বর্ণমালা মা
ছন্দা বিনতে সুলতান
বর্ণমালা মা আমার,
তোমার চারপাশে
হিন্দি, ইংলিশ, আর বাংলিশের উৎপাতে,
তুমি কি ভীষণ শঙ্কিত, অশ্রুসিক্ত।
তোমার অগ্রজ সন্তানেরা,
জীবন দিয়ে তোমায় করেছে গর্বিত।
জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে দেশ ছেড়ে
আমরা তোমায় করেছি বঞ্চিত।
দূরে থাকলেও তোমায় ভুলিনি মা,
তাই তো এই কনকনে শীতের মাঝে
শাড়ি পরে প্রভাতফেরিতে যাই।
শহীদ বেদিতে পুষ্প দিই,
ভিনদেশিদের বাংলা শেখাই
তাতেও যদি প্রায়শ্চিত্ত হয়।
আমরা তো মা দূরে থাকি
কিন্তু আমরাও গর্জে উঠি
প্রতিবাদ করি।
যখন দেখি তোমার বুকে শুয়ে
তোমার কোলে মাথা রেখে,
অনুজ ভাইবোনেরা
ইংলিশ, বাংলিশে কথা বলে,
নিজেদের অতি আধুনিক ভাবে।
ওরা যে ডিজিটাল বাঙালি মা!
রিমোট টিপেই ওরা সব জয় করতে চায়।
ওদের এই আধুনিকতায়,
আমরা গর্জে উঠলেও
তুমি থাকো নিশ্চুপ।
তুমি ওদের অভিসম্পাত দেও না
কেননা তুমি যে মা!
বর্ণমালা মা।
নিউ ইয়র্ক।
কনফেস
তমিজ উদ্দীন লোদী
আইসিইউ থেকে কেবিন বেডে স্থানান্তরিত হবার পর তিনি অনেক দিন পর স্বাভাবিক শ্বাস
নিলেন। জানালার কার্টেন সরিয়ে দিলে তিনি চিলতে আকাশ ও খানিকটা মেঘও দেখলেন। এর
আগে অবশ্য তিনি তার মৃত্যু কামনা করেছিলেন।
তিনি বললেন, দেখো, এবার থেকে নতুন আমাকে দেখবে। মনে মনে কনফেস করেছি। সবই
বিলিয়ে দেব, যা কিছু অর্জিত ছিল না আমার। আমাকে বিধ্বস্ত করছে কেড়ে নেওয়া সম্পদের ভার।
সুস্থতা নিয়ে বাড়ি ফিরলে তিনি সম্পূর্ণ আকাশ দেখলেন। বুকভরে তাজা বাতাস নিয়ে
ভাবলেন, আবারও ভুল করে ফেলেছেন তিনি। অর্জিত, তা যেভাবেই হোক, এ সম্পদ তো
তারই! তার আবার কনফেস কিসের!
নিউ ইয়র্ক।
খাসকথা
খালেদ সরফুদ্দীন
নীল ভেসেছে লালে
লাল এসেছে নীলে,
তা ধিনাধিন তালে
বাকুম বাকুম দিলে!
লালে লালে সুখের পরশ
নীলের অবহেলা,
লালের সাথে নীলের
কানামাছি খেলা।
নীল খেয়েছে লাল
লাল গিলেছে নীল,
নীলের সাথে লালের
দাদরা তালে মিল!
ভালোবাসার খেলায়
নীল মিলেছে লালে,
দুঃখগুলো ভুলে ওরা
থাকল চিরকালে।
ম্যানহাটন, নিউ ইয়র্ক।
আ-মরি বাংলা ভাষা
শামস আল মমীন
যখন আমার চোখ
খুনির চোখের মতো ছলছল করে, আমি
সিঁড়ি বেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে শহরের সবচেয়ে
উঁচু দালানের ছাদে উঠি।
দেখি, পোকামাকড়ের মতো শব্দহীন;
যন্ত্র ও মানুষে
প্রকৃতি ও সভ্যতার নীরব প্রতিযোগিতা।
যেখানে যেখানে আমার পায়ের ছাপ
গুলিস্তান, পোস্তগোলা
আজিমপুর, সিদ্ধেশ্বরী..
ঐ তো শীতলক্ষ্যা, আমার অস্থির ছেলেবেলা…
কলাভবন,
পাখি আর সবুজের কলতানে ঘুমে আছে শের-এ-বাংলা;
আমাদের লোভাতুর চোখ দেখে অভিমানে কোনো দিন আর
তাকালেন না আমাদের দিকে,
এই যে কমলাপুর, যার মাথার মুকুটে লাল মোরগের
ঝুঁটির মতো সূর্য ওঠে প্রতিদিন।
যেখানে যেখানে আমার পায়ের ছাপ
নিঃশ্বাস হা-হুতাশ..
শ্বেতপাথরের পার্লামেন্ট, যেখানে একটু একটু করে
স্বপগুলো অস্ত যায় প্রতিদিন।
বাজারের থলি হাতে
ঘরে ফেরার উৎকণ্ঠায়…
আজিমপুর আসাদ গেটে
ফার্মগেট মতিঝিলে
মিরপুর পরীবাগে
বিপন্ন দিনের প্রেসক্রিপশন হাতে
অচল ঘড়ির স্থবির কাঁটার মতো দাঁড়িয়ে
অগণিত পুরুষ ও নারী…
একটা লেক্সাস বিএমডব্লিউর পিছু পিছু মহাখালী পার হয়ে
খেলাচ্ছলে
দ্রুত মোড় নেয়
গুলশানে;
ওরা কোনো দিন বুঝল না, কেন এ অপেক্ষা…
ওরা জানল না, শামসুর রাহমান গোপনে এখনো চিঠি লেখে
কেন বুদ্ধদেবের খোঁজে,
ওরা বুঝল না, শহীদ কাদরী বিউগল বাজিয়ে আজও
কেন লেফট-রাইট করে, দূরদেশে..
শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানের ছাদে আমি একা, গ্রহ-নক্ষত্রের
খুব কাছাকাছি। আমার ভেতরে অলৌকিক অশুভ শক্তির
মহড়া চলছে। ইচ্ছা করলেই পোকামাকড়ের মতো
যন্ত্রদানবের চিৎকার-শীৎকার…
ঘুমন্ত অট্টালিকা, শব্দহীন শহরের কাম-ক্রোধ, তেলে ভাজা
পাপড়ের মতো ভেঙেচুরে অনায়াসে বঙ্গোপসাগরে
নিক্ষেপ করতে পারি। কিন্তু বুড়িগঙ্গার শীতল বাতাস আমাকে
ভুলিয়ে-ভালিয়ে শান্ত করে; আমি এসবের
কিছুই করি না।
আমি আস্তে আস্তে নেমে আসি,
যেখানে যেখানে আমার পায়ের ছাপ
টিএসসি, প্রেসক্লাব
নীলক্ষেত, কার্জন হল আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
চোখ ঘষতে ঘষতে জেগে ওঠে, আর
মেঘের ভেতর থেকে নেমে আসে
সাদা সাদা শাড়ি, খোঁপাভরা ফুল, বকুলের গন্ধ…
আমি থমকে দাঁড়াই;
মাথার উপরে কয়েকটা রক্তাক্ত অক্ষর আমার জন্মের দস্তখত হাতে
অসম্ভব স্পর্ধায় দাঁড়িয়ে…
আমি মাথা উঁচু করে প্রাণ দিয়ে পড়ি, আ মরি বাংলা ভাষা…
নিউ ইয়র্ক।
বাংলা ভাষার গীতিকাব্য
জুলি রহমান
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন।
রফিক-শফিক নামেরই বর্ণন।
সালাম-বরকত রাস্তায় নামে
পুলিশ থাকে তাদের বামে…
দিনটি বাহান্নর ভাষা আন্দোলন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলে স্লোগান তোলে
বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা, থাকব বাংলার বোলে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাবিবুল্লাহর মনের কথা বোঝা হলো ভার।
কথায় কথায় উর্দু বলে, আল্লাহু আকবার!
উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা যার বিকল্প নাই
বাংলার বাঘ শেরেবাংলা তেড়ে ওঠেন তাই
গোলটেবিল বৈঠক বসে বুদ্ধিজীবী অঙ্ক কষে
দিন গলে রাত হয়, রাত গলে দিন
বাংলা ভাষার আয়ু যেন হয়ে আসে ক্ষীণ
কৃষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতি বুদ্ধি তাদের খাটো অতি
তবুও সেই ঘরেই জন্ম ছিল
বাবা তারে আদর করে দিল অনেক টাকা।
কোনো কিছু বাদ রেখো না
জীবন তো নয় ফাঁকা
মৃদু হেসে রফিক নিল বিদায়
কী ভেবে মা ফিরে ফিরে চায়।
উঠল রফিক প্রিয়ার বাড়ি!
কী আনিব বলো জলদি করি?
প্রিয়তমা বলে রফিক কিছু না চাই!
তোমাকে পাব জীবনে যার তুলনা নাই।
হেসে খুন রফিক বলে বিদায়।
প্রিয়া তার ফিরে ফিরে চায়…
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, আমার ভাষায় বলব কথা
কেন তোদের বাড়ল ব্যথা?
আমার মা আমার দেশ, বাংলা মুখের ভাষা।
মায়ের মুখের বুলি তোরা কেড়ে নিয়ে ঘটাবি দুর্দশা?
মিছিলে মিশে গিয়ে রফিক স্লোগান তোলে।
নিজের বিয়ের কথা বেমালুম যায় ভুলে।
আসাদ-জব্বার-শফিক সেই মিছিলে
একসাথে চলে তারা দলে দলে
পুরান ঢাকার এপিয়ার গোলচত্বরে।
মিছিলের ওপর পুলিশেরা গুলি করে।
লুটিয়ে পড়ে ওরা, যারা ছিল প্রথম কাতারে
রফিক-শফিক-আসাদ আর জব্বারেÑ
হায়রে সোনার দেশের সোনার ছেলেরা
এমনি বাহান্ন-একাত্তর বুকের জমিনে ধরা
কত রক্তে গড়াগড়ি ঢাকারই শহর
কত মায়ে সন্তানহারা কাঁদে তাদের অন্তর
কত প্রিয়ার চোখের অঞ্জন মুছে যে নিল
রফিকের মৃত্যুসংবাদ গ্রামে পৌঁছিল
মা তার বোবা; পিতা হলো নির্বাক
প্রিয়তমার কঠিন পথ একার হয়ে গেল…
কী করেছে কবে এ দেশ রফিকের জন্য?
ধুঁকে ধুঁকে মরল পিতা, মায়ের দুঃখের জীবন।
মুখে আমরা বলি সবে ভাষার মাসে
রফিকেরা দিয়ে গ্যাছে প্রাণ অনায়াসে।
নিয়েছে কী খবর কেউ, রফিকের মায়ের?
পুত্রহারা মায়ের বুকের জখমের?
খেয়েছে কি মা তার, নাকি আছে অনাহারে?
করছি মিছিল পরছি রঙিন শাড়ি ও পাঞ্জাবি
রফিকের প্রিয়ার নাকে আছে
কি নাকচাবি?
কত কবি কত গল্পকার কত ঔপন্যাসিক।
বাংলা ভাষায় দক্ষ তারা, সুজন রসিক।
এই বাংলা যারা দিয়ে গেল
বলো কিছু তাদের কথা বলো…!
