টাঙ্গাইলের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু : এমপি রানাকে নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ফারুক

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়ার আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও নিহত ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ। মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানার উপস্থিতিতে বেলা ১১টায় এই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টার সাক্ষ্যে নাহার আহমেদ বলেন, প্রতিপক্ষের হাতে খুন হতে পারেন বলে ফারুক প্রায়ই আশঙ্কা প্রকাশ করতেন। হত্যাকা-ের এক মাস আগে নাহারের কাছে ফারুক বলেছিলেন এমপি রানা ও তার ভাইয়েরা তাকে হত্যা করতে পারে। সেই আশঙ্কা যে এত দ্রুত সত্য হয়ে যাবে তা ভাবতে পারেননি কেউই।
আদালতে বাদী আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওই পদে প্রার্থী ছিলেন ফারুক। রানার ভাই পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খানও প্রার্থী ছিলেন। এটাই ফারুক আহমেদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় কাশিমপুর কারাগার থেকে সংসদ সদস্য রানাসহ কারাগারে আটক আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী ও মো. সমিরকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজির হন জামিনে মুক্ত থাকা তিন আসামি মাসুদুর রহমান, ফরিদ আহম্মেদ ও নাসির উদ্দিন নুরুও। মামলার সাত আসামি এখনও পলাতক। সাক্ষ্য চলাকালে বাদী কাঠগড়ায় আসামিদের শনাক্ত করেন। পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল বাকি মিয়া বাদীকে ১৫ মিনিট জেরা করেন। আইনজীবী প্রশ্ন করেন হত্যাকা-ের আগে তিনি থানায় কোনো জিডি করেছিলেন কি না। আইনজীবী দাবি করেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় এমপিকে জড়ানো হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এজাহারে এমপি রানার নাম ছিল না। পরে আদালত আগামী ২০ মার্চ বাদীকে জেরা ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, সাক্ষীর জন্য মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী নাহার আহমেদ, ছেলে আহমেদ মজিদ সুমন ও মেয়ে ফারজানা আহমেদ মিথুনের হাজিরা দেন। এ দিকে সংসদ সদস্য রানার ফাঁসি চেয়ে আদালত চত্বরে মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। রানার সমর্থকরা এ সময় মুক্তির দাবিতে মিছিলের চেষ্টা করলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এমপি রানাকে আদালতে হাজির না করায় এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চারবার পিছিয়ে যায়।
সাক্ষ্যে বাদী আরও বলেন, প্রতিদিনের মতোই বাসায় ফেরার আগে ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে তার স্বামী তাকে মিসড কল দেন। পরে তিনি বাসার গেট খুলে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ১১টা ২৫ মিনিটে বাসা থেকে সামান্য দূরে স্থানীয় কাউন্সিলর ও তার এক বন্ধুর চিৎকার শুনে তিনি দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন তার স্বামী ফারুক আহমেদ আহতাবস্থায় পড়ে আছেন। পরে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা তার পিঠের ৬ ইঞ্চি নিচে একটি গুলির গর্ত পান। এ ঘটনায় নাহার আহমেদ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ তদন্ত করে কয়েকজনকে আটক করে। এই খুন রানা এমপি ও তার ভাইয়েরা করিয়েছে বলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।
২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক গোলাম মাহফিজুর রহমান। একই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে এমপি রানাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। ৯ বার তারিখ পেছানোর পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্য ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার শুরু হয়।