ঠিকানা রিপোর্ট : ‘জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ একদিন আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে আমি কোনো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি কীনা। উত্তরে আমি বলেছিলাম না। এরপর হুমায়ূন আহমেদ আমাকে বললেন, তোমাকে আজ হুমায়ূন আ্যাওয়ার্ড দিলাম।’ টুটুল বলেন, ‘এরপর জাতীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু আমার কাছে হুমায়ূন অ্যাওয়ার্ডই সেরা। আমার কাছে তা অস্কারের চেয়েও মূল্যবান।’ (শেষের পাতার পর)
গত ১১ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে এভাবেই স্মৃতিচারণ করেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক এসআই টুটুল।
অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের লেখা বিভিন্ন গান এপিটাফ ক্ল্যাসিক্যাল ধারায় পরিবেশন করেন এসআই টুটুল। নিউইয়র্কের প্রখ্যাত সেতারবাদক মোরশেদ খান অপুর সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশনের ইচ্ছে ছিল তার দীর্ঘদিনের। তবে দেরীতে হলেও হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে এসআই টুটুলের গানে সেতার বাজিয়ে তার সেই প্রত্যাশা পূরণ করে দেন মোরশেদ খান অপু, একথা উল্লেখ করেন এসআই টুটুল। অনুষ্ঠানে অপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন এসআই টুটুল। এসময় তিনি প্রয়াত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দীকেও স্মরণ করেন। হুমায়ূন আাহমেদের লেখা ও সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ গানটি দরদের সঙ্গে গেয়ে শোনান তিনি। দর্শকশ্রোতারা করতালির সঙ্গে গলাও মেলান। এসময় সেখানে তৈরি হয় ভিন্ন এক আবহ।
মঞ্চে এসআই টুটুল যত সময় গান গেয়েছেন তার চেয়ে বেশী স্মৃতিচারণ করেছেন হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। আর এসব স্মৃতিচারণে বার বার উঠে এসেছে অভিনেত্রী ও মডেল তানিয়া আহমেদ। কখনো ‘সন্তানের মা’ আবার কখনো ‘আমার স্ত্রী’ বলে তানিয়া আহমেদকে সম্মোধন করে এসআই টুটুল।
এখানে উল্লেখ্য, এসআই টুটুল ও তানিয়া আহমেদের দাম্পত্য বিচ্ছেদ হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় খবর শোনা গেছে। বর্তমানে এসআই টুটুল গ্রিনকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। কিছুদিন আগে নিউইয়র্কের উপস্থাপিকা শারমিনা সিরাজ সোনিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনের খবর প্রকাশ পেলেও পরে তা অস্বীকার করেন এসআই টুটুল।
নিউইয়র্কের জনপ্রিয় প্রমোটার প্রতিষ্ঠান শোটাইম মিউজিক পঞ্চমবারের মতো নিউইয়র্কে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিবিঘ্নিত সন্ধ্যায় জ্যামাইকার পিএস-১৩১ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন হুমায়ূন প্রেমীদের মনে আনন্দের বারতা ছড়িয়ে দেয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন টিভি ব্যক্তিত্ব ও লেখক বেলাল বেগ। এসময় তিনি বলেন, মানুষকে আকর্ষণ করার অসম্ভব এক ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, যিনি ছিলেন একজন জাদুকর। তার লেখায়, তার ব্যক্তিত্বে, সর্বোপরি তার কাজে তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, লেখক হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শোটাইম মিউজিকের প্রেসিডেন্ট আলমগীর খান আলম।
বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি মিশুক সেলিমকে আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট ছড়াকার মনজুর কাদেরকে সদস্য সচিব করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তত্ত্বাবধায়নে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে হিমুময় হয়ে উঠেছিল পিএস-১৩১ স্কুল প্রাঙ্গণ। লেখক-সাংবাদিক, প্রকাশক, পাঠক, পৃষ্ঠপোষক ও গণমান্য দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে সম্মেলন প্রাঙ্গণ ছিল মুখরিত।
পঞ্চম হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে প্রবাসে বসবাসরত কবি ও লেখকদের প্রকাশিত বইসমূহ প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও ছিল চিত্রাঙ্কন, গানে গানে হুমায়ুন, মুক্ত আলোচনা: লেখকের ভাবনায় হুমায়ুন, হুমায়ুন সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বদেশ প্রেম, আবৃত্তি :আমার আছে জল, হুমায়ুন স্মৃতিচারণ, গল্পে গল্পে হুমায়ুন।