নিউ ইয়র্ক।
চোখের নীরব ভাষা পড়ে
সঞ্চয় দেবনাথ
মন জানি কী বোঝে!
তবে আমার মন যে তোমায়
প্রতিদিনই খোঁজে।
তোমায় খোঁজার অনেক মানে
এই প্রকৃতি জানে,
সাদামাটা এই জীবনের
গল্প তোমার প্রাণে।
মুরগি পোষো খুব আহ্লাদে
আদর-যত নিয়ে,
কারও দুঃখে এই স্বভাবে
যাও তো এগিয়ে।
আমিও যে মিশতে চাই
স্বপ্নঘেরা মনে,
তোমার ভালোবাসার ওই
নীল নির্জনে।
মাটির ঘরে তাই তো এখন
ইচ্ছেগুলো নেচে,
পরম সোহাগে তোমার-আমার
হৃদয় জেনেছে।
বাংলাদেশ।
কে প্রথমে?
ডক্টর ওয়াল্টার দিলু বিশ্বাস
বন্ধু,
অতি প্রাণপ্রিয় মহান ভাষা দিবসের চেতনায়
উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি আমাকে প্রশ্ন করছিÑ
কে প্রথমে? ভাষা না ধর্ম?
আমি একজন ধর্মতত্ত্ববিদ, তাই বলে ধর্মকে
অনর্থক স্বার্থের কারণে প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার
দিয়ে সত্যকে গ্রাস করি না হিংসা জন্মাতে।
আমি জ্ঞান ও বুদ্ধি দ্বারা জানি যে, আমার
জন্মলগ্নে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেনের
প্রয়োজন ছিল সর্বপ্রথমে, তার পরে সেবা-যতœ,
স্তন্যপান, খাবারদাবার…এবং ভূমিষ্ঠ হবার পরে
কোনো এক ক্ষণে আমার মুখ নির্গত এক অক্ষরের
প্রথম সুমধুর বাণীটি ছিল ‘মা’ মাতৃভাষাতে।
জাতি বোবা হয় ভাষা ব্যতিরেকে;
জাতি গান হয় ভাষার মহিমাতে।
তাই আমি ধর্মগুরু হয়েও নির্দ্বিধায় ঘোষণা করছি
‘ও আমার ২১-এর রক্তাক্ত বাংলা ভাষা,
তুমিই প্রথমে,
আমি পরে কি শেষে।’
আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ…
সুব্রত চৌধুরী
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, দূষিত শরীরটাকে শুদ্ধ করি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, তাপদগ্ধ দেহটাকে শীতল করি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, কাদা পানিতে লুটোপুটি খাই
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, মনময়ূরী হয়ে পেখম মেলি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, মনঃস্তাপে পোড়ামনের আগুন নেভাই
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, খরতাপে পোড়া সোঁদা মাটির গন্ধ শুঁকি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, হংসযুগল হয়ে জলকেলি করি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, ভেলায় চড়ে উজান পানে ছুটি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, ব্যাঙকুলের গজল শুনি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, দেয়ার গুরুগম্ভীর গর্জন শুনি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, বিজলি নর্তকীর নাচন দেখি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, শরীরের উষ্ণতা ভাগাভাগি করি
চলো বৃষ্টিতে ভিজি, ভিজে ভিজে শুদ্ধ হই, শুদ্ধ হই…!
আটলান্টিক সিটি।
মায়ের ভাষা
আবুল বাশার
বাংলা আমার মায়ের ভাষা
আমার প্রথম বুলি
দুঃখে-সুখে এ ভাষাতেই
মনের কথা বলি ॥
এ ভাষাতে লিখি-পড়ি
এ ভাষাতেই গাই
এ ভাষাতে মায়ের আদর
বাবার স্নেহ পাই ॥
বায়ান্নতে এ ভাষাতে
শত্রু হানা দেয়
রফিক-জব্বার সালাম-বরকত
জীবন কেড়ে নেয় ॥
তারা হলেন ভাষাশহীদ
বিশ্বে প্রথমবার
বিশ্ব ভাষার গৌরব পেল
মায়ের ভাষা আমার ॥
বাংলা ভাষার টানে
সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী
আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনে
বুকের রক্ত ঢেলে সেদিন বায়ান্নে
ইতিহাসে রেখেছেন নাম চিরজাগ্রত…
সেই সব বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা গভীর
পাক সেনার শাসনে জ্বলে আগুন জ্বলে…
রাজপথ কেঁপে ওঠে, কেঁপে ওঠে মিছিলে
ভাষার দাবি, প্রাণের দাবিতে আন্দোলন
শহর-গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে দুর্বার বেগে…
অবশেষে ভাষা পায় মর্যাদা বিশ্বে একুশে
আন্তর্জাতিক মর্যাদায় ভাষা হয় সিক্ত…
আমাদের দাবি, প্রাণের দাবি দেশে সর্বস্তরে
বাংলা ভাষা চালু হোক রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়…
মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার হোক
এই একুশে জয়ের আনন্দে পরিপূর্ণ…
ভাইয়ের রক্তে লাল শার্ট হোক চেতনায়
মনের আঙিনায় বিদ্রোহের আগুনের…
আমাদের ভাষা কাড়তে শকুনের ওড়াউড়ি
আজও উড্ডয়ন বিচিত্র বেশে আশেপাশে…
একুশের গান, কবিতা, ছড়া, গল্প, নাটকে
চাই ভাষা আন্দোলনের চিত্র ফুটে উঠুক
ভালোবাসায় প্রিয় বাংলা ভাষার টানে।
জয়শ্রীর সন্ধান
শফিক জামিল
