কিশোরগঞ্জের হাওরে চলবে ওয়াটার বাস

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ইটনার হাওরে এবার চালু হচ্ছে ওয়াটার বাস সার্ভিস। হাওরের মানুষের জীবনযাত্রা ও যাতায়াত সহজ করার লক্ষ্যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)। বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানা যায়, হাওরের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সহজ ও মসৃণ করার জন্য এ অঞ্চলে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বর্ষা মৌসুমেই ওয়াটার বাস সার্ভিস ইটনা থেকে চামার বন্দর আসা-যাওয়া করবে। এ এলাকায় মোট ১২৭টি হাওর রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা বলেন, মূলত এলাকার মানুষের যাতায়াত সহজ করার জন্যই এখানে ওয়াটার বাস চালু হচ্ছে। দুটি ওয়াটার বাস এ পথে চলাচল করবে। ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ও ইমরান ভূঁইয়া এর চার্টার নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, হাওর এলাকা বছরের আট মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। মানুষ ট্রলারে বা হেঁটে চলাচল করে। দুইভাবেই সময় লাগে প্রচুর। তাই এখানে ওয়াটার বাস চালু হচ্ছে। এ প্রথম হাওর এলাকায় কোনো সরকারি যান চালু হচ্ছে। জলপথে এ নতুন বাহন চালু হলে মানুষের যাতায়াত আরও সহজ হবে। তিনি বলেন, আগামীতে আরও ওয়াটার বাস চালুর চিন্তাভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জ অগ্রাধিকার পাবে।
জানা গেছে, ইটনা থেকে চামার বন্দরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। এখানে ট্রলার ভাড়া ৬০ টাকা। সে ক্ষেত্রে ৮৫ আসনের ওয়াটার বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে ১০০ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, অব্যাহত লোকসানের হাত থেকে ওয়াটার বাস সার্ভিসকে উদ্ধারের জন্যই দেশের অন্য জায়গায় ওয়াটার বাস চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে গাবতলী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত দুই ট্রিপে ওয়াটার বাস চলে। টঙ্গী থেকে নারায়ণগঞ্জ আরেকটি। গাবতলী থেকে সদরঘাটের পথে চলাচলকারী এ নৌযান চালু হয় ২০১২ সালে। রাজধানীর অসহনীয় যানজট থেকে মুক্ত হয়ে মসৃণ যাতায়াতের লক্ষ্যে চালু করা হয় এ ওয়াটার বাস সার্ভিস।
সূত্র জানায়, গাবতলী-সদরঘাটের চেয়ে টঙ্গী-নারায়ণগঞ্জের পথে যাত্রী বেশি। পাঁচ বছর আগে এ সার্ভিস চালুর সময়ে ১৪টি বাস ছিল। যাত্রী নেই বলে সার্ভিস কমানো হয়েছে। যাত্রী কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, বুড়িগঙ্গার দূষণ। তা ছাড়া এর ধীরগতিও যাত্রীদের অনীহার কারণ। বিআইডব্লিউটিসি জানায়, এখন ওয়াটার বাস সার্ভিসের সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে সংস্থা নিজেই। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইজারাদারের মাধ্যমেই এ সার্ভিস পরিচালিত হতো।
ওয়াটার বাস সার্ভিস সম্পর্কে বিআইডব্লিউটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (যাত্রীবাহী সার্ভিস) শেখ মোহম্মদ নাসিম বলেন, বর্তমানে সংস্থার তত্ত্বাবধানেই ওয়াটার বাস চলছে। ইজারাদার ইমরান ট্রেডার্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা-অব্যবস্থাপনা, তেল চুরি আর যাত্রীর অভাবে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ওয়াটার বাসকে। অথচ শুধু ছয়টি বাসের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, কম যাত্রী নিয়েও ওয়াটার বাস যাওয়া-আসা করে। বড় ওয়াটার বাসের গতি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছে। বাদামতলী থেকে গাবতলী নৌপথে ৪০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। বড় ওয়াটার বাসের আসন সংখ্যা ৮৩; আর ছোটগুলোর ৩৬। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, শুরুতে দুটি বাস দিয়ে ২০১০ সালে পরীক্ষামূলক সেবা চালু হলেও অব্যাহত লোকসানের কারণে ১১ মাসের মাথায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবার চারটি ওয়াটার বাস চালু করা হয়। পাশাপাশি পুরানো দুটিও মেরামত করা হয়। এগুলো চালু করা হলেও লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ছয়টি ওয়াটার বাস ছয় মাসের জন্য ‘বুড়িগঙ্গা ফ্লোটিং’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু এক মাসের মাথায় বাসগুলো ফিরিয়ে দেয় তারা। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রতি ট্রিপে (যাওয়া-আসা) একটি ওয়াটার বাসে ডিজেল লাগে ১২০ লিটার। এক ট্রিপে জ্বালানি বাবদই ব্যয় হয় ৮ হাজার টাকার বেশি। অথচ কোনো কোনো ট্রিপে এক হাজার টাকাও আয় হয় না।