এসআই টুটুল ছাড়াও অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী সেলিম চৌধুরী, চন্দন চৌধুরী, প্রবাসের শিল্পী সেলিম ইব্রাহীমসহ অনেকে। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্জলি ড্যান্স গ্রুপ।
চিত্রাঙ্কন পরিচালনায় ছিলেন ফারজিন রাকীবা ও আবু সাঈদ রতন। সহযোগিতায় ছিলেন ড. হাফসা সিদ্দীকা, আলমা ফেরদৌসী লিয়া, খালেদ সরফুদ্দীন, সুমন শামসুদ্দীন ও শিবলী সাদিক।
লেখকের ভাবনায় হুমায়ুন শীর্ষক মুক্ত আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন কবি রওশন হাসান ও শারমিন রেজা ইভা। অংশ নেন প্রবাসের কবি ও লেখকবৃন্দ। মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় ‘হুমায়ুন সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বদেশ প্রেম’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বেলাল বেগ, অধ্যাপিকা হুসনে আরা, তমিজউদ্দীন লোদী, ফকির ইলিয়াস, ফাহিম রেজা নূর ও ড. মহসিন আলী।
‘আমার আছে জল’ পর্ব পরিচালনায় ছিলেন জি এইচ আরজু ও সাবিনা নিরু। অংশ নেন তমিজউদ্দিন লোদী, শামস আল মমীন, সোনিয়া কাদির, আনোয়ার সেলিম, লায়লা ফারজানা। কবিতা আবৃত্তি করেন আনোয়ারুল লাভলু, নজরুল কবির, নাশ নাসরিন, আহসান হাবিব, পিংকি চৌধুরী ও নীলুফার যারীন।
হুমায়ুন আহমেদের রচনা নিয়ে স্মৃতিচারণ পর্বে অংশ নেন আবু রায়হান, রওশন হাসান ও এ বি এম সালেহ উদ্দিন। পরিচালনা করেন ছন্দা সুলতান। নৃত্যাঞ্জলি পরিচালনায় ছিলেন চন্দ্রা ব্যানার্জী ও তার দল। ‘গল্পে গল্পে হুমায়ুন’ পরিচালনা করেন মনজুর কাদের ও শিশুরা।
হুমায়ুন স্মৃতিচারণ পর্ব পরিচালনা করেন এবিএম সালেহ উদ্দিন। অংশ নেন বেলাল বেগ, শারমিন রেজা ইভা ও শামীম শাহেদ।
উল্লেখ্য, এবারের হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো কথা সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, উদ্বোধক ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, বিশেষ অতিথি লেখক ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম এবং আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ শাওন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল নানা কারণে এবারের পূর্বঘোষিত অতিথিরা কেউই উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
কোনো ক্ষতি বিএনপির নেতা-কর্মীরা বরদাস্ত করবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশের ন্যায় প্রবাসেও আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে মোহাম্মদ মনির হোসেন, আশরাফুল হাসান, মোহাম্মদ মীর হোসেন, মোহাম্মদ সম্রাট, মোহাম্মদ মনির, মহিন উদ্দিন, আবুল খায়ের, মোহাম্মদ ফরহাদ, মোহাম্মদ মোসলে উদ্দিন, ইমাম উদ্দিন, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, মোহাম্মদ সোহাগ, সালেহ আহমদ রুমেল, মোহাম্মদ মাসুদ, মোহাম্মদ হারুন, মাহবুবুর রহমান, সাদ্দাম হোসেন, আবু নাসের, মোহাম্মদ হায়দার আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নিউজার্সি স্টেট (নর্থ) ইউএসএ : গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৫টায় প্যাটারসনের বেঙ্গল ইন্স্যুরেন্সের হল রুমে নিউজার্সি স্টেট বিএনপি নর্থের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ জুবায়ের আলী। পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নুল হক। বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী নিপন, সাধারণ সম্পাদক হোসেন পাঠান বাচ্ছুসহ, সভাপতি মোহাম্মদ খলিল, সৈয়দ খালিদ আলী, কামরান হাদী, এবাদ চৌধুরী, এনাম চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন, যুগ্ম-সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ খান, স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মাসুম চৌধুরী, বিএনপি নেতা ফরিদ পাঠান, আবুল খায়ের, রেজোয়ান আহমদ, কুতুব উদ্দিন, আলমগীর কবির শামীম, সিরাজুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
সভার শুরুতে কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন সৈয়দ খালিদ আলী। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের নির্যাতন, বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের গ্রেফতার ও ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে পণ্ড করার ষড়যন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করেন।