কবিরা সমাজের দর্পণ
সত্য সঠিক সুন্দর পথের পথিকৃৎ,
প্রেম ভালোবাসা মমতার প্রতিভূ
দিশাহীন অন্ধজনে আলোর দিশারি;
আলো ও আশার বাণী ছড়ানো
হতাশা নিরাশার কবলে পতিত মানবতা বাঁচানো
আলো আঁধারে আবছায়ায় প্রেতাত্মার মুখোশ উন্মোচন;
এমনি মহতী কাজের গুণী হওয়াই হবে সত্যিকার কবির দর্শন;
বার্তা দেবেÑ অলসতা অবহেলা উদাসীনতা উচ্ছন্নতা নয় মানব
সজাগ সাবধান সচেতন হও শীঘ্র আসছে সমূহ বিপদ;
কবিরা প্রবহমান করবে হাসিখুশি আনন্দধারা
সুখ-শান্তির আরোহে রচিবে গদ্য-কাব্য গীত-গাথা,
শুষ্ক মরুভূমিতে সেচবে প্রবল প্লাবিত জলধারা
ধ্বংসস্তূপের মাঝে জন্মাবে সবুজ সতেজ অঙ্কুর নানা;
গাইবেÑনবপ্রভাতে নববারতা তীব্র নিনাদে জীবনের জয়গান,
আনবেÑআঁধার-পাথারে তিমিরহারা দীপ্ত ঝলকে ধূমকেতুর আগমন;
এমন হবে না কলম হাতে আঁধার পথের যাত্রী বনা
এমন হবে না গড্ডলিকা প্রবাহে খড়কুটোর কর্তা সাজা
এমন হবে না হতাশা-দুরাশা হীনতা-দীনতার কথা বলা
এমন হবে না কাটা ঘায়ে লবণ-মরিচের প্রলেপ মাখা
এমন হবে না পাপ তাপে ন্যুব্জ সমাজের কীট হওয়া;
আপনার মনের বিভ্রান্তি রেখে দেন মনে পুষে নিভৃতে
দুঃখ বেদনা শোক তাপ আপনার একান্ত নিজের জেনে,
মানুষের কাজ
দুঃখ-কষ্ট শোক-তাপ জরা-মৃত্যু মাড়িয়ে শত শত
অকুতোভয় সৈনিক যোদ্ধা সেজে সম্মুখ পথে আগুয়ানে রত
নিরাশা দুরাশার বেড়ি ভেদে এক এক
দুর্বার দুর্দমনীয় সংগ্রামে সচেষ্ট প্রয়োজনে করবে যুদ্ধ;
পিছনপানে হাঁটবে না কারুকে পিছন দিকে টানবে না
অনিষ্ট অমঙ্গলে দমবে না নাছোড় পাকে পরলেও না
আত্মগ্লানি আত্মহননে সঁপবে না শক্ত জালে জড়ালেও না,
দৃঢ়চিত্তে শক্তহস্তে ধরে রইবে অটুট অক্ষত সঠিক রজ্জু;
কবির উচিত হবে রতেœর যত জয়শ্রীর সন্ধানে চলা
সত্য সঠিক সুন্দর তাহাই হবে কেবল কবির প্রতিপাদ্য,
কবির উচিত হবে না নেতি-ক্ষতি ও মন্দের চর্চায় মাতা
অহেতুক অনর্থক বুলি বেচাকেনায় রবে না কবি রত।
নিউ ইয়র্ক।
দুটি ছড়া
মোহাম্মদ মুকিত চৌধুরীর
সিলট
সিলট ছিল গৌরগোবিন্দের
সিলট শাহজালালের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট শাহ পরানের।
সিলট আমার সিলেট তোমার
সিলট চাঁদনীঘাটের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট ব্রিক লেনের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট লন্ডনিদের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট ওজন পার্কের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট ডেট্রয়েটের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট টিলা-পাহাড়ের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট চা-বাগানের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট চুঙ্গা বাঁশের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট লেবু-আনারসের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট পাথর-গ্যাসের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট সাতকরার।
সিলট আমার সিলেট তোমার
সিলেট হলো কমলার।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট মাধবকু-ের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট জাফলঙের।
সিলট আমার সিলট তোমার
সিলট বাংলাদেশের।
দেশের তরে
দেশ আছে দেশি নাই
দেশি মুরগির দাম আছে
দেশি মানুষের মান নাই।
বঙ্গবন্ধুর মান বাড়–ক
ভাসানীর স্বীকৃতি নাই।
ক্ষমা তারা চায় নাই
বাংলাদেশের বুকে কোনো
হারামির দাম নাই।
মোদের সুখ আছে
তো শান্তি নাই,
হাহাকারের সীমা নাই
দেশ ছেড়ে বিদেশ যেতে
ভাই/বোনের অভাব নাই।
মানুষ আছে পুষ্টি নাই,
ফলের বাজারে গেলে
ফরমালিনের ফল পাই।
অতিমাত্রায় ফরমালিন
দেখার কেউ নাই।
টাকা আছে দাম নাই
ধনী লোকের শান আছে
গরিবের মর্যাদা নাই।
রাজনীতিকদের হায়াত আছে
বাঁচার নিরাপত্তা নাই।
বঙ্গবন্ধু-জিয়াউর রহমান
হায়াত পুরে মরে নাই।
জেল আছে জুলুম আছে
নষ্টের গোঁড়ার বিচার নাই
প্রমাণের তা সুযোগ নাই।
বেকার আছে কাজ নাই
রোগী আছে চিকিৎসা নাই।
চিকিৎসা বিল প্রদানে
জমি কেনার ক্রেতা নাই।
স্বাধীনতা আছে কিছু
বাকস্বাধীনতার মূল্য নাই
সুনীতির মূল্য নাই।
শিক্ষা আছে শিক্ষিত আছে
অতি লোভীর অভাব নাই।
দুর্নীতি আছে নীতি নাই
ঢালাওভাবে দুর্নীতির
আজও কোনো বিচার নাই।
অতীত ছিল বর্তমান নাই,
বর্তমান আছে ভবিষ্যৎ নাই।
সোনার বাংলার জনগণের
দুশ্চিন্তার শেষ নাই।
আসুন মোরা সবাই মিলে
দেশকে বিদেশ বানাই।
দেশের তরে সকলের
বাঁচার অধিকারটাই চাই।
নিউ ইয়র্ক।
বাড়ি
মালিপাখি
রূপসা নদীর সাঁকো!
