কুয়েতের কাছে হেরে সাফ থেকে বিদায় বাংলাদেশের

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : ডিফেন্সের এক ভুলে ভেঙে গেল ১৮ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন। ভুলটা করলেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্য তপু বর্মণ।

প্রবল প্রতিপক্ষ কুয়েতের বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য রাখার তৃপ্তি নিয়ে ম্যাচটাকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ১০৭ মিনিটে তপুর এক অমার্জনীয় ভুলে ভেঙে যায় সব প্রতিরোধ।

আব্দুল্লাহ আলব্লাউসির এক নির্বিষ শট তপুর পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে জড়ালে নির্ধারিত হয় ম্যাচের ভাগ্য। ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয়ে কুয়েত শনিবার বিকেলে বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে পা রাখে সাফের ফাইনালে।

এই হারের পর তপুর ভুলটা হয়তো বড় আক্ষেপ হয়ে ধরা দিচ্ছে। তবে এই ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততেও পারত। সেটি একাধিক গোলের ব্যবধানে। তখন হয়তো ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়েই যেত না। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন শেখ মোরসালিন। আর ৬১ মিনিটে পোস্ট বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাকিব হোসেনের সাহসী প্রচেষ্টার সামনে। দুটি পরিষ্কার সুযোগ নষ্টের হতাশাকে ছাপিয়ে গেছে তপুর সেই ভুল। নইলে সামর্থ্যে, র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা কুয়েতের চোখে চোখ রেখে খেলে বাংলাদেশ শেষ হাসিটা হাসতেই পারত।

এই ম্যাচে বাংলাদেশের ঘর সামলে প্রতি-আক্রমণ কৌশলে খেলাটা ছিল অনুমিত। মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা চমক দেন তারিক কাজীকে প্রথম একাদশে ফিরিয়ে। মালদ্বীপের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়ে ভুটানের বিপক্ষে খেলতে পারেননি রক্ষণভাগে বাংলাদেশের অন্যতম অস্ত্র তারিক।

১ জুলাই শনিবার সেমিফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই দল থেকে জানানো হয় তারিককে এই ম্যাচেও বিশ্রাম দেওয়ার কথা। তবে মাঠে নামতে মুখিয়ে ছিলেন তারিক। আগের দিন আলাদা অনুশীলনও করেছেন। ম্যাচের আগে কোচ তাই রহমত মিয়াকে বসিয়ে তারিককে ফেরান তার প্রিয় সেন্টারব্যাক পজিশনে।

৪-৪-২ ফরম্যাশনে শুরু করা বাংলাদেশ শুরুতেই গোলের দারুণ সুযোগ পায়। দারুণ ক্ষিপ্রতায় ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে আক্রমনে উঠেছিলেন আগের দুই ম্যাচে গোল পাওয়া রাকিব হোসেন। মার্কারকে পেছনে ফেলে ছোট ডি বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়িয়েছিলেন রাকিব। কুয়েতের এক ডিফেন্ডারের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল চলে আসে আনমার্কড মোরসালিনের কাছে। কুয়েত কিপারকে একা পেয়ে চলন্ত বলে মোরসালিনের টাচ সরাসরি কুয়েতের কিপারের গায়ে না লাগলে তখনই এগিয়ে যেত বাংলাদেশ।

শুরুর ধাক্কা সামলে কুয়েত দুই উইঙ্গ ব্যবহার করে বাংলাদেশ রক্ষণে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। ষষ্ঠ মিনিটে মোবারক আলফানেনির ক্রসে সালমান মোহাম্মেদের হেড গোললাইন থেকে দুর্দান্ত সেভ করেন ডিফেন্ডার ইশা ফয়সাল। ২৯ মিনিটে ইদ আলরাশিদির ক্রস জালে জড়ানোর আগে বাংলাদেশ কিপার আনিসুর রহমান জিকো সেভ করেন। পরের মিনিটে বাঁ দিক থেকে মোরসালিনের লো ক্রসে রাকিব ঠিকঠাক পা ছোঁয়াতে পারেননি। কুয়েতের কিপার আব্দুর রহমান সহজেই আয়ত্তে নেন। বাকিটা সময় কুয়েত সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পারায় ক্লিনশিটের স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতি থেকে ফিরে খুব অল্প সময়ে তিনটি পরিবর্তন করে কুয়েতের আক্রমণভাগের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেন দলটির পর্তুগিজ কোচ রুই বেন্তো। তাতে আক্রমণের ধার বাড়লেও বাংলাদেশের গোলের দরজা খুলতে পারেনি। উল্টো ৫৪ মিনিটে জামালের পাস ধরে বক্সের অনেক বাইরে থেকে রাকিবের বাঁ পায়ের জোরালো শট পোস্টের উপর দিয়ে যায়। ৬১ মিনিটে কুয়েতের পোস্টে কাঁপন ধরান রাকিব।

মোরসালিনের থ্রু বল ধরে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে জিরো ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল থেকে রাকিবের ডান পায়ের জোরালো শট পোস্টে আঘাত হেনে অল্পের জন্য বাইরে যায়। এর পরের সময়টায় বাংলাদেশ কিপার জিকো বেশ কবার হতাশা উপহার দিয়েছেন কুয়েত দলকে।

৬৪ মিনিটে আলরাশিদির বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া শট জিকো রুখে দেন। ৬৯ মিনিটে আতবি সালেহ দারুণ জায়গায় বল পেয়েও জালে রাখতে পারেননি। পরের মুহূর্তে আবারও জিকো রুখে দেন আবদুল্লাহর জোরালো শট। পাঁচ মিনিট পর আহমাদ আলধিফারির শট জিকো ঠেকিয়ে দিলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

আর ১০৭ মিনিটে তপুকে বোকা বানিয়ে আব্দুল্লাহ আলব্লাউসি করেন কুয়েতের হয়ে কাঙ্ক্ষিত গোল। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে তার শট ব্লক করতে পারেননি তপু। তার পায়ের ফাঁক দিয়ে বল দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়। শেষ দিকে ভালো একটা সুযোগ পেয়েছিলেন রাকিব। ১১৮ মিনিটে বিশ্বনাথের লম্বা বলে বক্সে ঢুকে রাকিবের ভলি কোনোমতে আটকে দিয়ে দলকে ফাইনালে তুলে নেন কুয়েত কিপার আব্দুল রহমান।

৪ ডিসেম্বরে ফাইনালে বাংলাদেশ দর্শক বনে গেছে। তার পরও এই বদলে যাওয়া দলটি দেশে ফিরবে মাথা উঁচু করেই।

ঠিকানা/এনআই