কুষ্টিয়া : দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), দুটি লাইট ইমিটিং ডাইওড (এলইডি) টেলিভিশন, অতিথিদের বসার জন্য দুই জোড়া সোফাসেট এই নিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়। এই বিলাসিতার কারণে ইউএনওর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি ইউএনও মো. শাহীনুজ্জামান তার কক্ষের ডেকোরেশন করায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা বলেছেন, তবে কি তিনি ব্যক্তিগত টাকায় এসব করেছেন? নাকি অন্য কোনো উপায়ে? জেলার কর্ণধার জেলা প্রশাসক (ডিসি)। তার কার্যালয়টি অতি সাধারণ মানের। অথচ ইউএনও অতি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন কক্ষ তৈরি করে জেলাজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমারখালীতে যোগদানের পর শাহীনুজ্জামান হাট, ঘাট ও বালুমহাল ইজারায় অনিয়মে জড়িয়েছেন। গড়াই নদের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে না পারায় সমালোচিত হয়েছেন। চড়াইকোল পশু হাট ইজারা দেওয়ার আগে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। পছন্দের লোককে হাটের ইজারা পাইয়ে দিতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। এরই মধ্যে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি কার্যালয় ডেকোরেশন করেছেন।
উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত ডিসেম্বরে উন্নতমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনি তার কক্ষ ডেকোরেশন করেন। একই সঙ্গে উন্নতমানের চেয়ার, টেবিল, কর্নার আলমারি, শোকেস, বুকশেলফ স্থাপন করেছেন।
কুমারখালী উপজেলার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া টাকার একটি ভাগ উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের ফান্ডে জমা হয়। এরপর তা প্রয়োজন অনুসারে চেয়ারম্যানরা খরচ করেন। কিন্তু ইউএনও সেই টাকা ইউনিয়ন পরিষদে না দিয়ে তার কক্ষ ডেকোরেশনে খরচ করেছেন।
এ বিষয়ে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান বলেন, ‘ইউএনও সরকারি টাকায় অফিস ডেকোরেশন করেননি, এটা আমি জানি। নিজের টাকায় এটা করলেন কি না, তা জানি না। সরকারি অফিস নিজের টাকায় বা কারো সহায়তা নিয়ে এভাবে রাজকীয় ডেকোরেশন করতে পারেন কি না, সেটাও আমি জানি না। তবে এটা নিয়ে নানাজন নানা কথা বলছে, সেটা শুনেছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক সরকারি কর্মকর্তা জানান, জেলার সর্বময় কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অতি সাধারণ মানের। সেখানে একজন ইউএনওর কার্যালয় কিভাবে এত দৃষ্টিনন্দন হয়?
ইউএনও শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তিগত টাকায় এটা করিনি। ফার্নিচার কেনার জন্য সরকারি কিছু বরাদ্দ ছিল। তার সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে এই ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন করেছি। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।’
তবে চাপড়া ও সদকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যথাক্রমে মনির হাসান রিন্টু ও আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অফিস ডেকোরেশনের জন্য আমরা ইউএনওকে কোনো টাকা দিইনি। উনি যদি আমাদের কথা বলে থাকেন, তবে সেটি সঠিক নয়।’
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান রাষ্ট্রীয় কাজে ভারতে অবস্থান করছেন। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘অনেকে অনেক কিছু করেন। কিন্তু সেগুলো দৃশ্যমান নয়। সে ক্ষেত্রে ইউএনও তার রুমটি দৃষ্টিনন্দন করেছেন, হয়তো কারো সহায়তা নিয়ে। এটা সবাই দেখতে পারছে। আমার মনে হয়, এটি একটি ভালো কাজ। এটি এখানেই থেকে যাবে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখা থেকে ২০১০ সালের ৩০ আগস্ট স্বাক্ষরিত ও প্রকাশিত ‘মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও সরঞ্জামে’র তালিকায় দেখা যায়, শুধু সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব তার কার্যালয়ে একটি করে এসি ও একটি সোফাসেট ব্যবহার করতে পারবেন। এর নিচের পদের কর্মকর্তাদের জন্য অফিসে একটি করে সিলিং ফ্যান ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। তবে কোনো সোফা ব্যবহারের কথা বলা হয়নি।