বললে ও ভাই আজ সারা দিন আমায় তুমি আঁকো!
যেই এঁকেছি নদীর দু’কূল, যেই এঁকেছি পাখি,
অমনি দেখি হাজার নাচের রাখি…!
ভালোবাসার ফুল হয়ে সব বললে কাছে এসে!
আজ চলো যাই নতুন গানের দেশে…!
দেশ মানে কি আকাশ, নাকি যা খুশি হয় ডাকো?
আলো আশার হাত দুটিকে বুকের ওপর রাখো!
হাতছানি দেয় রূপকথা আর তাল-তমালের সারি!
সেই তো আমার ধান পতাকা বাড়ি…!
কৃষ্ণনগর, নদীয়া, ভারত।
চেতনায় পুষ্পহার
সৈয়দা রাজিয়া বেগম
দোর খুললেই পায়রার মতো উড়ে উড়ে আসে একমুঠো ভোর
তখন সোনামুখী রোদেরা আল্পনার কারুকাজে হৃদয়ে আঁকে তুলির আঁচড়।
সবুজ পাতায় জড়ানো মোড়ানো ঋদ্ধ প্রকৃতির রূপায়ণে,
চারুময় দেশটি উঠে আসে দিনরাত্রি একাকার করা
তুষারশুভ্র শীতল ভূমির উষ্ণ ভালোবাসার ছায়ায়
ছড়ায় দারুচিনির ¯িœগ্ধ সুবাস মনের ভিটায়।
উজ্জ্বল তারার মতো একান্ত প্রবাসী স্বজন,
ঠিকানার জানালায় চোখ মেলে দ্যাখে আপন এক প্রিয়জন।
দ্যাখে চড়ুই পাখির মতো খুঁটে খুঁটে বর্ণমালা-অক্ষর।
তখন উদ্বেগ উত্তাল অনুভূতির প্রশান্তি
নিঃশ্বাসে প্রবাসে ফিরে পায় অন্তরের নিবাস।
ফিরে পায় ফেলে আসা লাল-সবুজ পতাকার যুদ্ধজয়ী দেশ,
অহংকারের আপন ঠিকানা বদ্বীপ বাংলাদেশ।
যে দেশটির ছন্দ হৃদয়ে নিয়ে পাড়ি দেয় সাত সমুদ্র তেরো নদী,
তখনও জানে না মনের গহিনে থাকা বেদনার বালুচর,
কখন যে হয়ে ওঠে চেতনার পুষ্পহার বিনোদনের সহোদরা-সহোদর।
উৎফুল্ল উৎসবে বুকের গভীরে মননের সীমানায়,
আবার খুঁজে পায় অন্য এক অচনো ভুবনে আনন্দিত আশ্রয়,
তার পরও মনের নিভৃতে কখন যেন বিহবল অশ্রু হয় সজল নদী ও নদ,
তখন অনিন্দ্য জোছনার শুভ্র আলোর মতো ঠিকানাই হয়ে ওঠে বাঁশ বাগানের চাঁদ।
সেই অবিশ্বাস্য ঠিকানাই যেন হয় সময়ের অনন্য অম্লান চলন্তিকা,
এভাবেই থাকে যেন পাতার বাহারে উদ্ভাসিত প্রবাসী ঠিকানা।
মৃত্যুর মহিমা
দিল আফরোজ কাজী রহমান চাঁপা
মৃত্যু আছে বলেই
জীবনকে এত ভালোবাসি।
মৃত্যু আছে বলেই
দুঃখের মাঝেও করি হাসাহাসি।
মৃত্যু আছে বলেই
জীবনের দিকে হাত বাড়াই।
মৃত্যু আছে বলেই
যন্ত্রণার মাঝে থমকে দাঁড়াই।
মৃত্যু আছে বলেই
শত্রুমিত্র ভেদাভেদ করি না।
মৃত্যু আছে বলেই
সমস্যাকে সমস্যা মনে করি না।
মৃত্যু আছে বলেই
প্রতিদিন অনবরত লিখে যাই।
মৃত্যুর পর যদি আর কখনো
এমন লেখার সুযোগ না পাই।
মৃত্যু যেন বিধাতার তৈরি
এক অনুপম শিল্পকর্ম।
দার্শনিক বোঝেন সমস্যাসংকুল
জীবনে মৃত্যুর সুগভীর মর্ম।
গেইন্সভিল, ফ্লোরিডা।
একটি প্রার্থনা
মোহাম্মদ আনোয়ার মিঞা
শেওলা ফুল, শেওলা ফুল,
প্রতিদিন ভোরে
তুমি স্বাগত : জানাও মোরে
ধবধবে সাদা তুমি সর্বদা
ফুটে উঠ কতো সুখে
এই বাংলা মায়ের বুকে।
তুফান বহে, বন্যা আসে
তুমি কিন্তু তার শহীদদের মত
রহো চির শির উন্নত
ওহে চির সুন্দরী
আমার সাথে করো মোনাজাত
হে সর্বশক্তিমান
করো বাংলাকে রহমত
রাখো তার যাত্রাপথ
সদা নিরাপদ।
-নিউ জার্সি।
ছাতা ছিনতাই
নজমুল হেলাল
আমি যাকে ছাতা বানালাম
সে সাথে তো নেয়না ;
সে তো দেখি অন্যের হাতে
রোদে আর বৃষ্টিতে দিনে আর রাতে
খোঁজ নেওয়া তো দূরের কথা
দেখা সে আর দেয়না!!
