কবিতা আমার কাছে একটা হাতিয়ার মাত্র

পল ভ্যালেরি : ফরাসি কবি পল ভ্যালেরির পুরো নাম আমব্রোইসে পল তুসাইন্ত জুল ভ্যালেরি। প্রবন্ধকার এবং দার্শনিক হিসেবেও তার পরিচিতি আছে। আর এসব পরিচয়ের আড়ালে তার আগ্রহ ছিল শিল্প, শিক্ষা, সঙ্গীত, ইতিহাস এবং চলমান নানা বিষয়ের প্রতি। দীর্ঘ ১২ বছর নোবেল পুরস্কারের সম্ভাব্য প্রাপক হিসেবে নাম আলোচনায় আসে। জন্ম ১৮৭১ সালের ৩০ অক্টোবর। বয়স বিশের কোঠায় থাকতেই লেখালেখি শুরু করেন। ১৯২০ সালের পর থেকে লেখালেখিতে পুরোপুরি সময় দেন।

১৯২৫ সালে একাডেমি ফ্রাংকাইজে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ফরাসি সমাজে বুদ্ধিজীবী হিসেবে জনসমক্ষে অবিরাম বক্তৃতা দিয়ে চলেন। বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা সফর করেন এবং বক্তৃতা দিতে থাকেন। এভাবে দেশের বাইরে ফরাসি বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিতি পান। তার ভূমিকার জন্য লিগ অব নেশনসে তিনি ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। শিল্প এবং শিক্ষা বিষয়ে লিগ অব নেশনসের বিভিন্ন কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। যেমন একটার নাম ছিল কমিটি অন ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন। সে সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক প্রবন্ধ লেখেন ভ্যালেরি। সেগুলোর মধ্যে নির্বাচিত ১০টা প্রবন্ধের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করা হয় ১৯৮৯ সালে। সংকলনটির নাম ‘দি আউটলুক ফর ইন্টেলিজেন্স’।
ভ্যালেরির প্রধান পরিচয় হলো, তিনি কবি। অনেকেই মনে করেন, ফরাসি সিম্বলিস্টদের মধ্যে সর্বশেষ কবি। ১৮৯২ সালের ৪ অক্টোবর রাতের ঝড়ের সময় অস্তিত্বসংকটে পড়েন।

ওই ঘটনাটা তার লেখকসত্তার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া গুরু স্তেফানে মালাহমের মৃত্যুও তার কবিমানসের ওপর বিরাট আঘাত হয়ে আসে। প্রায় ২০ বছর তিনি কোনো লেখা প্রকাশ করেননি। এরপর ১৯১৭ সালে প্রকাশ করেন রহস্যঘেরা কাব্য ‘লা জিউনে পার্ক’। ভ্যালেরির কাব্যশৈলীর ওপর মালাহমের শৈলীর প্রভাব দেখা যায়। বিশেষ করে ছন্দ এবং মাত্রার দিক থেকে তিনি মালাহমের অনুসারী। আর ভ্যালেরির কাব্যশৈলীর প্রভাব পড়েছে তার উত্তরকালের কবিদের ওপর। তার স্পষ্ট প্রভাব দেখা যায় মার্কিন কবি জেমস মেরিল এবং এডগার বাওয়ার্সের ওপর। বাওয়ার্সের রহস্যঘেরা ঘন নন্দনতাত্তি¡ক শৈলীর ওপর ভ্যালেরির গীতিময় প্রবাহ বেশি স্পষ্ট। মেরিলের বিখ্যাত কবিতা ‘লস্ট ইন ট্রানসেøশন’-এর ওপর প্রবাহ প্রভাব সুস্পষ্ট।

কবিতা বিষয়ে গুরু মালাহমে এবং শিষ্য ভ্যালেরির মধ্যে কিছু মিল, কিছু অমিল দেখা যায়। কারণ দুজনই নিজ নিজ গুণে এবং বিশ্বাসে নিজের মতোই ছিলেন। দুজনই মনে করতেন, ভাব আসলে কবিতার বিষয়বস্তু নয়, ভাবকে একটি কিংবা দুটি বাক্যে যথাযথভাবে প্রকাশ করা যায় না।

ভ্যালেরি আজীবন মার্কিন কবি ও কথাকার এডগার অ্যালান পোর প্রতি মুগ্ধ ছিলেন। অ্যালান পোর লেখার মধ্যে তার দুই ধরনের মগ্নতা দেখা যায় একটা আদর্শিক, আরেকটা বাস্তববাদী। মালাহমে এবং বোদলেয়ারের পছন্দ ছিল অ্যালান পোর আদর্শিক মগ্নতা। অন্য দিকে ভ্যালেরি পছন্দ করতেন পোর বাস্তববাদী মগ্নতা। ভ্যালেরির অনমনীয় বাস্তববাদী মনোভাবটাই অন্যান্য ফরাসি লেখক-কবিদের থেকে তাকে আলাদা করে রেখেছে।