বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোবল, বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থতার মধ্যেও চিকিৎসার ব্যাপারে তার একগুঁয়েমিতে প্রধানমন্ত্রী তাজ্জব! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্ভরযোগ্য সোর্সে জানতে পেরেছেন কারাগারে শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা দুর্গতিতে খালেদা কাহিল হয়ে পড়েছেন। এভাবে চললে আর ক’দিন পরই শারীরিক-মানসিক যন্ত্রনার তোড়ে খালেদা জিয়া আপোষের নির্বাচনে এসে আজ্ঞাবহ বিরোধীদলে বসবেন! কিন্তু বাস্তবতা উল্টা। সোর্সে পাওয়া তথ্যগুলো এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। এগুলোর প্রমাণ মিলছে না।
এর রহস্য ভেদ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেনেছেন কিছু পিলে চমকানো খবর। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার কনফিডেন্স তুঙ্গে। পুলিশ, সেনা, সিভিল প্রশাসনসহ নানা ছকের মধ্যেও বিএনপি আগামীতে বিপুল ভোটে জিতবেÑ এমন আত্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী খালেদা জিয়া। পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিস্ময়ে থ’ হবার মতো! কোন শক্তি, কোন ক্যারিশমায় খালেদা জিয়ার মধ্যে এ কনফিডেন্স ভর করেছেÑ তার রহস্য ভেদ করার বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাকে। গোয়েন্দারা এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি প্রধানমন্ত্রীকে।
ভাসা ভাসা তথ্যে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়া ভাবছেন সুষ্ঠু ভোটের নূন্যতম সুযোগ পেলেও মানুষ আওয়ামী লীগকে এবার ভোট দেবে না। এ ছাড়া, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারত-চীন আগে থেকে সম্পৃক্ত থাকলেও নতুন করে জড়িয়েছে পাকিস্তান। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ রয়েছে সাইডলাইনে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নও টোকা দিচ্ছে দূর থেকে। এসব শক্তির সঙ্গে বিএনপির হিতাকাঙ্খী মহলের নিবিড় যোগাযোগ চলছে। তারেক রহমান লন্ডনে নিয়মিত কথা বলছেন, দেনদরবার করছেন এসব শক্তির হাই-প্রোফাইলদের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বা সিএমএইচে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার বেঁকে বসার পেছনে এসবের বিশেষ যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছে সরকার। এ দু’টি হাসপাতালের ব্যাপারে সতর্ক করে বোঝানো হয়েছে, সেখানে চিকিৎসার নামে ট্র্যাপে ফেলে খালেদা জিয়াকে কব্জা করার শঙ্কা রয়েছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে খালেদা জিয়াকে এক ধরনের নিপীড়ন করা হচ্ছে বলে দাবি করে আসছে বিএনপি। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলের কাছে এ দাবির স্বপক্ষে তারা কিছু তথ্যও সরবরাহ করছে। কিন্তু সরকার থেকে তা আমলে না নিয়ে অনেকটা তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। সরকারের একটি অংশ তাকে জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বা সিএমএইচে পাঠানোর পক্ষপাতি। তবে, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত নেই।
এদিকে, মুক্তির ব্যাপারে জোরদার আন্দোলনের নির্দেশনাও দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। এটিও সরকারের কাছে রহস্যজনক ঠেকছে। এ রহস্য ভেদ ও নতুন চাতুরির অংশ হিসেবে সরকার ভর করেছে খালেদা জিয়ার কয়েকজন নিকটাত্মীয়র ওপর। তাদের অন্যতম তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সেই টার্গেটেই সরকার বিএনপি নেতাদের কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে দিতে চায় না। সেখানে উদারতা দেখানো হয় শামীম ইস্কান্দারসহ পরিবারের বাছাই করা কয়েকজন সদস্যের প্রতি!
অন্যদিকে, বিএনপির তিন নেতার ভারত সফরের মূল রহস্যও এখনো পরিস্কার নয়। সরকারের কাছে এ নিয়ে দু’ধরনের তথ্য রয়েছে। তবে, সরকারি প্রচারণায় বলা হচ্ছে ভারতের কাছ থেকে বিএনপি কোনো সবুজ সংকেত পায়নি। ভারত এখনো আওয়ামী লীগকেই চায়। এর বিপরীতে নড়েচড়ে বসেছে পাকিস্তান। দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাস বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সিক্রেট বৈঠক করেছে। পাকিস্তান দূতাবাসের দুজন পদস্থ কর্মকর্তা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে জে (অব) মাহাবুবুর রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার আমিনুল হককে নিয়ে বৈঠক করেন। পরে তারা আবারও বসেন বিএনপির দুই সিনিয়র নেতাÑ ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং মির্জা আব্বাসের সঙ্গে।
বিদেশি সংযোগের বাইরেও ড. ইউনূস, ড. কামালসহ সুশীলদের সঙ্গেও বিএনপির একটি এক্সক্লুসিভ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রতিটি উইংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আলাদা কয়েকজনকে। এসব প্রক্রিয়ার মূল সূতার টান লন্ডনে তারেক রহমানের হাতে। এ সূতার টানে নির্বাচনের আগেও দেশে কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনে স্বল্পদৈর্ঘ্য সময়ের জন্য একটি ‘অন্যরকম’ সরকার ও লেভেল প্লেইং নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যেও পক্ষ থেকেও কিছু ফর্মুলা নাড়াচাড়া হচ্ছে। বাংলাদেশে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের স্বার্থে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি হবে, নাকি স্বল্পমেয়াদি হবে- এ বিতর্কে আপাতত ঝুলে আছে বিষয়টি।