ঠিকানা ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী সমালোচিত ও অমানবিক গুয়ান্তানামো বে কারাগার খোলার পথেই হাঁটলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে বিস্মিত নন। তারা মনে করেন, ট্রাম্প কারাগার চালু রাখার নিন্দেশ দিয়ে চরম মূর্খতার পরিচয় দিলেন। এ সিদ্ধান্তের কারণে অর্ধশত বন্দিকে এই কুখ্যাত কারাগারেই আঁকে থাকতে হবে। ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামা তার শাসনামলের শেষ দিকে বিতর্কিত কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওবামার পুরোপুরি বিপরীত সিদ্ধান্ত নিলেন। ওবামার সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।৯/১১ হামলার পর থেকে গুয়ান্তানামো বের স্থাপনাটিকে শত্রুপক্ষের যোদ্ধাদের আঁক রাখার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে ওয়াশিংটন। বর্তমানে ওই কারাগারটিতে মাত্র ৪১ বন্দি আছেন। ওবামার আমলে ওই কারাগারের কয়েকশ বন্দিকে অন্যান্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।এই কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া থামিয়ে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে হোয়াইট হাউসও জানিয়েছে। যখন প্রয়োজন হবে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন শত্রুপক্ষের যোদ্ধাদের এই কারাগারটিতে রাখতে পারবে বলেও জানিয়েছে তারা। গত মঙ্গলবারের স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সন্ত্রসীরা নিছক অপরাধী নয়, তারা নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর শত্রুযোদ্ধা। বিদেশে যখন তারা ধরা পড়ে, তারা যে ধরনের সন্ত্রাসী, তাদের সঙ্গে তেমনই ব্যবহার করা উচিত। অতীতে আমরা বোকার মতো শত শত বিপজ্জনক সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিয়েছি, পরে লড়াইয়ের ময়দানে তাদের সাক্ষাৎ পেয়েছি।উদাহরণ হিসেবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদির নাম উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমরা এমন ভুল করব না। আইএস, আল কায়দার সদস্যদের যেখান থেকেই ধরা হোক, তাদের জন্য গুয়ান্তানামোর দরজা খোলা থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনি সংগঠন সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল জাস্টিসের আইনজীবী ওয়েলস ডিক্সন বলেন, ট্রাম্প যদি মনে করেন, কিউবায় যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত গুয়ান্তানামো কারাগার চালু রাখলে আমরা বেশি নিরাপদ থাকব, বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শক্তিশালী হবে, তাহলে বলতেই হবে তিনি চরম মূর্খ। বাস্তবতা আসলে এর ঠিক বিপরীত। তিনি বিস্মিত নন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে। তবে তিনি মনে করেন, নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বেপরোয়া ট্রাম্প এসব এই অপকর্মে প্রবৃত্ত হয়েছেন। এ ¯্রফে মূর্খতা। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে প্রথম বন্দিদের পাঠানো হয়েছিল। তারপর থেকে সাত শতাধিক বন্দিকে ওই কারাগারটিতে রাখা হয়েছিল। এদের অনেককেই কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিনা বিচারে আঁকে রাখা হয়েছিল। কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিনা বিচারে আঁক রাখা ও বন্দিদের নির্যাতন করার অভিযোগ নিয়ে কারাগারটির বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০০৯ সালে ওবামা এক আদেশে কারাগারটি এক বছরের মধ্যে বন্ধ করার নিন্দেশ দেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের আইন প্রণেতাদের বাধার মুখে আঁ বছরেও নিন্দেশ কার্যকর করতে পারেননি তিনি।গত মঙ্গলবার স্টেট অব ইউনিয়নের ভাষণে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষকে রক্ষার তাগিদে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি সংস্কারের কথা জানান ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি ভিসা লটারি বন্ধের ওপর জোর দিয়ে মেধার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়ার পদ্ধতি চালুর আহ্বান জানান। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীরা। তাদের অনেকেই শঙ্কায় আছেন, কখন তাদের বের করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে ওবামা আমলে ডাকা কর্মসূচির মেয়াদ আগামী ৫ মার্চ শেষ হবে। এ কর্মসূচির মেয়াদ না বাড়ানো হলে অনিবন্ধিত ১৮ লাখ তরুণকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে। এই যখন অবস্থা, তখন ট্রাম্প তার ভাষণে অভিবাসন নীতি সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরে বললেন, ট্রাম্প আগামী ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে এদের নাগরিকত্ব দেওয়ার একটি পথ বের করে নেবেন। তবে তার বদলে ডেমোক্র্যাঁদের মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন ও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাবে রাজি হতে হবে।দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম বছরে নিজের নানা কর্মকাে র জেরে বিভিন্ন সময় ডেমোক্র্যাঁ এমনকি নিজ দলেও সমালোচনার শিকার হয়েছেন ট্রাম্প। তবে এবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রথমবারের মতো দেওয়া স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে নিজের নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যতে নিতে যাওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরলেন ট্রাম্প। ভাষণে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু কর্মসূচিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি উল্লেখ করে যে কোনো আগ্রাসন রুখতে মার্কিন পরমাণু অস্ত্র আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন ট্রাম্প। একই ভাষণে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস পতনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের বলে দাবি করেন।
- বিজ্ঞাপন -