ওয়াসার তাকসিম কি আউলিয়ার চেয়ে কম?

মোস্তফা কামাল : আদিকাল থেকে মনিব বাঁচাতে গোলামদের এগিয়ে আসার কাণ্ডকীর্তি দেখে অভ্যস্ত বঙ্গের মানুষ। এতে সংস্করণ এসেছে। মনিবকূলও গোলামদের রক্ষায় এখন আগোয়ান। তবে, তা জায়গা ও ব্যক্তিদৃষ্টে। সরকারি চাকরি করলেও ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খানকে কি হুট করে চাকর, গোলাম বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি বলা যায়?
এক তাসকিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি নিয়ে টাসকি খাওয়ার মধ্যে ওয়াসার অভিভাবক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ওয়াসার প্রশংসা করেছেন। সংসদে জানিয়েছেন, গত এক দশকে চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত পানি উৎপাদনের সক্ষমতা দেখিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এরপরও তাসকিমকে নিয়ে আর কোনো সমালোচনা মানায়?
তাসকিম খান বিগ শট, স্মার্ট। তারওপর সৎ-পরিশ্রমী। সেই ২০০৯ সাল থেকে পরিশ্রম করছেন ঢাকা ওয়াসায়। এই পরিশ্রমী ব্যক্তিকে দেখে উৎসাহিত-প্রণোদিত, আবেগে উদ্বেলিত অনেকে। এরপরও একজন নিরপরাধ মানুষকে অপবাদ দিচ্ছে কিছু মিডিয়া! আদালতও তা আমলে নিয়ে দুদককে তদন্ত করতে বলেছে। সিআইএসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থা পর্যন্ত তার পেছনে লেগেছে। একাত্তরেও এরা ডিস্টার্ব করেছে, পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এখন আবার বাংলাদেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাসকিমের পেছনে লেগেছে! তার যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনাসহ নানা অগ্রগতিকে নেগেটিভলি দেখছে। এদের খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই?
যে উন্নয়ন বাঙালি স্বপ্নেও ভাবেনি, একজন বাংলাদেশি তা করে দেখিয়েছেন, তা সহ্য হচ্ছে না? গা জ্বলে? অন্তরে জ্বালা, ভেতরে জ্বালা, বাইরে জ্বালা? তাসকিমের ‘আমার কিছু নেই’ বক্তব্য নিয়ে ট্রল করার কী আছে? বাংলাদেশে কোথায় তার কিছু বা কেউ আছেন? তিনি সত্যবাদী। কখনো হারাম খান না। ওয়াসার পানির দাম বাড়িয়েছেন মাত্র ১৩ বার। চাইলে আরো বেশি বার বাড়াতে পারতেন। পারতো কেউ ঠেকাতে? বেতন মাত্র ৬ লাখ টাকার কিছু বেশি। ডলার বা রূপিতে কনভার্ট করলে এটা কোনো টাকা?
সমালোচক-ট্রলাররা বিবেকহীন, নিষ্ঠুর। বিবেক-সততা দিয়ে চিন্তা করলে তারা নেগেটিভলি দেখতেন না বিষয়টিকে। ওই গোত্রের একজন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সোহেল রানা। এই ব্যাটাকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সাক্ষাতের সুযোগ দিলে বিভিন্ন জায়গায় এসব অভিযোগ সাপ্লাই করতেন তিনি?
তাকসিম কখনো ঘুষ বা হারাম খেয়েছেন- তা কেউ কখনো দেখেছেন? টাকা দিয়ে জমি-টমি কিনেছেন, বাড়ি-গাড়ি করেছেন, বিদেশে ঘুরতে গিয়ে নানান কিছু খেয়েছেন, প্রমাণ আছে? খেলেও তা ওয়াসার পানিতে ওয়াশ করা। না জেনে আন্দাজে অন্যের নামে মিথ্যা বলা অনেকেরই বদ অভ্যাস। এছাড়া, কারো কারো যে মাত্রায় উন্নয়ন হচ্ছে, দেশে বা বাড়িতে কি টাকা নিরাপদ? তিনি কার বেয়াই, দুলাভাই সেই খবরও জানে সবাই?
বেয়াইদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ হোক। টালবাহানা না করে তাদের এ কর্মযজ্ঞের আনুষ্ঠানিক সামাজিক স্বীকৃতি দরকার। নইলে আজকের শিশুরা বড় হয়ে বেয়াই হওয়ার প্রেরণা পাবে? রাজধানীর অবহেলিত নদ্দা-বাড্ডার পাশে গুলশান ২-এর ৫৫ নম্বর সড়কে সরকারি বাসভবন তার। বাড়িটার ভাড়া মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। আয়তন মাত্র দুই বিঘা। টুকটাক ফার্নিচার। ডুপ্লেক্স বাড়িটিতে ছোট মাত্র একটি পুকুর। বাগানটিও খুব ছোট। মাত্র ডজন খানেক কর্মচারি ছাড়া সেখানে আর কিছু নেই। তার ওপর ওই বাড়িতে তিনি থাকেনও না। থাকেন নয়াপল্টনে, শ্বশুরবাড়িতে। তা কি দেশ-দশের প্রতি কম উদারতা?
পরের জায়গা পরের জমিন, ঘর বানাইয়াও তিনি থাকেন না। তিনি তো সেই ঘরের মালিকও নন। মালিক স্ত্রী-সন্তানরা। একেবারে আউলিয়া-বুজর্গ টাইপের মানুষ। তাহলে গোটা বিষয়টিকে পজেটিভলি দেখতে সমস্যা কোথায়?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।