ঠিকানা রিপোর্ট : বাংলাদেশি কমিউনিটির অতিপরিচিত ৯ মুখের উদ্যোগে জ্যামাইকায় শুরু হলো রিলায়েবল হোম কেয়ার সার্ভিস। উদ্যোক্তারা হলেন আতাউর রহমান সেলিম, কাজি সাখাওয়াত হোসেন আজম, কামরুজ্জামান কামরুল, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, জে মোল্লা সানী, আব্দুল মান্নান, নওশেদ হোসেন, ইফতেখারুল আলম অভি ও মুন্সী এনায়েত হোসেন। তাদের লক্ষ্য কেবল ব্যবসা নয়, কমিউনিটির মানুষকে সেবা দেওয়া। ২০১৯ সালে লাইসেন্স পেলেও করোনা মহামারির কারণে জোরালোভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে পুরোদমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে এর লাইসেন্স নিয়েছিলেন কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম ও আতাউর রহমান সেলিম। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাকি সাতজন। তাদের প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। তারা নয়জনই এখন হোম কেয়ারটির পরিচালক। এর মধ্যে মুন্সী এনায়েত হোসেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন স্টাফ। যাত্রা শুরুর পরপরই তারা দুই শতাধিক রোগী পেয়েছেন, যারা সেবা নিতে প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। কমিউনিটির আরো মানুষ সেবা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

গত ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে জ্যামাইকার ১৬২ স্ট্রিটে রিলায়েবল হোম কেয়ার সার্ভিসের অফিস আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) প্রধান ইমাম ও খতিব মাওলানা আবু জাফর বেগ এর উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সাফল্য কামনা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যতম পরিচালক জে মোল্লা সানী। তিনি সকল পরিচালককে পরিচিত করিয়ে দেন। এ সময় উদ্যোক্তারা রিলায়েবল হোম কেয়ারের শুরু, কার্যক্রমের সূচনা, বর্তমান অবস্থাসহ সবকিছু তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত নয় উদ্যোক্তার আটজন প্রতিষ্ঠানটির আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সেবার বিষয়টি কমিউনিটির মানুষের কাছে তুলে ধরতে উপস্থিত সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
পরিচালকেরা জানান, ২০১৯ সালে রিলায়েবল হোম কেয়ার সার্ভিস সেন্টারের লাইসেন্স নেওয়া হয়। নিউইয়র্ক স্টেট এই অনুমতি দেয়। লাইসেন্স নেওয়ার পরও করোনার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পরিচালকেরা জানান, আমরা এই হোম কেয়ার সার্ভিস জ্যামাইকায় শুরু করেছি। আমাদের লাইসেন্সের অধীনে মোট ছয় ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান ও সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা সেগুলো এখনই করছি না, ক্রমান্বয়ে করব। শুরুতে হোম কেয়ার সেবাটি পাঁচ বরোতে করতে চাই। কেবল বাংলাদেশি কমিউনিটি নয়, অন্যান্য কমিউনিটির মানুষেরও সেবা দিতে চাই।

পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, আমি হোল সেল ব্যবসা করি। পাশাপাশি এখন হোম কেয়ারে সম্পৃক্ত হয়েছি। আমি মনে করি, বাংলাদেশি কমিউনিটি আরো গ্রো করছে। সে জন্য আমাদের আরো সাপোর্ট বাড়াতে হবে। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে হোম কেয়ার ব্যবসা পরিচালনা করতে চাই।
মো. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। দু-তিনটি ব্যবসা আছে। এর মধ্যে খামারবাড়ি আছে জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকায়। সিকে ফ্রোজেন ফুডস, আইল্যান্ড ফ্রেশ করেছি। দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটির জন্য কাজ করছি। এখন হোম কেয়ারের সঙ্গে জড়িত হলাম।
নওশাদ হায়দার বলেন, আমি একজন ববসায়ী। অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি হোম কেয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলাম। এই সেবামূলক ব্যবসার মাধ্যমে আমরা আরো বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারব।
আতাউর রহমান সেলিম বলেন, আমরা আগেই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম। তবে চালু করার জন্য সময় নিচ্ছিলাম। ৩২ বছর ধরে নিউইয়র্কে আছি। আমরা নয়জন এক হলাম এবং এটি চালু করলাম। আমরা মিলিয়নার হওয়ার জন্য এখানে আসিনি। আমরা এই হোম কেয়ারের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিতে চাই। পাশাপাশি অসহায় ও দরিদ্র মানুষকেও কিছু সহায়তা দেব।
আব্দুর রহমান বিশ্বাস বলেন, আমরা সবাই ব্যবসায়ী। আমি হোলসেল ব্যবসার সঙ্গে আছি। কামরুল ভাই আমাদের কনভিন্স করেছেন। একটি শুভ লক্ষ্য ও সেবার মানসিকতা নিয়ে এটি শুরু করেছি। তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
জে মোল্লা সানী বলেন, আমরা হোম কেয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি, এটি বড় পরিসরে করা দরকার। এখানে নয়জন আছি। সবাই যার যার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করছি। আমাদের স্ত্রী-সন্তানেরাও অনেক সহায়তা করছেন। সে জন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রধান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মুন্সী এনায়েত হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মিডিয়া বা গণমাধ্যম হলো একটি আধুনিক ও গতিশীল সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং, মিডিয়ার সহায়তা ছাড়া এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান এগোতে পারবে না। প্রবাসে কমিউনিটি বিনির্মাণে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমরা প্রত্যাশা করছি, নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ঘিরে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের যে কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি, সে ক্ষেত্রে আপনাদের সব রকম সহযোগিতা পাব।
মুন্সী এনায়েত হোসেন আরো বলেন, নিউইয়র্ক স্টেট তথা যুক্তরাষ্ট্রের সব অঞ্চলের মতোই এখানকার বাংলাদেশি-আমেরিকান জনগোষ্ঠীকে ঘিরে আরও বেশ কিছু হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই কাজ করে আসছে। তবে চাহিদার তুলনায় হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখনো পর্যাপ্ত নয়। এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ আমাদের কমিউনিটিতেই রয়েছেন, যারা কেবল প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো সঠিকভাবে না জানার কারণে নিজেদের আইনানুগ প্রাপ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বাস্তব চিত্র যথাযথভাবে উপলব্ধি করেই আমরা কয়েকজন উদ্যোক্তা সম্মিলিতভাবে রিলায়েবল হোম কেয়ার সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তিনি বলেন, হোম কেয়ার সেবা গ্রহণ বা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত মেডিকেইড, মেডিকেয়ার, পিসিএস, পিসিএ, সিডিপ্যাপ, সিডিপিএএস, এমএলটিসি এনরোলমেন্ট ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা নেই। কোথায় কিংবা কার কাছে গেলে এসব বিষয়ে পরিষ্কার ও নির্ভুল তথ্য বা ধারণা পাওয়া যাবে, সেটা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি ও সংশয়। এসব বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব। এ লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।