বগুড়া : হাজি জাফর আলম চৌধুরী। পরিচিত হাজি জাফর ও ইয়াবা-জাফর নামে। বয়স ৭০। মুখে পাকা দাড়ি, আধাপাকা চুল। দাড়ি ও চুলে মেহেদি লাগিয়ে লাল করে রাখে। মাথায় টুপি, পরে পায়জামা-পাঞ্জাবি। কপালে কালো দাগ দেখলেই বোঝা যায় নামাজ আদায় করে। তার বেশভূষা ও বয়সের ভারিক্কির কারণে অনেকে তাকে সালাম দেয়, প্রণাম করে। এসবই লোক দেখানো। সমাজের চোখে ধূলা দিতেই তার এই সাজ। এ যেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লাল সালু উপন্যাসের মজিদ আজকের দিনের হাজি জাফর মজিদকেও হার মানিয়েছে। এই হাজি জাফর ইয়াবা ব্যবসায়ী। এই ঠগ জাফরই উত্তরাঞ্চলে প্রথম ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়। বগুড়া থেকে শুরু। এখন তার ইয়াবার পাইকারি বাজার বিস্তৃত হয়েছে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।
উত্তরাঞ্চলে ইয়াবা কারবারের বীজ বুনলেও তার বাড়ি মূলত সীমান্তবর্তী টেকনাফে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার। দেশটি থেকে ইয়াবা আনে হাজি জাফর। আর তা পাইকারি দরে বিক্রি করে উত্তরাঞ্চলে। বগুড়ায় পুলিশ ও র্যাবের হাতে তিনবার ধরা পড়েছিল সে। ইয়াবা নিয়ে প্রথমে বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকায় একটি নামিদামি হোটেলে উঠেছিল।
২০১১ সালের ৩ আগস্ট ৩০০ ইয়াবা বড়িসহ ওই হোটেল থেকে হাজি জাফরকে আটক করে পুলিশ। এটা ছিল তার সম্পর্কে প্রথম দিককার তথ্য। ওই সময়ে বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ম-লের নেতৃত্বে পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। এ বিষয়ে আরিফুর রহমান বলেন, হাজি জাফরের বেশভূষা ও বয়সের কারণে তাকে আটক করতে গিয়ে বিব্রত হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমাদের ভুল হচ্ছে। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেফতার করি। তখন তার এক বছরের সাজা হয়। জেল থেকে বের হয়ে সে আবার ইয়াবা কারবারিতে নামে। বগুড়ায় সে-ই প্রথম ইয়াবা আনে।
বগুড়া শহরের মাটিডালি থেকে দ্বিতীয়বার হাজি জাফরকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তখনও তার তিন মাস সাজা হয়। জেল থেকে বেরিয়ে আবারও পুরনো কারবার শুরু করে। ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট বগুড়া র্যাব-১২ তাকে ৮০ পিস ইয়াবাসহ শহরের চারমাথা এলাকার একটি হোটেল থেকে আবারও গ্রেফতার করে। তখন র্যাব কর্মকর্তা সুমিত চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হাজি জাফরই প্রথম বগুড়ায় বসে উত্তরাঞ্চলে ইয়াবার কারবার ছড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়বার জেল থেকে বের হয়ে সে শর্ট পাঞ্জাবি ছেড়ে পায়ের গোড়ালি ঢাকা জুব্বা পরা শুরু করে। র্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ইয়াবা কারবারি হাজি জাফরের নাম। ২০১২ সালের রমজান মাসেও সে কয়েকটি ইয়াবার চালান বগুড়ায় নিয়ে উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়।
র্যাব তাকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করলে সে জানিয়েছিল, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লেদারপাড়া এলাকার মৃত বদিউজ্জামানের ছেলে সে। উত্তরাধিকার সূত্রে হাজি জাফর লবণ চাষি। ২০১০ সালে লবণ চাষ ছেড়ে নেমে পড়ে ইয়াবার কারবারে। সে আরও জানিয়েছিল, ছোট ও মাঝারি ধরনের ইয়াবা কারবারিরা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বড়ি নিয়ে টেকনাফের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। বড়িপ্রতি ১৩০ টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে কিনে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি দরে মাদক কারবারিদের কাছে প্রতিটি ইয়াবা ২২০ টাকায় বিক্রি করে। ইয়াবা কারবারির টাকায় সে হজও করেছে। তবে বর্তমানে এই হাজি জাফর কোথায় আছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বলতে পারছেন না।