আমার ছাতা আমার নয়
আমার সাহস আমার ভয়
হয় যদি দুনিয়ায় ;
বাসবো ভালো কেমন করে
মুখের কথা শুনিয়ায়!!
-ঢাকা।
জন্মিলে মরতে হবে
মমতাজ সবুর চৌধুরী
জন্মিলে মরতে হবে থাকবে না কেউ অমর
রাজা উজির ফকির মিসকিন সবার ঠিকানা ঐ কবর।
লাখপতি কোটিপতি করোনা দাপট
গরীব ধনী সবার ঠিকানা পাঁচ হাত কবর।
গর্ব করোনা মানুষ করোনা অহঙ্কার
মাটির নিচে হতে হবে সবাই একাকার
শূন্য হাতে যেতে হবে অন্ধকার ঘরে
সঙ্গে যাবে সাদা কাফন থাকতে হবে মাটির ঘরে।
বায়ান্নর শপথ
ফরিদা শহীদ
কৃষ্ণ চূড়ার ডালে ডালে আগুন লেগেছে
সে আগুনে বাঙালির মন তেঁতেছে।
জব্বার বরকত সালামের রক্তে
রঞ্জিত হলো রাজপথ
বাংলাই মোদের ভাষা হবে
এ ছিল বাঙালির শপথ।
আকাশ বাতাস ধরণী কাঁপিয়ে
প্রাণভরে চিৎকার কমি মা- মাগো।
এ ডাক মধুর চেয়েও মধুর
সোনার চেয়েও দামী, বড়ই শ্রুতিমধুর
বাংলা মোদের ভাষা হবে
তাতে কেন এত বিরোধ?
বায়ান্নর লড়াই হল ভাষার তরে
যে ভাষায় ডাকবো মার্ক গর্ব করে
কত গুলিগোলা কার্ফু টিয়ার গ্যাস
পুলিশ রাস্তার মোড়ে মোড়ে
শ শ মানুষকে করছে নির্যাতন
জেলখানায় ভরে।
বহু মানুষ হয়েছে আহত
ভরেছে হাসপাতালগুলো
কত মায়ের বুক হয়েছে খালি
খেয়ে বন্দুকের গুলি।
একুশের এ প্রচন্ড বিস্ফোরণ থেকে
পেয়ে গেলাম আগাম বার্তা
কোন কিছু মিলবেনা আমাদের
আন্দোলন ছাড়া
ভাষা আন্দোলনের গর্ভে জন্ম নিল
মোদের স্বাধীনতার আন্দোলন।
তারই ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে
এলো স্বাধীন বাংলাদেশ।
আমার হাজার জব্বার বরকত সালাম রয়েছি
সাহস হবেনা কারুর রুখতে পারে মোদের।
নিউ ইয়র্ক।
সহজ পাঠ
অমৃতাভ দে
শীতের বাতাস টোকা দেয় দরজায়
শিশির ডাকছে উঠে পড়ো ছেলেবেলা।
খেজুরের ভাঁড়ে টুপটুপ ঝরে রস
বাড়ির উঠোনে মেঘ-রোদ্দুর খেলা।
শীত-রোদ্দুর গায়ে মেখে নিয়ে ছুটÑ
টিনের বাক্সে নকশিকাঁথাটি রাখা।
জড়িয়ে নিলাম হিমেল হাওয়ার গানে
রঙিন ফুলের পরাগরেণুতে মাখা।
শীতের দুপুর, শান্ত নদীর জলে
পানকৌড়িটি লুকোচুরি খেলে যেন…।
সাদা মেঘ বলে, পালিয়ে যাচ্ছি দূরে
মিছিমিছি তুমি আমায় খুঁজছ কেন?
