কাজী ইবনে শাকুর : নতুন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি ব্রেট কাভানাহ আগামী সপ্তাহ থেকে যথানিয়মে কোর্টে বসবেন। আগামী সপ্তাহের মামলা হচ্ছে, ইমিগ্রেশন বিষয়ক, উৎপাদন বিষয়ক, লায়বিলিটি এবং অস্ত্র বহনের অপরাধ আইন। গত ৬ অক্টোবর শনিবার প্রধান বিচারপতি জজ রবার্ট ও মানেক এসোসিয়েট বিচারপতি এন্থনী কেনেডী, ব্রেট কাভানাহকে শপথ পাঠ করান। কাভানাহ, অ্যান্থনি কেনেডির কেরানি হিসেবে কাজ করেন ২৫ বছর আগে। বর্তমানে কাভানাহ’র বয়স ৫৩ বছর। তার আসন হবে সর্বডানে বিচারপতি এলেনা কাগান এর পর। কাগান হার্ভার্ড ল’ স্কুলের ডিন থাকাকালীন হার্ভার্ড ল’ স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন কাভানাহকে। যদিও গত কয়েক দশকে কোর্ট রক্ষণশীল সংখ্যাধিক্য পাবে। তবে কোর্টে এখন তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলা নেই যেখানে ৫-৪ ভোট অবশ্যই প্রয়োজন।
প্রথম সপ্তাহের মামলায় কাভানাহ এমন কোনো মামলা পাবে না যেখানে বিচার প্রক্রিয়া দ্বিধাবিভক্ত হয়। এক সপ্তাহ পূর্বে সকল বিচারপতি অর্থাৎ ৮ বিচারপতি এক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বন্দীর প্রতি সহানুভূতি দেখায়। আলাবামাতে এই বন্দী ভিষণ রকমে ডিমেশিয়ায় ভুগছে। অপরাধের কথা স্মরণ করতে পারছে না। কিন্তু এই বিচারকরা সম্প্রতি পেনসিলভানিয়ায় এক প্রাইভেট জমিতে নতুন আবিষ্কৃত গোরস্তানে সরকারি প্রবেশ থাকবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল।
কাভানাহ এসব মামলার ডেলিভারেশনে অংশ নেবেন না। কাজেই তার একটা বা একাধিক মামলা ৪-৪ ভোটে টাই হতে পারে। আর যাতে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকবে। যদি কোর্ট কাভানাহর অংশগ্রহণের মাধ্যমে আবার শুনানি করতে চায় তাহলে ভিন্ন কথা। কাভানাহ যেসব মামলা তার শপথ গ্রহণের পর প্রথম শুনবে তা হলো।
১. মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) ১৯৮৪ সালের অস্ত্র বহন অপরাধ আইনের সম্পর্কে এক মামলার শুনানি হবে। আর এ আইনে ১৫ বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। যদি অপরাধী ইতিপূর্বে তিনটি সহিংস ফেলোনী দ-ে দ-িত হয়। আর এক্ষেত্রে কোনো অপরাধ ‘মারাত্মক ও ‘সহিংস’ তা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে।
২. বুধবার (১০ অক্টোবর) বিচারপতিরা অন্য এক প্রশ্ন নিয়ে শুনানি করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে কোনো কাগজপত্রবিহীন ইমিগ্র্যান্টদের ডিপোর্টেশন প্রসিডিংয়ের সময় আটক করে রাখা যাবে কি না? মামলাটি হচ্ছে ইতিপূর্বেকার ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে এমন এক ইমিগ্র্যান্ট নিয়ে। কিন্তু তিনি এখন বন্দী নয়।
৩. তাছাড়া কোর্ট আরেকটা মামলা শুনবে যা নেভি সেইলর এসবেসটেসে এর কারণে তার আহত হবার বিরুদ্ধে এক মামলা দিয়েছে। যে কোম্পানিদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা এই যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে। কিন্তু যে কোম্পানি এই এসবেসটোস বাজারজাত করেছে সে কোম্পানি এখন দেউলিয়া। তাহলে বিষয়টা কেমন হবে?
বিতর্কিত বিষয়সমূহ নিয়ে কাভানাহর অবস্থান কোথায়?
বর্তমানে সিটিং প্রেসিডেন্টকে কোন সফিনা দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না? ডেমক্রেট সিনেটর ডায়না ফেইনেস্টাইনের প্রশ্নের জবাবে কাভানাহ বলেন, তিনি কোন হাইপথেটিক্যাল প্রশ্নের জবাব দেবেন না। বিচারপতি গিনবার্গ এর অন্যান্য বিচারকরা সে ধরনের প্রশ্নের জবাব দেননি। কিন্তু কাভানাহ ১৯৭৪ সালের সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত বা প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে টেপ জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সময় তাকে সুপ্রিমকোর্টের ইতিহাস সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেন। তিনি অবশ্য প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কিনা সে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেন। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তার সে অধিকার আছে। কাভানাহ এটাকেও সিটিং জাজ হিসেবে এবং হাইপথেটিকাল প্রশ্ন হিসেবে জবাব দিতে অস্বীকার করেন।
গর্ভপাত নিয়ে কাভানাহ রো বনাম ওয়েড মামলাকে ১৯৭৩ সালের অন্যতম মামলা হিসেবে বর্ণনা করেন যা বারকয়েক পুনঃপুনঃ নিষ্পত্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে প্ল্যানড প্যারেন্টহুড বনাম ক্যাসি মামলা উদাহরণের ওপর উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। যা রো বনাম ওয়েভ এর সমাধানকে পুনরায় বৈধতা দিয়েছে। চতুর্থ সংশোধনীতে মানুষ যে তার সারাজীবনে ব্যক্তিগত চয়েস হিসেবে তা প্রয়োগ করতে পারে তাকে স্বাধীনতার কেন্দ্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কাভানাহ জুডিসিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যানকে বলেন, ব্যক্তিগত বিশ্বাস আমার মামলা নিষ্পত্তিকরণে তেমন অর্থ বহন করে না।
কাভানাহ ২০১১ সালে গান কট্রোল মামলায় তার ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া সার্কিটে কোর্ট অব আপীলে দেয়া আপত্তিকে যথার্থ বলে বর্ণনা করেন। অধিকাংশ জাজ ওয়াশিংটন ডিসি’র গান রেজিস্ট্রেশন ল’ বহাল রাখেন। এবং সেমি অটোমেটিক উইপন নিষিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, তিনি সেমি অটোমেটিক রাইফেলকে ভয়ঙ্কর অস্ত্র মনে করেন না। কাভানাহ ইমিগ্রেশন নিয়ে তেমন কোনো মামলা করেননি। তবে সীমান্তে ১৭ বছর বয়সী এক স্বদেশ থেকে পালিয়ে আসা টিনএজারের গর্ভপাত আমেরিকার অর্থে বা আমেরিকায় করা যাবে কিনা তা নিয়ে মামলায় ইমিগ্রেন্ট মহিলার বিরুদ্ধে রায় দেন।