কলেজ জীবনের হাতেখড়ি

বৈচিত্র্যময় কৈশর-৯

ড. এবিএম এনায়েত হোসেন :

কলেজ জীবনের স্মৃতি একেকজনের কাছে একেক রকম। আর বিশেষ করে তা যদি হয় গ্রাম্য স্কুল থেকে শহরের কলেজ পটভূমিকায়। আমার বেলাতেও এমন প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল।

ভাটি অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু ইতনা গ্রাম থেকে বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে মহাবিদ্যালয় বা কলেজে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে একদিন গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমাতে হলো সুদূর চট্টলায়। ১৯৬০ সালের জুলাই মাস। একটা টিনের বাক্সে পরণের একটা লুঙ্গি, একটা গেঞ্জি, পাজামা আর বিকল্প একটা ফুলহাতা শার্ট। সঙ্গে মায়ের তৈরি নারকেলের সন্দেশ আর নাড়ু। এ সবই আবার মেজবু, দুলাভাই ও ভাগ্নি হাসির অত্যন্ত প্রিয় খাবার।
বিদেশ-বিভূঁয়ে আমার এটা প্রথম যাত্রা বিধায়, বাবা আমার সঙ্গে কাউকে না কাউকে পাঠাতে চাইছিলেন। শেষে আমার সফরসঙ্গী হলেন ছোট দুলাভাই নেছার উদ্দিন আহমেদ খান। চাকরি সংক্রান্ত কোন দেন-দরবার করতে তাঁরও যাবার দরকার ছিল চাঁটগায়। আমরা প্রথমে বাড়ি থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে ইতনা বাজার ঘাটে পৌঁছাই দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে।

বাজার ঘাট থেকে একখানা টাবুরে নৌকা (ছৈ বাঁধা পাটাতন-ওয়ালা) ভাড়া করে ভরা যৌবনা মধুমতি নদীর বুকে চেপে পৌঁছলাম ভাটিয়াপাড়া রেল স্টেশন। ব্রডগেজ লাইনের ফরিদপুর-ভাটিয়াপাড়া রুটের ট্রেনে চড়ে রাত ৮টা নাগাদ কালুখালি জংশন স্টেশনে পৌঁছে গোয়ালন্দের জন্য ঢাকা মেইলে চাপলাম। ট্রেনটির বগিগুলো বেশ ছিমছাম ও উঁচু। পরস্পর জানতে পারলাম যে, ট্রেনটি ভারত সরকারের এবং পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের অধীন। শুধুমাত্র ইঞ্জিনটা নাকি পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের। ঢাকা-কলিকাতা যাতায়াতকারী যাত্রীদেরকে আনা-নেয়ার সুবিধার্থে দর্শনা রেলস্টেশনেই দু’দেশের পৃথক ইঞ্জিন বদল হয়। অবশ্য এ যোগাযোগ ব্যবস্থাটি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত চালু ছিল। পরে এ ট্রেন সার্ভিসটি বাতিল হয়ে যায়।

যা হোক, আমার প্রথম শহরযাত্রার কথায় আসা যাক। গোয়ালন্দ ঘাটে পৌঁছাতেই সকাল হয়ে গেল। প্রমত্তা পদ্মা নদীর তখন কূল-কিনারা দেখা ভার। লোকজন আর কুলি-মজুরদেরকে ঠেলে কোনরকমে আমরা দু’জনে গোয়ালন্দের স্টিমার ঘাটে ভিড়ে থাকা গাজী স্টিমারের ইন্টারক্লাশে দুটি টিকেট কেটে বসতে পেলাম। দুপুরও রাতের খাওয়া স্টিমারেই সারতে হলো। কারণ, স্টিমার ছাড়বে সেই বিকেল বেলায়, তিনটে-চারটের দিকে। সারারাত স্টিমারে বেশ ঘুমিয়েই কাটলো। ভোর ৬টা-সাড়ে ৬টার দিকে তল্পি-তল্পা গুছিয়ে নেমে পড়তে হলো চাঁদপুর ঘাটে। সেখান থেকে প্রায় মাইল খানেক পথ পায়ে হেঁটে, কখনওবা দৌঁড়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত চাঁদপুর-লাকসামের ট্রেনে উঠতে হলো। পরে লাকসাম পৌঁছে প্রায় দুপুর আড়াইটার দিকে বাহাদুরাবাদ মেইলে ট্রেনে চেপে সন্ধ্যার দিকে পৌঁছলাম চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে!