ঐ দেখো দূরে ওঞ্জনা পাড়ে গ্রাম
নাগরদোলায় সেজেছে সবুজ মাঠ।
কুমোরপাড়ার গরুর গাড়িটি আজো
শীত কুয়াশায় আমার সহজপাঠ।
ভারত
তোমায় দেখিবারে
আহম আব্দুল মতিন
এতো সাজানো গোছানো এই পৃথিবী।
নয়নাভিরাম দৃশ্যপুঞ্জ চারিদিক-
সমতলভূমি, পাহাড় পর্বত, প্র¯্রবণ
মরুভূমি, মরূদ্যান, সাগর নদীমালা
হাজারো কীটপতঙ্গ, জীব জানোয়ার
জলেতে মৎস্যকুল বড় ছোট নানান প্রকার-
অগণন গাছগাছালির শ্যামলশোভা,
রং-বেরঙের শত ফুলের বাহার
ছড়ানো সুস্বাদু কত ফুলমূল
কী নিপুণ নিখুঁত এই সৃষ্টি অতুল।
হে মহান খালেক তুমিতো রয়েছো অগোচরে,
ব্যাকুল যে মন আমার তোমায় দেখিবারে।
মন মাতানো রঙে রঙিন এতোসব পাখি
কত যে সুরে গেয়ে যায় গান,
বুলবুলির শিষ, কোকিলের কুহু কুহু
বৌ কথা কও ইষ্টিকুটুম মিষ্টি সুরে
কেড়ে নেয় প্রাণ।
গোলাপ, গন্ধরাজ, চামেলী, বেলী
কেয়া, কামিলী, বকুল, শেফালী
সুবাসে পাগল করে মন,
ছড়ায় আমেজ ভুলায়ে সব
আবেশে জড়ায় জীবন।
মিষ্টি চাদর ¯ত্রিগ্ধ আলো,
মৃদুমন্ধ বাতাসে ভাসে হা¯œাহেনার ঘ্রাণ
পল্লীবালার প্রেমগাঁথা নিয়ে
দূরে শোনা যায় ভাটিয়ালী গান,
সুন্দর এই পৃথিবী করে সৃজন
তুমি যে অগোচরে;
হে মহান খালেক ব্যাকুল মন
আমার তোমায় দেখিবারে।
পৃথিবী জুড়ে প্রাণির ছুটোছুটি আর মানুষের বসবাস,
রাতের আকাশে কোটি তারা
তব সৃষ্টি মাঝে এতো কৌশল
ভেবে ভেবে ভাবুক আত্মহারা।
আসমান জমিন আর সবকিছু করে সৃজন
তুমি অগোচরে
হে মহান খালেক ব্যাকুল মন আমার
তোমায় দেখিবারে।
সেবাসৃষ্টি মানুষকে দিলে
বিবেক বিচার জ্ঞান
ভালোমন্দ বুঝিতে আর করিতে
সত্যের সন্ধান।
সূক্ষ্ম পরিমাপ আর কলাকৌশলে
বানিয়েছে এই বিশ্বজগত
চারদিকে তব কুদরাতের নিশান
সঙ্কেত তোমার উদ্দেশ্য মহৎ।
পর্বতের চূড়ায় সাদা বরফের স্তুপ
পাদদেশে তার বাদলের মেলা
রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ
সাথে চলে তার মেঘের খেলা।
সাগরের বুকে ঊর্মিমালার নৃত্য
মরুভূমিময় বালির পাহাড়,
ঊর্ধ্বে বিশাল নীলাকাশ
নি¤েœ মেলানো বনানীর বাহার
ঝিঁঝি পোকার ডাকের তরঙ্গে
মুখর গোধূলি বেলা,
আম-কাঁঠাল পাকার সময়ে
চলে ঝিঁঝির সঙ্গীত মেলা।
দূরদিগন্তে সাঁঝের সূর্য
রক্তিম আলোর আভা ছড়ায়
পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে যায় নীড়ে
পৃথিবীর বুকে ধীরে রজনী গড়ায়
পৃথিবী নিঝুম চোখে তার ঘুম
আঁধারের চাদরে লুকায় মুখ
দিনের অবসাদ হয় বিলীন
নেমে আসে ধরায় রাতের সুখ
শেষ হয়ে যায় রাতের পালা
শীতল হাওয়ায় মন যায় ভরে
প্রভাত রবির আলোর ইশারায়
জীবন জেগে ওঠে কাজের তরে;
এতো সুন্দর বিশ্ব বানিয়েছো
তুমি যে কত সুন্দর।
তোমায় দেখিতে প্রভু সদা যে ব্যাকুল
আমার এই অন্তর।
নিউ ইয়র্ক।
আমার একুশ
সবিতা দাস
একুশ মানেই আমার মায়ের মুখের প্রতিচ্ছবি/বাংলার
বর্ণমালা/একুশ মানেই শিশুর মুখের প্রথম
মধুরতম ‘মা মা’ ডাক।
একুশ মানে গল্পের ঝুড়ি,
আঙ্গিনায় ফুলে ভরা সাধের ফুলের বাগান। পদ্মে ভরা
পদ্মপুকুর/ শিরিখের ডালের পরিপাটি সবুজ পল্লব,
পাখির কুঞ্জন, তারা ভরা আকাশ, নদীর কলকল ধ্বনি,
আজন্ম ঐতিহ্যে লালিত, গৌরবে মহিমান্বিত চির সম্বোধনের -ব- ভাষা।
একুশ মানেই স্বদেশ প্রেমের বিশ্^স্ততার দায়বদ্ধতা,
ঐক্যবদ্ধ এগিয়ে চলা একুশ মানেই বসন্তের
দক্ষিণের জানালায় ফুলের গন্ধ মাতাল হাওয়া
হঠাৎ শকুনিদের থাবা ওরা কেড়ে নিতে চায় আমার
স্বাধীনতায় বেড়ে ওঠা, বাংলা মায়ের মুখের ভাষা
সেই দক্ষিণের জানালায় হঠাৎ ভেসে আসে রফিক,
সফিক, সালাম, বরকতসহ কত নাম না জানা শহীদের তাজা রক্তের
গন্ধ, ফাগুনের ¯িœগ্ধ সূর্যে জ্বলছে আগুনের ফুলকির মত
রক্তের ছাপ ছাপ দাগ ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’
এই বলিষ্ঠ চিৎকারে, প্রতিশোধের অঙ্গীকারে, অবশেষে শকুনিরা
পরিজিত চৈত্রের রোদে পুড়ে ওরা ছারখার।
আজ একুশ মানেই উর্ধ্বমুখী প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়ার
