ঠিকানা রিপোর্ট : নিউইয়র্কে তিন শতাধিক আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। এরমধ্যে একক সংগঠন এবং বৃহত্তর সিলেটবাসীর ঐক্যের প্রতীক হিসাবে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্ক। সম্প্রতি একটি ভবন কেনাকে কেন্দ্র করে সেই ঐক্যে ফাটল ধরতে বসেছে। সব চেষ্টা যখন বৃথা হতে চলেছে তখন নতুন একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে, তা হলো- এই সংগঠনটি কোনো কারণে দুই ভাগ হলে এর দায় কার?
গত ১১ জুন রোববার উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় মইনুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। এদিন সভার শুরুতে তুমুল হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীরা মইনুলসহ তার সমর্থকদের বের করে দেয়। মইনুল ইসলাম তাকে স্থায়ী অব্যাহতির সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বরং সংবাদ সম্মেলন করে ১৮ জুন রোববার পাল্টা সাধারণ সভা আহ্বান করেছেন। এস্টোরিয়ার যে ভবন কেনা নিয়ে বিতর্ক, মইনুল সেই ভবনকে ‘জালালাবাদ ভবন’ দাবি করে সেখানেই সভা আহ্বান করেছেন। আর এই পাল্টাপাল্টি সভা আয়োজনে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলতে শুরু করেছেন যে ভাঙতে বসেছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। তবে সিনিয়র ও সাধারণ সদস্যরা যে কোনো মূল্যে হোক- তাদের প্রাণের এই সংগঠনটিতে ভাঙতে দিতে নারাজ। তারা বলছেন, ব্যক্তির চেয়ে সংগঠন বড়। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন প্রবাসের বৃহত্তর সিলেটবাসীর ঐতিহ্যের প্রতীক। এটা ভেঙে গেলে প্রবাসে সিলেটবাসীর ঐক্য বিনষ্ট হবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না।
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও মূলধারার সিনিয়র নেতা অ্যাটর্নি মইন চৌধুরী ঠিকানাকে বলেন, যা ঘটেছে বা ঘটছে যাচ্ছে তা কারো কাম্য নয়। আমি মনে করি এখনো সমাধানের পথ খোলা রয়েছে। আমি সবার সঙ্গে কথা বলবো। আশা করছি, সব কিছুর শেষ হবে সমঝোতার মাধ্যমে। আমি বিশ্বাস তরি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন দুটি ধারায় ভাগ হয়ে গেছে। কিছু মানুষ মইনুল ইসলামের পক্ষে। আবার কিছু মানুষ তার বিপক্ষে। আবার কিছু মানুষ গা বাঁচিয়ে চলছেন। আবার কিছু লোক হাততালি দিচ্ছেন। কোনোটাই কাম্য নয়। তারা বলেন, এমন এক সঙ্কট হতেই পারে। আমাদের উচিত পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়ে এবং চুপ না থেকে সঙ্কটের সমাধান খোঁজা। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে?
এদিকে ১৩ জুন মঙ্গলবার দুপুরে এক ইমেইল বার্তায় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম আগামী ১৮ জুন জালালাবাদ অ্যেিসাসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক-এর বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক একটি সাধারণ সভা আহ্বান করেছেন। এই সাধারণ সভা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক-এর নয়। এ ধরনের বিভ্রান্তিমুলক খবরে কান না দেওয়ার জন্য কার্যকরী কমিটি এবং বোর্ড অব ট্রাস্টি-এর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, ৩৮ বছর আগে সিলেটবাসীর কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত হয় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইন্ক।
পাল্টা সাধারণ সভা
ঠিকানা রিপোর্ট : জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নামে এবার পাল্টা বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেছেন সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ‘চূড়ান্ত
অব্যাহতি’ পাওয়া মইনুল ইসলাম। গত ১২ জুন সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আগামী ১৮ জুন রোববার এস্টোরিয়ায় ‘জালালাবাদ ভবন’-এ এই বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

‘জালালাবাদ ভবন’-এ অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত ১১ জুন রোববার কুইন্স প্যালেসে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাধারণ সভা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। সাধারণ সভায় যোগ দিতে আসা সদস্যদের সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে নাজেহাল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ এবং বর্তমান সহ-সভাপতি (সুনামগঞ্জ) শাহীন কামালী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মইনুল ইসলাম বলেন, সাধারণ সভায় সিকিউরিটি গার্ড কর্তৃক সদস্যদের নাজেহাল হবার ভিডিও রয়েছে তাদের কাছে। এ ধরনের ঘটনা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মইনুল বলেন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবন সবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, যা বাস্তবায়নে গত নির্বাচনে আমাদের ওয়াদা ছিল। সেই লক্ষ্যে ময়নুল হক চৌধুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজের নেতৃত্বাধীন বিগত কমিটির লিখিত অনুমোদনের মাধ্যমে এস্টোরিয়ায় ‘জালালাবাদ ভবন’ কেনা হয়। ভবন কেনা ও পরবর্তী কমিটির কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য ইতিমধ্যে কমিউনিটির সবাইকে জানানো হয়েছে।
মইনুল ইসলাম জানান, আমরা আশা করেছিলাম ১১ জুন রোববার অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় ভবন কেনা সংক্রান্ত সকল তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জালালাবাদবাসীর কাছে তুলে ধরবো। যদিও সাধারণ সভা গঠনতন্ত্র মোতাবেক হয়নি। তা সত্ত্বেও কেবল ভবন কেনা সংক্রান্ত বিষয়ে জালালাবাদবাসীকে অবহিত করা এবং কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে তার সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য সাধারণ সভায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিটি তাদের পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক আচরণের মাধ্যমে তা বানচাল করে দেয়।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি জালালাবাদবাসীর অধিকার রয়েছে ভবন কেনা সংক্রান্ত সকল তথ্য জানার। এ কারণে আমরা ১৮ জুন রোববার এস্টোরিয়ার ‘জালালাবাদ ভবন’-এ জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করছি।
এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মইনুল ইসলাম বলেন, এই সভা সবার জন্য উন্মুক্ত। সংগঠনের সভাপতি বদরুল হোসেন খানও যদি যোগ দেন তাকে সভাপতির আসনেই বসানো হবে। তিনি না এলে সাংগঠনিক নিয়মে সংগঠনের সহ-সভাপতির যে কোনো একজন সভাপতিত্ব করবেন বলে জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহ-সভাপতি (সুনামগঞ্জ) শাহীন কামালীসহ দুজন সহ-সভাপতি তাদের সঙ্গে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম ভবন কেনা সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া ভবন কেনা নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধানে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি।