এম এস হক : সর্বগ্রাসী করোনার প্রথম দফা সংক্রমণ মাঠ ছাড়ার আগেই দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে গোটা বিশ্ব সয়লাব হয়ে গেছে। শীতের সাথে সাথে করোনার দ্বিতীয় দফা প্রলয়নৃত্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং চিকিৎসকেরা বিস্ময়বিমূঢ় ও হতভম্ব। যতই আশাবাদ ব্যক্ত করা হোক না কেন ২০২১ সালের মাঝামাঝি ছাড়া করোনার ভ্যাকসিনও সহজলভ্য হচ্ছে না। তাই গোটা দেশ শাটডাউনসহ নানা অনভিপ্রেত আতঙ্কে আমেরিকানরাসহ বিশ্ববাসী বহুলাংশে দিশেহারা। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ কোটি ৩৩ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ১১ লাখ ৭০ হাজার অতিক্রম করেছে। আর আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৮৭ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আমেরিকার ৩৫টি স্টেটে করোনা সংক্রমণের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। বর্তমানে গড়ে ৮০ হাজার লোক আক্রান্ত এবং সহস্রাধিক মারা যাচ্ছেন। আমেরিকায় সাড়ে ৫ সপ্তাহে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক পরিচালক ড. স্কট গটলিজ। ২৫ অক্টোবর সিএনবিসিকে ড. গটলিজ আরও বলেন, আমেরিকায় অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে ন্যাশনাল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যাট বেয়লর কলেজ অব মেডিসিনের ডিন ড. পিটার হটেজ বলেছিলেন, চলতি সপ্তাহ থেকে আমেরিকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ হাজার লোক করোনায় নতুনভাবে আক্রান্ত হবে। হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক ড. ডেবরাহ বাইরক্স বলেন, শীতল আবহাওয়ার কারণে এবং অভ্যন্তরীণ সমাবেশের কারণেই বর্তমানে আমেরিকায় আশঙ্কাজনক হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। আর চিফ অব স্টাফ বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের সামর্থ্য হোয়াইট হাউসের নেই। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ছোঁয়াচে রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হোয়াইট হাউসের করোনা টাস্কফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, সামনের মাসগুলোতে আমেরিকানদের জন্য কোনো সুখবর নেই। ২৫ অক্টোবর ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক ড. ক্রিস মুরে বলেন, আগামী ৩ মাসে করোনা মহামারিতে আমেরিকায় কমপক্ষে ১ লাখ ৪০ হাজার লোক প্রাণ হারাবেন। তার বর্ণনা অনুসারে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা মহামারিতে আমেরিকায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫ লাখ ১১ হাজার ৩৭৩। তবে আমেরিকানরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, বিশেষত ৯৫ শতাংশ আমেরিকান মাস্ক ব্যবহার করলে কমপক্ষে ১ লাখ আমেরিকান মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তিনি আরও বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ আমেরিকান মাস্ক ব্যবহার করেছেন। তাই মৃত্যু এড়াতে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই বলে দাবি করেছেন ড. মুরে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুরো শীতে আমেরিকানদের উচিত মাস্ক ব্যবহার করা। এদিকে ইউরোপে করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে আগে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হতো ৯ হাজার ৭২৯ জন, এখন আক্রান্ত হচ্ছে ১৯ হাজার ২৯০ জন। চেক প্রজাতন্ত্রে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হচ্ছে গড়ে ১০ হাজার ৫৭৯ জন। নেদারল্যান্ডস এবং সুইজারল্যান্ডেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
চাকরি ছাড়ছেন ২৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারী : করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৫ শতাংশ ফুলটাইম বা পার্টটাইম কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী আত্মরক্ষা এবং পরিবারের সদস্যদের রক্ষাকল্পে কাজ ছাড়ছেন। করোনার প্রথম দফা আঘাতে আমেরিকার কোটি কোটি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। আর নতুন করে করোনা সংক্রমণের ভয়ে ২৫ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি ছাড়ছেন বলে জানিয়েছে সফটওয়্যার কোম্পানি এসএপির সহযোগিতায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-নর্ক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ প্রতিবেদনে। ১ হাজার ১৫ জন ফুলটাইম ও পার্টটাইম কর্মচারীর ওপর জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থার সিনিয়র ফেলো মার্জরি কনলি বলেন, বাইরে কর্মরতদের ৭০ শতাংশ ধারণা করেন, বাইরে যাতায়াতের ফলে তাদের করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, তারা ইতিমধ্যে কাজের ঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছেন এবং ২০ শতাংশ বলেন, তারা বিনা বেতনে ছুটির জন্য আবেদন করেছেন। কাজ ছাড়তে আগ্রহীদের ৫০ শতাংশ নারী ও ৩৬ শতাংশ পুরুষ। আর কৃষ্ণকায় কর্মচারীদের ৬২ শতাংশ, হিস্পানিকদের ৪৭ শতাংশ এবং শ্বেতাঙ্গদের ৩৯ শতাংশ করোনা মহামারিকে তাদের জীবনে ভয়াবহ চাপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, স্কুল এবং ডে কেয়ার সেন্টার বন্ধ থাকার কারণে হিস্পানিক ও কৃষ্ণকায় নারীদের সন্তানদের সঙ্গ দেওয়ার জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করছেন।