স্টেশন থেকে একটা রিকশায় চড়ে উপস্থিত হলাম ১৭৯, মোমিন রোডের ‘হাসনাবাগ’-এ। কদম মোবারকের পাহাড়টির ঠিক উল্টো দিকে মেজবুর একতলা এ বাড়িটার উপরে টিনের ছাউনি। উঁচু রাস্তা থেকে ৩-৪ ফিট নিচুতে বাড়িটির অবস্থান থাকায় বাইরে থেকে তেমনটা বুঝবার উপায় নেই যে, এখানে এমন একটা প্রশস্থ বাসগৃহ বর্তমান। তাছাড়া বাড়ির ভিতরের উত্তর দিকটায় ছিল লম্বা একটা উঠোন। পশ্চিমে একতলা দালানের তিন-তিনটি ছোট কক্ষ পর পর বিন্যস্ত। সবশেষে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত বেশ বড় আকারের একটা রসুইঘর। রসুইঘরে যেতে সবগুলো কক্ষ বরাবার টানা পাকা বারান্দা পেরোতে হয়। উঠোন পেরিয়ে কলতলা, পানির হাউজ, লাগোয়া স্নানঘর ও পরপর দুটি পায়খানা। পূর্বদিকে একটা আমগাছ ও একটা ফলবতী নারকেল গাছ। শহরে থেকেও যেনো গ্রামের স্বাদ অনুভব করার একটু ক্ষুদ্র প্রয়াস!
আমরা সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা থেকে নেমে ঘরের কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে এসে দাঁড়ালো সদা লাস্যময়ী মেয়ে হাসি।

-ও ছোট মামা! কেমন আছো?
বলতে বলতে আমাকে একরকম বুকে জড়িয়ে ধরলো। খুশিতে ও চেঁচাতে শুরু করলো
-মা! দ্যাখো দ্যাখো, কে এসেছে! মা জলদি আসো!
হাসির চীৎকারে মেজবু-মেজ দুলাভাই ও ছোট মেয়ে খুশিসহ (ভাগ্নি) কাজের লোক দু’জনও (খাজু মিঞা ও খোকা মিঞা) এসে জড় হলো বড়ঘরের দাওয়ায় (স্টিলের ফ্রেমে ঘেরা বারান্দা)। কুশলাদি শেষে আমাকে আমার থাকার ঘর, অর্থাৎ বড়ঘরের পশ্চিম কোণে অবস্থিত একতলা দালানের প্রথম কামরাটি দেখিয়ে দিলো কলেজে পড়ুয়া মেয়ে হাসি।
ভাগ্নি হাসির সাথে আমার অন্য একটা সম্পর্কও ছিল। এর সাথে একটা সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতাও যে ছিল না, তা কিন্তু নয়! গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার আগে থেকেই এর সূত্রপাত। প্রতিযোগিতাটা ছিল, আমি কার ছেলে? ভাগ্নি হাসির, না ভাতিজি লীনার (মিঞা ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে)! বয়সে লীনা ও আমি ছিলাম সমবয়সী। হাসি বয়সের দিক থেকে প্রায় বছর খানেকের বড়। দেশের বাড়িতে থাকাকালীন সময়েই একবার ছুটিতে হাসিরা দেশে এলো বেড়াতে। একই সময়ে লীনারাও বড় ভাবির সাথে গ্রামের বাড়িতে ছিল কয়েকমাস। আমি তখন সবেমাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তিলাভ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। হাসি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। লীনা পঞ্চম শ্রেণিতে। হাসি ও মেজবুর সাথে আমার মাঝে মধ্যেই চিঠিপত্রের আদান প্রদান হতো। হাসি আমাকে চিঠিতেই ‘ছেলে’ বলে সম্বোধন করতো। গ্রামে এসে সেই সূত্রেই ও আমাকে লীনার সামনে বললোÑ ‘ছোটকা আমার ছেলে। তাই তুমি আমাকে মা বলে ডাকবে!’

কিন্তু লীনা এতে আপত্তি তুললো এই বলে যেÑ ‘না, না! তা হবে কেনো? ছোট কাকা আমার ছেলে! সুতরাং সে আমাকেই মা বলে ডাকবে। কী ছোটকা! ডাকবে না?’

আমি তখন মহাবিপদে। কার মন রাখবো, তা বুঝে উঠতে পারছি না! আমি বললামÑ মাকে জিজ্ঞেস করে পরে বলবো।
বিষয়টির নিষ্পত্তি অবশ্য মাও সঠিকভাবে করতে সমর্থ হননি! তবে আমাকে এ নিয়ে পরবর্তী জীবনে বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। লীনা ও হাসির পারস্পরিক ঈর্ষাজনিত সামাজিক আচার-ব্যবহার ও বিধি-নিষেধের চাকায় পড়ে আমাকেই হতে হয়েছে পিষ্ট। আর এতে ইন্ধন জুগিয়েছেন একদিকে মেজবু, অন্যদিকে বড় ভাবি। আমি অবশ্য দু’জনকেই মা বলে সম্বোধন করে এসেছি সময় ও সুযোগমত।
দশ-পনেরো দিনের মধ্যেই এলো সেই দিন। গ্রাম্য স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ বা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। সে সময়ে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালের দিকে ভাটি অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার্থীদের জন্য কম কথা ছিল না! মেজ দুলাভাই আলতাফ উদ্দিন আহমেদ তখন চট্টগ্রাম আবগারি ও শুল্ক বিভাগের কাস্টম ও এক্সসাইজ ডিপার্টমেন্টে সুপারিনটেন্ডেন্টের পদে নিয়োজিত। গায়ে গতরে আলতাফ সাহেব একজন দশাসই সাইজের লোক। উচ্চতায় খুব একটা বেশি নয়, তবে ঠিক বেঁটেও বলা চলে না। রঙটা কালোর দিকেই।

সবচাইতে লক্ষ্যণীয় হলো তাঁর মেদযুক্ত ভুড়িটি। আর এই ভুড়ির কারণেই আলতাফ সাহেবকে সব সময় গ্যালিজওয়ালা (ফিতাওয়ালা) ট্রাউজার বা প্যান্ট পরতে হতো। সকালে নাস্তার টেবিলে আমাকে হাসিমুখে বললেন

-কী ছোটকা মিঞা! কলেজে ভর্তি হবা তো? আজ দুপুরের দিকে তৈরি থাকবা। আমি অপিস থেকে আসে (এসে) তোমারে নিয়ে যাবানে।
এ কথা শোনার পর থেকেই আমার মনটা দুরু দুরু করতে শুরু করলো। সম্ভবত সময়টা তখন আগস্ট মাস। সকাল সকাল গোসল সেরে নতুন পাজামা ও ফুলহাতা শার্ট পরে একটা ফাইলে মার্কস সার্টিফিকেট, ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দেয়া চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। বেশ কয়েকবার নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বৈঠকখানায় গিয়ে জানালা দিয়ে তাকালাম কখন দুলাভাই আসেন। মেজবু বেশ কয়েকবার অভয় দিলেন

-কীরে ছোটকা? ভয় পাচ্ছিস নাকি? তোর দুলাভাইতো সঙ্গেই থাকবেন!
-না মেজবু! আমার কোনো ভয় লাগছে না!
মাথা নেড়ে আমি জবাব দিলাম।
-তাছাড়া তুইতো ভাল ছেলে। প্রথম বিভাগে পাশ করেছিস। তোর আবার ভয় কিসের?
মেজবুর এ মন্তব্যের জবাবে আমি শুধু একটু স্মিত হাসি হাসলাম।
প্রায় সাড়ে ১২টা বা ১টা নাগাদ মেজদুলাভাই তাঁর জিপে চড়ে বাসায় এলেন। হালকা কিছু নাস্তা সেরে আমাকে জিপে উঠে বসতে বললেন। সার্টিফিকেটগুলো সঙ্গে নিয়েছি কিনা, তা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি হ্যাঁ বলে মাথা নাড়লাম। জিপে চড়ার আগে অবশ্য মেজবুকে কদমবুচি করতে ভুলিনি।

পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যেই আমরা গিয়ে পৌঁছলাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এলাকায়। লোহার গেইট পেরিয়ে পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত কলেজ অফিসের সামনে এসে দাঁড়ালো জিপটা। দুলাভাই আমাকে অপেক্ষা করতে বলে অধ্যক্ষের কামরায় ঢুকলেন। তখন অধ্যক্ষ ছিলেন ইংরেজির জাঁদরেল অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী। হালকা-পাতলা গড়ন। গায়ের রঙ ঘোর কৃষ্ণবর্ণের। তবে স্যুটেড-বুটেড এই অধ্যক্ষের মুখখানা দেখলেই বোঝা যায় যে, তিনি একজন কড়া মেজাজের লোক। চোখে পুরু কালো চশমা! ইংরেজি কবিতার ক্লাশ নিতেন আমাদের। তাছাড়া মাঝেমধ্যে সময় পেলেই তাঁকে কলেজের লম্বা বারান্দায় পায়চারি করতে দেখতাম। তাঁর তীক্ষ্ম দৃষ্টি থাকতো কোথায়ও কোনো ক্লাস ঠিকমত হচ্ছে কিনা। কোনো শিক্ষক ক্লাশে ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা!
অধ্যক্ষের কামরা থেকে দশ-পনেরো মিনিটের মধ্যেই মেজ দুলাভাই বেরিয়ে এলেন। সঙ্গে একজন উর্দি পরা দারোয়ান। দারোয়ান গাড়ির চালককে পথ দেখিয়ে দিলো কিভাবে অধ্যক্ষের উঁচু টিলা ছেড়ে পূর্বদিকে অবস্থিত তিনতলা বিশিষ্ট জীববিজ্ঞান ভবনে যাওয়া যায়। কারণ, এখাকনার নিচতলায় অবস্থিত উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কামরায় বসেছিল ভর্তিচ্ছুক প্রার্থীদের বাছাই কমিটির বৈঠক। এখানে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে দুলাভাই সোজা কামরার ভিতরে ঢুকে গেলেন। আমাকে বললেন বাইরের বারান্দায় অপেক্ষা করতে। তখন আমার বুক দূর-দূর করছে! বারান্দায় অসংখ্য প্রার্থী আর তাদের সঙ্গে আসা পরিবার-পরিজন, কিংবা মাতা-পিতা। সবাই অধীর অপেক্ষা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দোদুল্যমান, তাঁদের সন্তানটি ভর্তি হবার সুযোগ পাবে তো? হঠাৎ বাইরের গেইটে টুলের উপর বসে থাকা পিওনটি আমাকে বললো
-যান, কামরার ভিতরে যান।
আমি কিছুটা ভয় ও আকস্মিকতায় আড়ষ্ট হয়ে কামরায় ঢুকে দেয়াল ঘেঁসে দাঁড়ালাম। চেয়ারে বসা মেজ দুলাভাই বাছাই কমিটির সদস্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং বললেন
-এনায়েত খুবই ভাল ছেলে। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগের উত্তীর্ণ হয়েছে।
আমি শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
মনে পড়ে, বাছাই কমিটির সভাপতি ছিলেন পদার্থবিদ্যার প্রবীণ শিক্ষক দেওয়ান স্যার। আর ছিলেন পদার্থ বিদ্যার আব্দুর রশীদ স্যার, অঙ্কশাস্ত্রের ড. আবু সুফিয়ান স্যার এবং জীববিজ্ঞানের ড. এ কে এম ওবায়েদুল্লাহ খান স্যার। ইংরেজি বা বাংলার কোন শিক্ষক ছিলেন, তা আজ আর মনে করতে পারছি না।
আমাকে দু-একটা ইংরেজি ট্রান্সলেশন জিজ্ঞেস করলেন। আমি তার সঠিক জবাব দিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলেন চতুর্থ বিষয়রূপে গণিত না জীববিজ্ঞান নিতে চাই। আমি জবাবে বললাম, গণিত। মেজ দুলাভাইও এতে সায় দিলেন।
দেওয়ান স্যার বললেন

  • আরে ওকে আর কী জিজ্ঞেস করবেন? আলতাফ সাহেবের শ্যালক!
    সবাই হো হো করে হাসতে লাগলেন।
    দেওয়ান স্যার ভর্তির ফরম দিয়ে বললেন
  • এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি হয়ে যাও। পনেরো দিন পর থেকেই ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে।
    মেজ দুলাভাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় আমাকে সালাম দিতে বললেন। আমি স্যারদেরকে সালাম দিয়ে দুলাভাইয়ের সঙ্গে বেরিয়ে এসে জিপে চড়লাম।
    গাড়িতে বসে দুলাভাই আর কোন কথা কথা বললেন না। বাসায় ফিরে এলে মেজবু দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলেন
    -কী খবর? ছোটকার ভর্তি হলো?
    ভর্তি ঠিকই হইছে। কিন্তু তোমার ভাই ভর্তি কমিটির সামনে আমার মাথাডা হেট করে ছাড়িছে!
    -তাই না কি? ও আবার তেমন কী করলো?
  • মৌখিক পরীক্ষা দিতি গেছে। শিক্ষকদেরকে একটা সালাম দিতি হয়, তাও তুমার ভাইডারে শিখাও নাই।
    আমি কিছুটা লজ্জা ও ভুলের খেসারত ঢাকতে চেষ্টা করলাম এই বলে
  • দুলাভাই তো আমাকে আগে থেকে এটা বলেননি! আমি কী এর আগে এরূপ কোনো মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি?
    মেজবু আমার পক্ষে কিছুটা ওকালতি করতে চাইলেন
    -সত্যিই তো! ও কি গ্রামে থাকতে এসব পরীক্ষা মোকাবেলা করেছে? ওকে একটু শিখিয়ে নিতেন!
    ঘটনাটা জেনে কলেজে পড়ুয়া ভাগনি হাসি ও আমার হয়ে দুলাভাইকে আশ্বস্ত করতে চাইলো এই কথা বলে
    -মামা একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল আর কি! তাই না ছোটকা মামা?
    জবাবে আমি শুধু মাথা নাড়লাম। ব্যাপারটা আর না বাড়িয়ে এখানেই শেষ করতে চাইলাম। কারণ, জানি এ ভুলের লজ্জা আমাকে আজীবন বইতে হবে।