এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করল বাংলাদেশ

ঠিকানা রিপোর্ট: প্রথমবারের মতো এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করল বাংলাদেশ। গত ১৬ মার্চ জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিপিডি) এই ঘোষণা সংক্রান্ত চিঠি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করেন।

এ উপলক্ষে ১৬ মার্চ বিকেলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসুদের কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করেন সিপিডি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস। উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ সিপিডি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন সংক্রান্ত ঘোষণা প্রদান করে। সে অনুযায়ী এই চিঠি হস্তান্তর করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি এক্সপার্ট গ্রুপের চেয়ার প্রফেসর হোসে অ্যান্তোনিও ওকাম্পো, জাতিসংঘের এলডিসি, এলএলডিসি (ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ) ও সিডস্ (উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ-রাষ্ট্রসমূহ) সংক্রান্ত কার্যালয়ের উচ্চতম প্রতিনিধি আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতামইলোয়া কাতোয়া উটইকামানু, জাতিসংঘে নিযুক্ত বেলজিয়ামের স্থায়ী প্রতিনিধি মার্ক পিস্টিন, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদূন হাদী সিনিরলিওলু, ইউএনডিপির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিয়াং ঝু এবং ইউএনডিপির মানবিক উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের পরিচালক ড. সেলিম জাহান।

এছাড়া বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তাগণ এবং জাতিসংঘ সদরদপ্তরে কর্মরত বাংলাদেশের কর্মকর্তাগণও এসময় উপস্থিত ছিলেন। কতিপয় এলডিসি দেশের প্রতিনিধিগণ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সীর কর্মকর্তাগণ উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ এই প্রথম এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সকল নির্ণায়ক পূরণ করেছে। আমাদের সকলের জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন।

এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটির যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ এ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসক) এর মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে এবছরে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।

‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ – যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে আমাদেরকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।

চিঠি হস্তান্তরের পর সিপিডি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সামাজিক খাতগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন এই উত্তরণের ক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ প্রদানকে সহজতর করেছে মর্মে উল্লেখ করেন।

সিপিডি এক্সপার্ট গ্রুপের চেয়ার প্রফেসর হোসে অ্যান্তোনিও ওকাম্পো বাংলাদেশের সাফল্যমন্ডিত উন্নয়নের ইতিহাস রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের গতিশীল রপ্তানী খাত, মানবিক সম্পদ এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

জাতিসংঘের এলডিসি, এলএলডিসি ও সিডস সংক্রান্ত কার্যালয়ের উচ্চতম প্রতিনিধি আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উটইকামানু বলেন, দারিদ্র্য হ্রাস ও উন্নয়নের অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে। ১৪% এর নীচে নেমে এসেছে অতি দারিদ্র্য সীমা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক বছর ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। রূপকল্প ২০২১ নিরবচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারসমূহকে পরিচালিত করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বেলজিয়ামের স্থায়ী প্রতিনিধি মার্ক পিস্টিন, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি সিনিরলিওলু, ইউএনডিপির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক ও জাসিংঘের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিয়াং ঝু। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার উপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।