লালরঙে সাজানো স্বাধীন বাংলার আকাশে বাতাসে
ফাগুনের আগমনী হাওয়া
আজ একুশ মানেই বাংলার সোনাঝরা রোদ
সারা বিশ্বে একটি মুক্ত স্বাধীন দেশের নতুন আশা ও
আলোর আহ্বান আর একটি অমর গান
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি’।
-নিউ ইয়র্ক।
একুশের চেতনা
ফারহানা আফরোজ লিজা
একুশ আমার চিন্তা-চেতনা
একুশ আমার প্রাণ
একুশ ছাড়া নেই যে কোন
আমার ভাবনার অবসান।
একুশ আমি চোখে দেখিনি
একুশ মনে এঁকেছি
একুশ মানে প্রতিটি বাঙালির
চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত প্রাণ।
তাইতো আমরা বাংলা ভাষার রাখবো সম্মান।
একুশ মানে বাংলার দামাল ছেলের গর্বিত অর্জন
একুশ মানে সন্তানহারা মায়ের ক্রন্দন
স্বামীহারা স্ত্রীর ধুলোমাখা
পথে তাকিয়ে থাকা নিরন্তর
বাবাহারা সন্তানের আর্তনাদ।
একুশ আমার দর্পণ
একুশ আমার অর্জন
একুশ মানে মায়ের ভাষার আস্বাদন।
নিউ ইয়র্ক।
শুভ জন্মদিন
সাহেরা আফজা
সৌরভ আর রঙের বিচিত্র লাবণ্যে পূর্ণ
ফুলেল সমারোহে ফাগুন আসে
বিচিত্র অনুভবে দেয় দোলা বাঙালির জীবন
আনে বিরহ-সুখের-দুখের উপাখ্যান কত।
তারই মাঝে আসে বিশেষ এক পাওয়া
দেশ ছেড়ে সুদূর এই প্রবাসে
পাতায় পাতায় বাংলা অক্ষরে অক্ষরে
শব্দে-বাক্যে সংবাদ-সাহিত্যে
পরিশ্রমী নিপুণ সম্পাদনায় সজ্জিত
ঠিকানা নামের প্রচ্ছন্ন প্রোজ্জ্বল সার্থকতা বয়ে।
আমি সকল ভুলে প্রাণভরে
কিছুটা সময় হারিয়ে যাই বাংলা অক্ষরের সাগরে
গভীরতম ভালোলাগা অনুভূতির অতলে।
বলে উঠি আপন মনে
ও আমার বাংলা কাঙাল প্রবাসী হৃদের
তৃষ্ণা মিটানো ঠিকানা!
আমি তোমায় ভালবাসি, ভালবাসি।
শুভ জন্মদিনÑ আমার প্রিয় ঠিকানা!
পেনসিলভেনিয়া।
শীতের দিনে
সুরাইয়া হক
ঠান্ডা শীতল ঝলমলে রোদ
নেই গরমের লেশ
ভারী কোট গায়ে হাঁটছে মানুষ
দেখতে লাগছে বেশ!
কারো পায়ে জুতো
কারো পায়ে বুট।
হরেক রকম বাহারি টুপিতে
কেউবা পরেছে স্যুট।
কারো হাতে কফি
কারো হাতে চা
উড়ছে গরম ধোঁয়া
চুম্বকেই যেন মিলে স্বস্তি।
কারো হাতে চামড়ার মোজা
কারো হাতে উলের
কারো আবার মাথায় টুপি
নানা রকম ফুলের।
খাচ্ছে কেউ গরম ভাঁপা পিঠা
কেউ খাচ্ছে দুধ-চিতই মিঠা।
রাস্তার ধারের দোকানিও
ঝিম মেরে বসে আছে
হাত গুটিয়ে ভাবছে
কখন আসবে কাস্টমার!
দিন শেষে সকলেরই ভাবনা
কখন ফিরবে নীড়ে
দিনের কষ্ট ভুলে যায়
ঘরফেরা মানুষের ভীড়ে।
ঠিকানা
নূরুন্নেছা চৌধুরী রুনী
(নিবেদিত : প্রেসিডেন্ট, সম্পাদক ম-লীর সভাপতি, সম্পাদক, সাংবাদিকবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে)
প্রথম যখন আকাশ যানে
নামলাম আমেরিকা,
ভিনদেশীদের মাঝে আমি
ছিলাম তখন একা।
হেই, হাই আর থ্যাঙ্ক ইউ
সবার মুখে শুনি,
আমার তখন মস্ত বিপদ
বসে প্রমাদ গুণি।
হায়রে আমার মাতৃভাষা
আন্তর্জাতিক মান
কেউ বলে না, কেউ শিখে না
এই কি তার যান?
নির্বিঘেœ বেরিয়ে এলাম
বোবার শত্রু (সঙ্গী) নেই,
মা বলে যেই ডাকলো ছেলে
হারিয়ে ফেলি খেই।
জড়িয়ে ধরে বলি তারে
বাবা ভালো আছিস?
আমেরিকান হয়েও কি
বাংলা মনে রাখিস?
গাড়ির ভেতর ঢুকেই দেখি
স্বাদের উপহার
সেইটে ছিল অযাচিত-
ঠিকানা বাংলার!
বাংলা মায়ের সন্তানেরা
যারাই জ্ঞানী গুণী
লালন কর ঠোঁটের ভাষা
(যেমন) তৃষ্ণা মেটায় পানি।
নিউইয়র্ক
বাজাই পাতার বাঁশি
হোসাইন কবির
প্রস্থানের ঘণ্টাধ্বনি নিয়ত বাজে,
পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে ক্লান্তিহীন রোদের প্লাবনেÑ
নিঃসঙ্গ এবং একা।
দিন শেষে ঘুম নামে সমতলে কিংবা
অপর গোলার্ধে রোদেলা আকাশে।
আহা পাতা ঝরার গান!
আমিও এক পাতার বাঁশি,
বাজাই প্রস্থানের গান নিঃসঙ্গ মাঠে
অক্ষম অক্ষরের বিলাপেএ-পারেতে।
কে যেন! ও-পারেতে ওড়ায়
রঙের ফানুস বেদনায় নীল, নীলাভ প্রশান্তিতে।
দূরের রাখাল বুঝি!
একা আজো মেঘের মাদল বাজায়,
জলহীন মাঠে শোকার্ত জোছনায়।
প্রস্থানের ঘণ্টাধ্বনি নিয়ত বাজে,
পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে ক্লান্তিহীন রোদের প্লাবনে
নিঃসঙ্গ এবং একা