বিশ্বচরাচর ডেস্ক : সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার ও দমনের মুখে দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশটিতে ধর্মভিত্তিক ক্ষমতাধর ওয়াহাবিরা। যুবরাজ সালমান ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে একের পর এক সমাজ সংস্কারমূলক কাজের উদ্যোগ নিচ্ছেন। মাঠে বসে নারীদের ফুটবল খেলা দেখা ও গাড়ি চালানো সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এভাবে সৌদির সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্প্রতি যে পরিবর্তন এসেছে কিংবা দিনবদলের কর্মযজ্ঞ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তার সবই হয়েছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে। সৌদি আরবের অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। গত বছর অক্টোবরে রিয়াদে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের যুবরাজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সৌদি আরবে মডারেট ইসলাম (মধ্যপন্থী ইসলাম) ফিরিয়ে আনা হবে; যা সব ধর্মের জন্য উন্মুক্ত হবে। সৌদিতে চরমপন্থী চিন্তাভাবনার প্রবর্তকদের নির্মূল করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে মোহাম্মদ বলেন, সৌদি আরব অতীতে এমন ছিল না। আমরা মডারেট ইসলামের দিকে ফিরছি, যেমনটা অতীতে ছিল।
ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির সংস্কৃতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স। গানের কনসার্ট করার অনুমতিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন তিনি। গত ৩৫ বছর পর দেশটিতে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
যুবরাজ সালমানের সংস্কারমূলক এসব কর্মকাণ্ডের কারণে ক্রমে নীরব হয়ে পড়ছে দেশটির ওয়াহাবিরা। ওয়াহাবিরা ইসলামের একটি কট্টর গোষ্ঠী। এদেরকে আহলে হাদিস বা সালাফিও বলা হয়ে থাকে। বিশ্বের ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে সৌদি আরবে ২২৯ শতাংশ, কাতারে ৪৬৮৭, আমিরাতে ৪৪৮, বাহরাইনে ৫৭, কুয়েতে ২১৭ শতাংশ জনগণ বাস করে। মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব একজন ইসলামিক সালাফি প-িত এবং ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ওয়াহাবি মতবাদের অনুসারীরা চরম গোঁড়া ও রক্ষণশীল। এই মতবাদের অনুসারীরা ইসলামের নিয়মনীতি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার সিদ্ধান্তে অটল। সৌদি আরবে এই সালাফিদের একসময় অনেক প্রভাব ছিল বলেও জানা যায়। তবে সংস্কারপন্থী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের চাপে টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে তাদের কার্যক্রম।
বিশ্লেষকদের মতে, যুবরাজ সালমানের সমাজ সংস্কারমূলক আকাক্সক্ষার কারণে সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে সালাফি মতবাদের অনুসারীদের বড় ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে। তাদের দমনে রাখতে যুবরাজ সালমান বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। স্বাধীন চিন্তা-চেতনার কারণে জনপ্রিয় সালাফি আলেমদের জেলে দেওয়া হয়েছে। রিয়াদের ৫০ বছর বয়সী এক লোক নিজেকে সালাফি দাবি করে বলেন, আমরা জানি না, কী ঘটছে। সম্প্রতি বিকেলে সমাবেশ শেষে এক সালাফি সতীর্থকে নিয়ে তিনি তার আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। তিনি বলেন, মনে হয় নিজ দেশেই পরবাসী হয়ে যাচ্ছি আমরা।