নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাচ্ছেন। তফসিল ঘোষণার আগে কিংবা পরপরই তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে হাসপাতালে স্থানান্তরের ঘটনা রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। এমন কথাও চাউর হয়েছে যে, সরকার ও বিএনপির মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে একটা গোপন সমঝোতা হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই বেগম খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভোটের কয়েক দিন আগে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পেয়ে নির্বাচনও করতে পারেন মর্মেও প্রচারণা রয়েছে। জেলখানা থেকে খাট, জাজিম, তোশক, আলনা, চার স্যুটকেট ভর্তি কাপড়চোপড়সহ খালেদা জিয়ার জন্য তার বাসা থেকে সমস্ত জিনিসপত্র হাসপাতালে নিয়ে আসায় বিএনপির কর্মীদের মধ্যেও তার মুক্তি নিয়ে আশাবাদী মনোভাব জেগেছে। অবশ্য এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঠিকানাকে বলেন, এতে গোপন সমঝোতার কিছু নেই। হাইকোর্টের নির্দেশেই খালেদা জিয়াকে জেলখানা থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হবে। এর পেছনে খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়া এবং বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। কারণ, বিএনপি যদি নাও আসে প্রায় সব দলের অংশগ্রহণ ও বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে নির্বাচন হবে। গভীর আস্থার সঙ্গে ওই দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, হাসপাতাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির কোনোই সম্ভাবনা নেই। তাকে হাসপাতালের কেবিনে রেখেই নির্বাচন হবে এবং বিএনপিও তার জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো প্রায় গুছিয়ে এনেছে।
দেখা গেছে, বরাবরই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ওমরাহ করতে যান। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তফসিল ঘোষণার পরপরই তার সৌদি আরবে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেখানে অবস্থানকালে সৌদির রাজা ক্রাউন প্রিন্সসহ রাজকীয় কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হতে পারে।
এদিকে চলতি অক্টোবরের শেষের দিকে নির্বাচনকালীন অপেক্ষাকৃত ছোট সরকার গঠন করা হবে। এ সংখ্যা হবে ২৫-২৭ এর মধ্যে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভা হবে সর্বাধিক ৩০ সদস্যের। তারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। রুটিনমাফিক কাজ করবেন মাত্র। এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। রুটিনমাফিক কাজ করবেন মাত্র। এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা দলীয় ও শরিক দলগুলোর মন্ত্রীরা স্থান পাবেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে অর্থমন্ত্রী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। ২৭ ডিসেম্বর ভোটের খসড়া দিন স্থির করা হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী মুহিত তা আগাম প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা এতে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় তারিখ পিছিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করার প্রস্তাব সরকারের উচ্চতর পর্যায় ও নির্বাচন কমিশন বিবেচনায় রেখেছে। সে অনুযায়ী তফসিল ঘোষণাও কিছুটা বিলম্বিত হবে।
এদিকে সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সহযোগীরা তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে কর্মসূচির পাশাপাশি নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এই প্রক্রিয়ায় থাকার কথা ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থানে ভিন্নতাও আসতে পারে। ডা. চৌধুরীর বিকল্পধারা ও অপর কয়েকটি সমমনা দল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে মূলত আসন, ক্ষমতার ভাগাভাগি-কেন্দ্রিক মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার সূত্রাপুরে ডা. বি. চৌধুরী নির্বাচন করতে চান। দুটি আসনই হাতছাড়া করা বিএনপির জন্য কষ্টসাধ্য। সূত্রাপুুরে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং মুন্সিগঞ্জে প্রবীণ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রার্থী হবেন। দুই প্রার্থীর ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ও মানসিক প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে টানলে কর্নেল (অব.) অলির দূরে সরে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টে রায় হবে ১৪ অক্টোবর। আদালত খালেদা জিয়ার পক্ষে রায় দিলেও তার মুক্তি এখনই হবে না। রাষ্ট্রপক্ষ আপিলে যাবে। আপিল বিভাগে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার আইনগত প্রক্রিয়া করবে রাষ্ট্রপক্ষ। এমন একটা সময় বেছে নেবে রাষ্ট্রপক্ষ, যখন প্রার্থিতার সুযোগ থাকবে না। নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া যাতে প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সুযোগ যাতে না পায়, সে ব্যবস্থা দেবেন সে নিশ্চয়তাও নেই। যদি দেয়ও আরো চারটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এসব মামলা জামিনযোগ্য হলেও সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাও রায়ের পর্যায়ে নিয়ে রাখা হয়েছে।