কোথাও স্বস্তি নেই

প্রণবকান্তি দেব : পাঠক, আবার হাজির ‘সিলেটের চিঠি’ নিয়ে। আপনারাও বুঝি অপেক্ষায়! কিন্তু কোথাও স্বস্তির খবর নেই, সবখানে কেবল অসন্তোষ, কেবলই ক্ষোভ।
বন্ধুগণ, কী আর বলব! এখনো গ্রেফতার হয়নি সিলেটে পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের এসআই আকবর হোসেন। উপরন্তু, গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে আকবর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার। এ দিকে রায়হান পরিবারসহ সিলেটের সুশীল সমাজের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছেই। মিছিলে, সেøাগানে উচ্চারিত হচ্ছে ন্যায় বিচারের দাবি। মুখর আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও।
অন্য দিকে সিলেটে করোনার প্রকোপ আবারও বাড়ছে। আক্রান্তের তালিকায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। গত এক সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। এর মধ্যে গত ৩ নভেম্বর, বিয়ের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কাওসার আহমদ নামে এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবক। তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের তুরুকখলা গ্রামের বাসিন্দা। তবুও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, বিয়ে-শাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান সবই চলছে পুরোদমে। তবে এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
পাঠক বন্ধুগণ, এর সাথে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও সিলেট অঞ্চলে কাক্সিক্ষত সেই সেবা পাচ্ছেন না অনেকেই। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের খবর পেয়ে অনেক প্রবাসী সিলেট প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শরণাপন্ন হলেও নিয়মনীতির বেড়াজালে আটকে পড়ে শেষ পর্যন্ত সেই সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তারা। জানা যায়, যেসব প্রবাসী গত ১ জানুয়ারির পর দেশে এসেছেন, তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০০ কোটি টাকার তহবিল প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে প্রদান করে। ওই তহবিল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসীদের সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা যেকোনো কৃষি এবং অকৃষি ব্যবসার জন্য ঋণ বিতরণ করার জন্য বলা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জুলাই কোভিড-১৯ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের মধ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। সুষ্ঠু ও দ্রুততার সাথে ঋণ বিতরণের জন্য মন্ত্রণালয় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মাঠ প্রশাসন দ্বারা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সিলেট শাখা এখনো পর্যন্ত একজন প্রবাসীকেও কোভিড-১৯ পুনর্বাসন ঋণ বিতরণ করেনি। এমনকি গত জুনের পর থেকে ব্যাংকটির সিলেট শাখা নিয়মিত ঋণের (বিদেশ যাওয়া, রি-এন্ট্রি ভিসায়-বিমান টিকিট, বঙ্গবন্ধু বৃহৎ অভিবাসন পরিবার ঋণ ও পুনর্বাসন-প্রকল্প ঋণ) এই চার শ্রেণিতে কোনো ধরনের ঋণ বিতরণ করতে পারেনি বলেও জানা গেছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে বিপাকে পড়া মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের মধ্যে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত এসব প্রবাসীরা পরিবার পরিজন নিয়ে পার করছেন অনিশ্চিত দিন।
এ দিকে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম ঘটনা ঘটছে অহরহ। সবমিলিয়ে, ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে মানুষ।
স্বজন, আজ এ পর্যন্তই। আগামী সপ্তাহে আবার আসব চিঠি নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন…