের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। টেক্সাস থেকে ন্যাশনাল গার্ডের আরও ২৫০ জন সদস্য ১০ এপ্রিল তাদের সাথে যোগ দিবেন বলে জানা গেছে।
মূলত ভোট কেলেঙ্কারি থেকে নারী কেলেঙ্কারির নিত্য-নতুন শাখা বিস্তার সত্ত্বেও নিজ সিদ্ধান্তে অটল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই আমেরিকান-মেক্সিকান সীমান্তে প্রাচীরের নির্মাণকাজ সমাপ্তের জন্য অপেক্ষা না করেই অবৈধ অভিবাসীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ট্রাম্পের অনুরোধে টেক্সাস এবং আরিজোনা থেকে ৪ শতাধিক ন্যাশনাল গার্ডের একটি সম্মিলিত দল দক্ষিণ অভিমুখে যাত্রা করেছেন বলে জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, আরিজোনা থেকে ন্যাশনাল গার্ডের ১৫০ সদস্য এবং টেক্সাস থেকে ২৫০ জন সোমবার দক্ষিণ সীমান্তে পৌঁছে গেছেন। ৪ এপ্রিল ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবাহ ঠেকাতে কমপক্ষে ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য দক্ষিণের সীমান্তের দায়িত্ব নেবেন। নিউ মেক্সিকো এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকেও ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা শিগগিরই দক্ষিণ সীমান্তের গার্ড সদস্যদের সাথে যোগ দেবেন।
চীনের বিরুদ্ধে নতুন অবরোধ ও ১০০ বিলিয়ন ডলার শুল্কারোপ : আমেরিকান প্রযুক্তি চুরির অভিযোগে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানিকৃত ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর ২৫% শুল্কের প্রস্তাব করেছেন। ইউএস ট্রেড ট্রেড প্রতিনিধি দপ্তর চীনে উৎপাদিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট এবং টেলিকমিউনিকেশনস যন্ত্রপাতিসহ ১৩০০ পণ্যের একটি তালিকা সরবরাহ করেছে।
এদিকে, বাণিজ্যিক বিরোধের ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক বাবদ ১০০ বিলিয়ন ডলার আরোপ করতে চাচ্ছেন। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে ৬ এপ্রিল বলা হয় যে শুরুতে আমেরিকার পক্ষ থেকে চীনের উপর শুল্ক বাবত ৫০ বিলিয়ন ডলার আরোপ করার পর চীন সমস্যার প্রতিকারে ব্যর্থ হয়েছে।
আমেরিকানরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে : ৬ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেন যে চীন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে অসন্তুষ্টির কারণে আমেরিকার বাণিজ্যকে কষ্টকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তবে তার কঠোর নীতিমালার কারণে শেষ পর্যন্ত আমেরিকানরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। ট্রাম্প বলেন, চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর আমরা আরও ১০০ বিলিয়ন শুল্কারোপের চিন্তাÑভাবনা করছি।
ট্রাম্প ভীত নন : অবরোধ আরোপের মাধ্যমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কয়েক ডজন রাষ্ট্রদূত ও সরকারি কর্মকর্তাকে শায়েস্তা করেছে। প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের অভ্যন্তরীণ সার্কেলের এসব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ট্রাম্প দেখিয়েছেন তিনি মস্কোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে ভীত নন।
স্কট প্রুইটের প্রশংসা: সমস্যা কবলিত এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন অথরিটি (ইপিএ- পরিবেশ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ) প্রধান স্কট প্রুইটের কর্মকা-ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে এটর্নি জেনারেল জেফ সেসনসের স্থলে প্রুইটকে নিয়োজিত করার সিএনএন পরিবেশিত সংবাদকে নিছক মিথ্যাচার হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প তা নাকচ করেছেন বলে ৯ এপ্রিল জানা যায়।
ট্রাম্প বলেন, এটর্নি জেনারেল সেসনস এবং ইপিএ প্রধান প্রুইট উভয়েই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করছেন। তাই তাদের বরখাস্ত করার প্রশ্নই ওঠে না।
চীনের সাথে বন্ধত্ব অক্ষুণœ থাকার দাবি: বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের সাথে সম্পর্কের বড় ধরনের ফাটল ধরার উপক্রম হলেও যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্ব অক্ষুণœ রাখবে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, আমার বিশ্বাস চীন আমাদের সাথে বাণিজ্যিক সর্ম্পক অব্যাহত রাখবে। কারণ আমাদের দাবি সঠিক এবং চীনের তা করা উচিত। তবে যে কোনোভাবেই চীন আমাদের বন্ধু থাকবে।