ঢাকা অফিস : কর ফাঁকি দেয়ার দিন শেষ হয়ে আসছে। এখন থেকে কেউ চাইলেও আর কর ফাঁকি দিয়ে রেহাই পাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় কর ফাঁকিবাজদের খুঁজে বের করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শিক্ষার্থীদের দিয়ে সারাদেশে কর জরিপ চালানো হবে। এ জরিপে তারা মানুষজনের বাড়ি, গাড়ি, অন্যান্য সম্পদ এবং লাইফস্টাইলের তথ্য সংগ্রহ করবে। এরপর আয়কর দেয়ার যোগ্যদের করের আওতায় আনা হবে।
নতুন করদাতা সংগ্রহে এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর হবে বলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বেশ আশাবাদী বলে গণমাধ্যমকে বলেছেন। তিনি বলেন, দেশে সক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক মানুষ আয়কর দেন না। এসব ব্যক্তিকে করের আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে আমরা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করবো। চলতি অর্থবছরেই এ জরিপ শুরু হবে। প্রথমদিকে ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরে এ ধরনের জরিপ চালানো হবে। পরবর্তীতে দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জানুয়ারি এনবিআরের এক অনুষ্ঠানে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে কর জরিপ কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার পরামর্শ দেন। এর প্রেক্ষিত্রে রাজস্ব প্রশাসন এ ধরনের উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছি, তারা এ কাজে যুক্ত হতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা মূলত বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেবেন- ওই বাড়ির মালিক বা যারা ভাড়া থাকেন, তাদের সবার কর শনাক্তকরণ নম্বর (ইটিআইএন) আছে কিনা। কিংবা তাদের সম্পদের পরিমাণ বা লাইফস্টাইল কেমন। এর মাধ্যমে তারা একটি এ্যাসেসমেন্ট করবে। শিক্ষার্থীদের এসব কাজে রাজস্ব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান। জরিপ পরিচালনায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সম্মানী দেয়া হবে। এতে তারা আর্থিকভাবে যেমন উপকৃত হবেন, পাশাপাশি তাদের মধ্যে কর্মদক্ষতাও তৈরি হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমানে জিডিপিতে করের অবদান ১০ শতাংশ। এই হার ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এর জন্য করজাল সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই। তাই নতুন করদাতা চিহ্নিতকরণকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কেননা আমরা মনে করছি- করজালে তো মানুষকে যুক্ত করতে পারবো, রাজস্ব আয় ততো বাড়বে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এর মধ্যে কর দেন মাত্র ১৪ লাখ মানুষ। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের কর প্রদানে সার্মথ্যবান মানুষের ৬৮ শতাংশ কর দেন না।