রেভারেন্ড ফাদার স্ট্যানলী গমেজ :
“ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে
শোন আসমানি তাগিদ।” -কাজী নজরুল ইসলাম
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবারো এসেছে আনন্দের ঈদ-উল ফিতর। বয়সে ছোটদের কাছে ঈদ মানে নতুন জামা, মজার মজার খাবার, হরেক রকমের মিস্টি, আত্মীয় কিংবা বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি বহু রকমের আনন্দে ঈদের দিন কাটানো। বয়স্কদের কাছে ঈদ মানে রমজান মাসের দিনগুলোতে রোজা রাখার সার্বিক প্রচেষ্টা, নিয়মিত নামাজে যোগদানের ইচ্ছা, দীন-দুঃখীদের সাহায্যে সাধ্যমতো হাত বাড়ানো, শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী, নিজের হৃদয়-মন পুত-পবিত্র করার ঐকান্তিক বাসনাসহ বহুবিধ আনন্দের উৎসকে ঈদের দিনে বাস্তবায়িত করা। ঈদের আনন্দ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত চিরস্থায়ী হোক, ভিন্নতার মাঝেও এই আনন্দ সবাইকে একত্রিত করুক, দিন শেষে পরিবারের সবাই যেন এই আনন্দ হৃদয়ে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারে।
রমজান মাসের পরে আসে শাওয়াল মাস। এই মাসের চাঁদ যখন দেখা যায়, তখনই হয় ঈদ-উল ফিতর, যার অর্থ হলো খুশি-আনন্দের পুণরাগমন। রোজা বা উপবাসের মধ্য দিয়ে শারীরিক পরিবর্তন যেমন আসে, তেমনি আসে মানসিক, আধ্যাত্মিক ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তন। ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে সংযম করতে গিয়ে আমাদের দেহ একটা নিয়মের বশবর্তী হয়। এর মাধ্যমে আমাদের মন এমন প্রসারিত হয় যে সেখানে স্থান পায় অভাবী, দরিদ্র, কাঙাল, দুঃখী, এতিম যত মানুষ এবং তাদের জাকাত বা সাহায্য দিতে মন-হৃদয় উদগ্রীব হয়। এই সময়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি সম্মানে, কৃতজ্ঞতায়, আরাধনায় আপ্লুত হয়। তাই নিয়মিত নামাজ আদায় করা থেকে শুরু করে হৃদয় দিয়ে ধর্ম পালন, ন্যায়ভাবে জীবন-যাপন, সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ঘটে। ঈদ মানে আনন্দ। বছর ঘুরে ফিরে আসে ঈদ আমাদের আনন্দে ভরিয়ে দিতে, খুশীর জোয়ারে আমাদের ভাসিয়ে দিতে এবং সিয়াম সাধনার পুরস্কার সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী করতে। ঈদ মোবারক!!
দিনের চক্রে সময় বয়ে যায়। সকালের পর দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, তারপরে আসে সন্ধ্যা, এরপরে নামে আঁধারের রাত। চাঁদ-তারা যেন বলে বিশ্রাম নিতে। রাতের শেষে সূর্য উঁকি দিয়ে আনে ভোর, তারপর আবার সকাল। এই চক্র বেয়ে দিন থেকে সপ্তাহ, তারপরে মাস, বারটি মাস পেরিয়ে বছর। এই ভাবেই সময়ের গতিতে একে একে আসে ষড় ঋতু। পহেলা বৈশাখ আনে নতুন আরেকটি বছর। পুরোনো বছরের জরাজীর্ণতাকে ছেড়ে আমরা অনুপ্রেরণা পাই নতুন উদ্দীপনায় নববর্ষকে বরণ করার। ১৪৩০ সাল সবার জন্য হোক মঙ্গলময়, কোভিডবিহীন, উৎসাহব্যাঞ্জক শান্তিপূর্ণ একটি বছর। শুভ নববর্ষ।
লেখক : একজন রোমান ক্যাথলিক যাজক, ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী, নটরডেমিয়ান, নিউজার্সিবাসী এবং ধর্মবিষয়ক কলামিস্ট।