ঠিকানা ডেস্ক : পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ না করলে উত্তর কোরিয়ার পরিণতি লিবিয়ার মতো হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হলে দেশটির প্রেসিডেন্ট কিম জং উন অবশ্যই ক্ষমতায় থাকবেন। নিরস্ত্রীকরণ না মানলে তার পরিণতি লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির মতো হবে। ১৭ মে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প এ কথা বলেন।
আলজাজিরা জানায়, উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে বিগত বুশ ও ওবামা প্রশাসনের নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না বিগত দুই মার্কিন প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্পও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক সফল হলে তিনি তার সরকারকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন জুগিয়ে যাবেন। আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-কিম সম্ভাব্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়ার কারণে উত্তরের পক্ষ থেকে বৈঠকে বসার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার কথা জানানো হয়েছে। ট্রাম্প অবশ্য বলছেন, তেমন কোনো অনিশ্চয়তার কথা কিম প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসকে জানানো হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান যৌথ সামরিক মহড়ার জেরে দক্ষিণের সঙ্গে গত বুধবারের (১৬ মে, ২০১৮) শীর্ষ পর্যায়ের সংলাপ স্থগিত করে উত্তর কোরিয়া। দাবি করে, এই সামরিক মহড়া বিভক্ত কোরীয় উপদ্বীপের উষ্ণ সম্পর্কের জন্য হুমকি। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএর খবরে আগামী মাসে কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্ধারিত বৈঠক নিয়েও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করা হয়। ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বৈঠকের অনিশ্চয়তার প্রশ্নে বলেন, ‘আমাদের জানা মতে বৈঠক প্রশ্নে উত্তর কোরিয়ার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। পরিকল্পনা আগের মতো থাকলে খুবই ভালো। তবে তা একই রকম না থাকলেও খুবই সফল একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে আমাদের মধ্যে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, কিম জং তার দেশেই থাকবেন এবং দেশ পরিচালনা করবেন। তার দেশ অনেক ধনী হবে। আর যদি শর্ত না মানে, তবে মুয়াম্মার গাদ্দাফির মতোই পরিণতি হবে তার। তিনি বলেন, ‘লিবিয়ার দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে আমাদের সঙ্গে সমঝোতায় না আসার পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে।’ ২০১১ সালের অক্টোবরে পশ্চিমাদের সহায়তায় লিবিয়ার চার দশকের শাসক গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করে দেশটির বিদ্রোহীরা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত কোরিয়ার উত্তর অংশের দখল নেয়। প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক দিনগুলো পার করে ১৯৫৩ সালে সোশ্যালিস্ট পার্টি অব কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানকার ক্ষমতা অধিগ্রহণ করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত একই রাজনৈতিক দল এর শাসন ক্ষমতায় রয়েছে।
১৯৫৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিমের দাদা কিম সাং (২), ১৯৮০ থেকে ২০১১ পর্যন্ত তার বাবা কিম জং ইয়াই এবং সবশেষ ২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত কিম উনের নেতৃত্বে রয়েছে কোরিয়ার উত্তর অংশ। বিগত বুশ প্রশাসন থেকে শুরু করে বারাক ওবামা- দুই শাসনকালে উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবর্তনের কোনো নীতিগত অবস্থান নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি পূর্বসূরিদের পথেই হাঁটবেন।