কক্সবাজারে আবাসিক প্লট নিয়ে দুই শতাধিক বাণিজ্যিক ভবন

কক্সবাজার : কক্সবাজার শহরে আবাসিক প্লট বরাদ্দ নিয়ে দুই শতাধিক হোটেল-গেস্ট হাউজ বানিয়ে ব্যবসা চলছে। এতে করে তারা বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। তবে এখন রূপান্তর ফি নিয়ে ভবনগুলোর বৈধতা দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে গণপূর্ত বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, পর্যটন শহর কক্সবাজারে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুই শতাধিক গেস্ট হাউজ রয়েছে, যেগুলো আবাসিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নেয়া হয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এমন শতাধিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিককে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছে। তবে পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শহরের কলাতলী এলাকায় গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয় থেকে প্রধান সড়কের পূর্ব পাশ হয়ে আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যালয় পর্যন্ত এলাকাটি ১৯৫৭ সালে ‘স্বাস্থ্যনিবাস’ রূপে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নেয় তৎকালীন সরকার। নকশা অনুযায়ী দুদফায় ১৭৭ দশমিক ৪৭ একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। ১৯৭৭ সালে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর সংশোধিত নকশা অনুযায়ী এ, বি ও সি এই তিন ব্লকে ভাগ করে ২২৬টি প্লট তৈরি করে। ১৯৭৯ সালে আবাসিক এলাকা হিসেবে ২১০টি এবং ২০০০ সালে ১৬টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই এলাকায় পরে আরো ২৭টি প্লট তৈরি করা হয়। তবে ২০১০ সালে প্লটগুলোয় আট তলাবিশিষ্ট ১০টি ভবন মিলিয়ে ৪৯০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে ওইসব প্লটে গণপূর্ত বিভাগ ভবন নির্মাণের কাজ করছে। ১৯৭৯ ও ২০০০ সালে বরাদ্দ দেয়া আবাসিক প্লটগুলোয় এখন হোটেল ও গেস্ট হাউজ বানিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন মিয়া বলেন, এর আগে তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে গণপূর্ত বিভাগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু সব আবাসিক প্লটেই বাণিজ্যিক হোটেল গড়ে তোলা হয়েছে, তাই এগুলোর ব্যাপারে নতুন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে আবাসিক প্লটগুলোকে আবাসিক হোটেলে রূপান্তর করা হবে। ব্যবসায়ীরা রূপান্তর ফি দিয়ে বৈধতা নিতে পারবেন।
এ দিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার একটি গেস্ট হাউজের কর্মকর্তা জানান, মালিকদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনে সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর দুদক নোটিস জারি করে। ২১ নভেম্বরের মধ্যে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দফায় ১৯টি গেস্ট হাউজকে নোটিশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাসিক হিসেবে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ; হোটেল/গেস্ট হাউজে অবস্থানরত বোর্ডারের প্রকৃত সংখ্যা কম দেখিয়ে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আত্মসাৎ এবং অবৈধভাবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।
১৯টি গেস্ট হাউজকে দুদকের নোটিশ দেয়ার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, নোটিস পাওয়ার পরই আইনজীবীর মাধ্যমে জবাব দেয়া হয়েছে।
তবে তার দাবি, সংগঠনভুক্ত হোটেল গেস্ট হাউজগুলো সঠিকভাবেই ট্যাক্স ও ভ্যাট পরিশোধ করেছে। তা ছাড়া আবাসিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নেয়া হলেও গেস্ট হাউজগুলো আবাসিক হোটেলের অনুমোদন পেয়েছে। তাই দুদকের নোটিশের কোনো ভিত্তি নেই।