এরশাদের দাবি ২০০ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিনিধি : সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টন ছাড়াও একটি একান্ত গোপনীয় বিষয় নিয়েও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন। নির্বাচনে তিনি ৭০টি আসন আর ২০০ কোটি টাকা দাবি করেছেন। অপর আসনগুলোতে জাতীয় পার্টি ও তার সহযোগীরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে দলীয়ভাবে নির্বাচন করবে। অবশ্য বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না এলে দলগতভাবেই নির্বাচন করবেন এরশাদ।
আর্থিক বিষয়ে এরশাদ এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে নিয়ে অনেক কথা চালু রয়েছে। আর্থিক বিষয়ে এরশাদের চেয়ে রওশন এরশাদ অনেক বেশি প্রত্যাশী ও অনুদার বলে জাতীয় পার্টির প্রায় সব পর্যায়ের নেতাদেরই অভিমত। এরশাদ অপেক্ষাকৃত উদার মনোভাবের হলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতায় আছেন। মাঝেমধ্যে তা প্রকট আকারে দেখা দেয়। নির্বাচন অর্থপ্রাপ্তির বড় মাধ্যম এরশাদের কাছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশাল অর্থবিত্তের মালিক নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী সালমা ইসলামকে মন্ত্রী করা হয়েছিল এরশাদের প্রস্তাব অনুযায়ী। বিনিময়ে এরশাদের দুই কোটি টাকা প্রাপ্তি ঘটেছিল বলে জাতীয় পার্টি মহলে ব্যাপক আলোচিত ছিল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী না দেওয়া এবং দলের নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরই এরশাদ এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। দাবি অনুযায়ী এরশাদের কাছে এক কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। এ নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতার দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আগামী সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন, মনোনয়ন বাণিজ্যের পাশাপাশি জনপ্রিয়, আর্থিকভাবে বিত্তবানদের বেছে নিচ্ছেন এরশাদ। ৭০টি আসনে মনোনয়ন চেয়েছেন তিনি। বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ২০ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে এরশাদও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটগত নির্বাচন করবেন। এ ব্যাপারে এরশাদ প্রকাশ্য ঘোষণাও দিয়েছেন। ৭০টি আসন চাইলেও এরশাদ এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে নেই বলেই জানা যায়। বৃহত্তর রংপুরের আসনগুলোর ব্যাপারে তিনি যতটা অনমনীয়, দেশের অন্যান্য এলাকা নিয়ে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণভাবে তিনি ততটা দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এরশাদকে ৫২-৫৫টি আসনে ছাড় দেওয়া হবে বলে জাতীয় পার্টির নেতারা আশাবাদী।
বিএনপি নির্বাচনে এলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সে ক্ষেত্রে অর্থের খেলাও রয়েছে। এই নির্বাচনে অর্থ বিরাট ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কালো টাকার খেলা বন্ধে নির্বাচন কমিশন থেকেও কার্যকর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। এরশাদ তার আর্থিক সংকটের কথা ওবায়দুল কাদের ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদকে জানিয়ে বিষয়টি শীর্ষ পর্যায়ে অবগত করে সম্মানজনক বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছেন বলে জানানো হয়। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া আসনগুলো এবং অপর সম্ভাবনাময় আসনগুলোতে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারেও বাণিজ্য করা হবে বলে জানা যায়। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, কালো টাকার মালিককে বাণিজ্যিক স্বার্থে বেছে নেওয়া হতে পারে। কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তাও এগিয়ে আছে। কিছু আগামও দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
সরকারের কাছ থেকে আর্থিক চাহিদার বড় অংশ পাওয়ার প্রক্রিয়া করছেন এরশাদ। রংপুরের অধিবাসী এরশাদের অত্যন্ত বিশ্বস্ত জাতীয় পার্টির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, এ নির্বাচনে এরশাদ সাহেব সরকারের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা চাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ আভাস আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে মহাসমাবেশ, মহানগরগুলোতে নির্বাচন-পূর্ববর্তী সমাবেশ, নির্বাচনকালীন ব্যাপকভিত্তিক সভা-সমাবেশ অন্যতম ব্যয় হিসেবে ধরা হয়েছে। কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা আদায় করার সব রকম ফন্দি-ফিকিরই করা হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এরশাদের প্রয়োজন বিবেচনায় সরকারপক্ষও তার সঙ্গে একটা আপসরফায় আসবে বলেই জানা যায়।