‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ নিয়ে হই চই

প্রণবকান্তি দেব : সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ বা ‘চুক্তি বিয়ে’। এ নিয়ে হই চই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় সফলতার হার বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই এ ধরনের বিয়ের হিড়িক পড়েছে।
জানা গেছে, কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ বা চুক্তি বিয়ে একটা সময় বাংলাদেশে অপ্রচলিত ছিল। তবে এই শব্দটা সিলেটীদের কাছে পরিচিত ছিল অনেক আগে থেকে। ২০০৫-০৬ সালে সিলেটে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সিলেটের যুবকরা ওর্য়াক পারমিট বা ভিজিট ভিসায় লন্ডন যেতেন। সেখানে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তারা সেখানকার নাগরিক কোনো মেয়েকে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ করতেন। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে মেয়েটি ছেলেটিকে লন্ডনের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতেন। পরে তারা ডিভোর্স নিয়ে নিজ পছন্দের মেয়ে- ছেলেকে বিয়ে করতেন। বর্তমানে একইভাবে সিলেটে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ বেড়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি দেশে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় শিক্ষার্থী ভিসায় সেসব দেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রবাসীবহুল সিলেটের তরুণদের প্রবাসমুখিতার ইতিহাস অনেক পুরোনো। ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় এই প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে আরও বড়েছে। শিক্ষার্থী ভিসায় নির্ভরশীল হিসেবে ‘স্পাউস’ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকায় এখন বেড়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম-আইইএলটিএস’ করা পাত্রপাত্রীদের কদর। বেড়েছে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজও’। ফলে এ নিয়ে সরব সবাই।
এদিকে, সিলেটের বিয়েভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক পেজ আর ভিসা প্রসেসিং সেন্টারগুলোই এখন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে। প্রায়শই আইইএলটিএসে ৬ বা তার ওপরে পয়েন্ট পাওয়াদের বিদেশ যাওয়ার খরচও বহন করছে অনেক পাত্রপাত্রীর পরিবার। এ ক্ষেত্রে অনেক বিয়েই হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক, গন্তব্যে পৌঁছার পর দুজনের মধ্যে আর সম্পর্ক থাকবে না- এমন শর্তে। অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা স্বামী-স্ত্রী বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশে।
জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে শিক্ষা ভিসার শর্ত সহজ করে। ওই সময় থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন প্রচুরসংখ্যক শিক্ষার্থী। এরপর করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়। তবে ২০২১ সাল থেকে শিক্ষা ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে ও যক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার হিড়িক পড়ে।
সিলেটে শিক্ষা ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত সংগঠন ‘ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর তথ্য মতে, ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ভিসায় আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী, ২০২১ সালে ১১ হাজার শিক্ষার্থী ও ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ গিয়েছে।
সব মিলিয়ে সিলেটে এখন বিদেশ যাত্রার হার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী। এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটো দিকই আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।