কৃষিবিদ সালেহ’র স্মরণ সভা মৃত্যুও তাদের এক করতে পারলোনা

নিউইয়র্ক: এ এম এম সালেহ'র শোক সভায় বক্তব্য রাখছেন মনোয়ারুল ইসলাম। ছবি-ঠিকানা।

ঠিকানা রিপোর্ট : কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি কৃষিবিদ এ এম এম সালেহ বাংলাদেশে অতিসম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন। তার স্মরণে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত কৃষিবিদদের আয়োজনে এক স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় গত ১ মার্চ জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার কনফারেন্স রুমে। প্রবাসে কৃষিদিবদদের বিভক্ত সংগঠনের কারণেই ঐক্যের ডাক দিয়ে এ সভার আহবান করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা বড় নিষ্ঠুর, ক্ষমতা এবং নোংরা রাজনীতির কারণে শোকও তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারোন। কথাগুলো ফুটে উঠে অনুষ্ঠানের সভাপতি মীর ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, প্রবাসে আমাদের কৃষিবিদদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে, বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে- সেই দিকটি বিবেচনা করেই এ এম এম সালেহ’র স্মরণ সভাটি সার্বজনীনভাবে করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম।

নিউইয়র্ক : এ এম এম সালেহ’র শোক সভায় বক্তব্য রাখছেন মকবুল হোসেন তালুকদার। ছবি-ঠিকানা।
নিউইয়র্ক: শোক সভায় সুধীর একাংশ। ছবি-ঠিকানা।

সব গ্রুপের সাথেই আমরা আলোচনা করেছি, কোন কোন গ্রুপ আসার কথাও বলেছিলেন, যে কারণে আমরা কোন সংগঠনের ব্যানারে এই অনুষ্ঠান করিনি। কিন্তু সালেহ’র মৃত্যুও আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারলনা। যাদের মৃত্যু ঐক্যবদ্ধ করতে পারে না, তাদের কীভাবে ঐক্য করবেন? এই দায়িত্ব আমাদের সিনিয়রদের নিতে হবে। বিশেষ করে ড. প্রদীপ রঞ্জন করকে। কৃষিবিদ সেকান্দার আলীর পরিচালনায় এই স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন কৃষিবিদ ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, কৃষিবিদ মুকবুল হোসেন তালুকদার, ড. পীষুষ কান্তি বণিক, মিজানুর রহমান, আব্দুর রশিদ।

নিউইয়র্ক : শোক সভায় সুধীর একাংশ। ছবি-ঠিকানা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন কৃষিবিদ মোহাম্মদ মামুন ও মনোয়ারুল ইসলাম।
মুকবুল হোসেন তালুকদার বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরাই সরাসরি রাজনৈতিক দলের শাখা গঠন করেছিলাম। ১৯৭৩ সালে আমরা ছাত্রলীগের প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছিলাম। কিন্তু সেই সময় সারা দেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন জয়লাভ করেছিলো একমাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া। তিনি আরো বলেন, আমাদের সারা জীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। কারণ তিনি আমাদের ডিসি এবং জেলা প্রশাসকের মালি থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেছিলেন। যে কারণে তার কাছে আমাদের সারা জীবনের কৃতজ্ঞতা। তিনি বলেন, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের ভবন এবং জমির জায়গার জন্য আমাদের রাজ্জাক ভাই, বাহাউদ্দিন নাসিমসহ অনেককে স্মরণে রাখা দরকার। আবার সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়কে রাজাকার মুক্ত করেছিলেন এ এম এম সালেহ’রা। তিনি বলেন, সালেহ একজন ভাল মানুষ ছিলেন। তার স্মরণ সভায় কিছু বলা আমার জন্য দু:খের এবং কষ্টের। কারণ তাকে আমরাই নেতৃত্বে এনেছিলাম। সে আমাদের ছোট ছিলো। তিনি বলেন, সাদেক যদি অস্ট্রেলিয়াতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন করতে পারে, আমেরিকাতে আপনারা কেন পারবেন না? আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই- ঐক্যের সো- কল যে সব নেতারা বাধা সৃষ্টি করবে, আমিই তাদের আসল রূপ ফাঁস করে দেবো।

নিউইয়র্ক: এ এম এম সালেহ’র শোক সভায় বক্তব্য রাখছেন ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। ছবি-ঠিকানা।

ড. প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, মৃত্যু সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু সব মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। আমি বলবো এ এম এম সালামের অপমৃত্যু হয়েছে। তাকে ভুলে যাওয়া আমার জন্য কঠিন। কয়েক বছর আগে সে তার পরিবারসহ আমেরিকায় এসেছিলো। আমার সাথে তার কথা হয়েছিলো। সে আমেরিকাতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন করতে চেয়েছিলো। তিনি বলেন, সকল সংগঠনের এলামনাইদের নিয়ে সেন্ট্রাল এই প্রতিষ্ঠান করা যায়। অন্যান্য যে সব সংগঠন রয়েছে সেগুলো থাকতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম আমরাই। এবং ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল’ আমরাই ভেঙ্গেছিলাম।
মীর ফরিদ উদ্দিন বলেন, এ এম এম সালেহ’র অবদান অনেক যা কোন দিন ভুলবার নয়।
মোহাম্মদ মামুন বলেন, সালেহ অসম্ভব ভাল মানুষ ছিলেন। তার চলে যাওয়া খুবই দু:খজনক। যখনই তার সাথে দেখা হতো, ডেকে পাশে নিয়ে বসাতেন। তাদের কর্মের কারণেই দেশে গেলে আমরা সম্মান পাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে ধরনের অনুষ্ঠান নিয়ে মতানৈক্য- কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সবার জন্য আমাদের সবাইকে থাকতে হবে।

ড. পীষুষ কান্তি বণিক বলেন, সে আমাদের জুনিয়র ছিলো। জুনিয়রের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করা আমাদের জন্য কষ্টের। তিনি বলেন, কৃষিবিদদের অধিকার আদায়সহ বিভিন্ন কাজে এ এম এম সালেহ’র অনেক অবদান আছে। সে আমাদের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। আমাদের উচিত তাকে স্মরণ রাখা এবং আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখা।
অনুষ্ঠানে কোরআন তেলওয়াত এবং দোয়া পরিচালনা করেন কৃষিবিদ মিজানুর রহমান।