করোনা বাড়ছে ভ্যাকসিন আসছে

শিতাংশু গুহ : কোভিড-১৯ আবার বাড়ছে। কেউ বলছেন- দ্বিতীয় ঢেউ; কেউবা বলছেন- তৃতীয় ঢেউ। প্রশ্ন হলো, ঢেউ কি আসতেই থাকবে? দেশে দেশে ‘লক-ডাউন’ ঘোষিত হচ্ছে। নানা বিধি-নিষেধ আরোপিত হচ্ছে। মানুষ আবার ঘওে ঢুকে যাচ্ছে। নভেম্বর মাস, শীত নামছে, ভয়
করোনা বাড়ছে ভ্যাকসিন আসছে বাড়ছে। ভয়ের মধ্যেই আশার ঝলকানি হলো- ভ্যাকসিন এসে যাচ্ছে!
ইউএস ফেডারেল ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম প্রধান মনসেফ সালাউই সিএনএন-কে গত ২২ নভেম্বর জানিয়েছেন, মধ্য-ডিসেম্বর নাগাদ ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু হবে। গত শুক্রবার (২০ নভেম্বর) ফাইজার এবং বায়ো-এনটেক ফুড ও ড্র্যাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-র কাছে ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন চেয়েছে। ওষুধ কোম্পানি বলেছে, তাদের ভ্যাকসিন ৯৫% কার্যকর।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি/এস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিনও আসছে। ট্রায়াল বলছে, এটি আপাতত ৭০% কার্যকর দেখানো হলেও তা বেড়ে ৯০% হবে। বাড়তি লাভ, এটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করবে। বৃটিশ সরকার ইতিমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন অর্ডার করেছে। ২০ হাজার মানুষের ওপর এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো চলছে।
ফাইজারের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রিতে রাখতে হবে। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের জন্যে তা প্রয়োজন হবে না, এটি সাধারণ ফ্রিজে রাখলেই চলবে। হয়তো এজন্যে এটি বিতরণ সহজ হবে! মর্ডানার ভ্যাকসিন ৯৫% কার্যকর, এটি মাইনাস ২০ ডিগ্রিতে রাখতে হবে। ৩০ হাজার ভলান্টিয়ারের ওপর এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
গামালেয়া (স্পুটনিক ভি) ভ্যাকসিন ৯২% কার্যকর। এটিও সাধারণ ফ্রিজে রাখতে হবে। প্রতিটি কোম্পানির ভ্যাকসিনের ডোজ দু’বারে নিতে হবে। কোম্পানিভেদে তা তিন বা চার সপ্তাহের ব্যবধানে নিতে হবে। ফাইজারের ভ্যাকসিনের তেমন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। জনসন কোম্পানি ৩০ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালাচ্ছে।
চীনের উহান ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজিকেল প্রোডাক্ট ও সিনোফার্ম এবং রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্স ইনস্টিটিউট-এর ভ্যাকসিনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যদিও চীনের প্রতিষ্ঠান ‘সিনোভ্যাক’-এর ট্রায়াল স্থগিত রয়েছে, কারণ সম্ভবত একজন স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যু। এ প্রতিষ্ঠানটি ব্রাজিলে এদের ট্রায়াল চালায়। এরপর একটি বড় প্রশ্ন- কে বা কারা প্রথম ভ্যাকসিন পাবেন?
বয়স্ক মানুষ কোভিডের প্রথম শিকার, তাই হয়তো তারা ভ্যাকসিন পাবার দাবিদার প্রথম সারিতে। যে এলাকায় বেশি ছড়াচ্ছে, তারা অগ্রাধিকার পাবেন। দেশে দেশে ভিন্ন ভিন্নভাবে হয়তো অগ্রাধিকার নির্ধারিত হবে। ইংল্যান্ডে ওল্ডার কেয়ার হোমের বাসিন্দা ও স্টাফরা তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। এরপর আছেন স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল স্টাফ এবং যাদের বয়স ৮০+ তারা।
ভ্যাকসিন এলেই কি করোনা চলে যাবে? সম্ভবত না। তাই সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমত, করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ হতে হবে। এরপর প্রশ্ন- এটি দেহে কতদিন কার্যকর থাকবে? বিশ্বের ৭ বিলিয়ন মানুষের জন্যে কতগুলো ডোজ লাগবে? দেশে দেশে ওষুধ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠা কে এটি অনুমোদন দিতে হবে। এদের প্রত্যেকের ক্রাইটেরিয়া ভিন্ন ভিন্ন।
গবেষকরা বলছেন, ভ্যাকসিন সঠিকভাবে কাজ করলেও বিশ্বের ৬০-৭০% মানুষকে ইমিউন করতে হবে। তারপরের প্রশ্ন, ভ্যাকসিন কি সবাইকে রক্ষা করবে? বিষয়টি তা নয়। ইতিহাস বলে, বয়স্ক মানুষের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ায় ভ্যাকসিন প্রায়শ কাজ করে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাক্তারের পরামর্শ মত ভ্যাকসিনের ডোজ বাড়ালে হয়তো এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
ভ্যাকসিনের দাম কত হবে? মর্ডানা বলেছে- তাদের ভ্যাকসিনের দাম হবে ২৫-৩৭ মার্কিন ডলার। ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন জানাচ্ছে, তারা মর্ডানার সাথে চুক্তিতে যেতে চাচ্ছে, যাতে ২৫ ডলারের নীচে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়।
মর্ডানা বলেছে, তেমন কোন চুক্তি হয়নি। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন বিতরণের বিষয়েও মতভেদ আছে।
পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির প্রভোস্ট ড. জ্যাকিয়েল ই ইম্যানুয়েল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিল গেট্স-র জনসংখ্যা অনুপাতে ভ্যাকসিন বিতরণের প্রস্তাবটি ন্যায়ত অসঙ্গত।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড, তাইওয়ান, বা সাউথ কোরিয়ায় করোনা নেই, মৃত্যু শূন্য। সেখানে ভ্যাকসিন দেয়ার চেয়ে ব্রাজিল, মেক্সিকো বা ভারতে করোনার প্রকোপ বেশি, সেখানে ভ্যাকসিন সুফল আনবে।
-নিউইয়র্ক।