ঠিকানা অনলাইন : মিসরে কুকুর পুষলে লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে মোটা অংকের রেজিষ্ট্রেশন ফি। বিতর্ক এড়াতে ‘হাস্যকর’ একটা শর্তও জুড়ে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসির সরকার- লাইসেন্সবিহীন কুকুরকে কেবল মাত্র পাব্লিক প্লেসে আনলেই গুনতে হবে জরিমানার কড়ি। পশুদের নিবন্ধন করতে ও কলারে ধাতব ট্যাগ লাগাতে কুকুর ভেদে খরচ হবে ৩২ থেকে ১৬০০ ডলার। আইনটি ২৯ মে প্রথম খসড়া করা হয়। কার্যকর হয় ১৪ জুন। তবে পথ কুকুরদের বেলায় এ আইন কার্যকর নয়। আল আহরাম।
শুধু জরিমানা বা নিবন্ধনেই থেমে থাকেনি সরকার। পাশাপাশি ১০টি প্রজাতি ছাড়া বাকি সব জাতের কুকুরের উপর বিশেষ নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞা থেকে বেঁচে যাওয়া ১০ প্রজাতি হলো: ককার স্প্যানিয়েল, ল্যাব্রাডরস, পুডলস, ম্যালিনোইস, পোমেরানিয়ান, জ্যাক রাসেল টেরিয়ার, গ্রেট ডেনস, হোয়াইট জার্মান শেফার্ডস, মাল্টিজ ও সামোয়েডস।
অপরদিকে, সাধারণ কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচিত কুকুরের জাতগুলি হলো: পিটবুলস, রটওয়েলার, জর্মান শেফার্ডস, হাস্কিস, ককেশীয় শেফার্ডস, বুলমাস্টিফস, ডোবারম্যানস, আলাস্কান মালামুটস, গ্রেট ডেনস, আকিটাস, আমেরিকান বুলিস, আলপাইন মাস্টিফস, ডোগো আর্জেন্টিনোস, ক্যান করসোস ও টোসা ইনসোস। নিষেধাজ্ঞা শুধু কুকুরের উপর তা নয়। নতুন আইনের নিষেধাজ্ঞা আসে অন্যান্য প্রাণীদের ওপরও। অন্যান্য নিষিদ্ধ প্রাণীর মধ্যে রয়েছে, চিতা, বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার, বনবিড়াল, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বানর, কুমির, কচ্ছোপ, বিষাক্ত সাপ, নেকড়ে, শিয়াল, ভাল্লুক, পান্ডা, জলহস্তী, বন্য বিড়াল ও বন্য গাধা।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ কুকুরের পাশাপাশি অন্যান্য পোষা প্রাণীর মালিকদের নিরাপত্তা পরিদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাণী নিবন্ধন করতে হবে। নিষিদ্ধ প্রজাতির মালিকদের সরকারি লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগুলো মেনে চলতে হবে। অনিরাপদ বলে বিবেচিত কুকুরগুলো বাজেয়াপ্ত করা হবে। নতুন আইন না মানলে মলিকদের জরিমানাও দিতে হবে। লাইসেন্সবিহীন পোষা প্রাণী মানুষ বা অন্য প্রাণীর ক্ষতি করলে জেলও হবে বলে জানা যায়। আক্রমণের কারনে স্থায়ী ক্ষতি হলে নূন্যতম সাজা হিসেবে তিন বছরের জেল হবে। আক্রমণের ফলে কোনো ব্যাক্তির মৃত্যু হলে সাজা বেড়ে হবে দশ বছরের জেল। আইনের নিয়মগুলো সাজানো হয়েছে সুশৃঙ্খলভাবে। অধ্যায় ১ এর অনুচ্ছেদ ১-এ বিপজ্জনক প্রাণী ‘যা মানুষ ও অন্য প্রাণীদের ক্ষতি করে’ সেগুলোকে শ্রেনীবদ্ধ করা হয়েছে। আবার অধ্যায় ২ আইনের ধারা ৩-এ তুলে ধরা হয়- ‘বিপজ্জনক জাতিগুলোকে পাবলিক স্পেসে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ’।
মিসরে দিন দিন কুকুর প্রেমীদের সংখ্যা বাড়ছে। লাগামহীন ভাবে বাড়ছে কুকুরের বহর। নামী-দামি সব বিদেশী কুকুর। স্বভাবতই আক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে সমান তালে। বিপদে পড়ছেন পথচারীরা। আতংকে থাকছেন প্রতিবেশিরাও। ক্রমবর্ধমান এ আক্রমণের ঝুঁকি কমাতেই চলতি মাসে কুকুরকে ‘বিপজ্জনক প্রাণী’ ঘোষণা দিয়ে এই আইন করে মিসর। যেখানে বাধ্যতামূলক করা হয় কুকুরের লাইসেন্স।
মার্চে শেখ জায়েদ শহরের একটি ‘পিট বুল’ জাতের কুকুর ওই এলাকারই মোহাম্মদ মহেব নামের একজনকে আক্রমণ করে। মস্তিস্ক ছিন্ন-ভিন্ন করে তাকে কোমায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তিনি মারা যান। কুকুরটি এর আগে একই আবাসিক এলাকার আরেক প্রতিবেশীকে আক্রমণ করে। এ ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসে সরকার।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে একটি কুকুর ১১ জনকে আক্রমণ করে। যাদেরকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়। ২০১৯ সালে মিসরের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রনালয় জানিয়েছিল, চার মাসে ৬ হাজার ২৪১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো।
এসআর