ঠিকানা ডেস্ক : মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু স্নাতকই তৈরি করছে না, এসব ক্যাম্পাস বিপুল পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদনেরও ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা সফটওয়্যার কোম্পানি সিসকোর গবেষকরা এমন দাবিই করেছেন। তারা মূলত বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি ভার্টিক্যালের (নিন্দিষ্ট পণ্য বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান) আচরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, কলেজ ক্যাম্পাসগুলোই ভার্চুয়াল কারেন্সির দ্বিতীয় বৃহত্তম মাইনার। মোট ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ের ২২ শতাংশই হয় এসব ক্যাম্পাসে। তবে নির্দিষ্ট কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নাম উল্লেখ করেননি গবেষকরা।
সিসকোর সাইবার নিরাপত্তা-বিষয়ক গবেষক অস্টিন ম্যাকব্রাইড বলেন, এর সম্ভাব্য কারণ এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিছু সুবিধাবাদী শিক্ষার্থী জড়িত, যারা তাদের ডরমিটোরি রুমকেই মাইনিং রিগে পরিণত করেন। কারণ টানা চার বছর ডরমিটোরির একটি কক্ষে নিশ্চিন্তে থাকার সুযোগ পাওয়া যায়।
পিসিম্যাগকে দেয়া ইমেইল সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের বিনামূল্যের বিদ্যুৎ সুবিধাকে শিক্ষার্থীরা কাজে লাগান। ডরমিটোরি রুম বা লাইব্রেরিকে মাইনিং রিগ বানিয়ে কারেন্সি মাইনিং করতে পারেন তারা। এতে বিদ্যুৎ খরচ বেঁচে যাওয়ায় কারেন্সি মাইনিংয়ের খরচ কমে যাচ্ছে।
সিসকো তাদের নিরাপত্তা টুল আমব্রেলার মাধ্যমে এ ধরনের মাইনিং তত্পরতা শনাক্ত করেছে। এ সিকিউরিটি টুলটি ইন্টারনেটে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংসহ ক্ষতিকর বিষয়ের আনাগোনা ঠেকিয়ে দিতে গ্রাহকের নেটওয়ার্ক কানেকশন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে। বর্তমানে এ টুল দৈনিক ১৮০ মিলিয়ন ডোমেইন নেম সার্ভার রিব্লয়েস্ট প্রসেস করে।
ম্যাকব্রাইড বলেন, ক্যাম্পাসে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং বিস্তৃত হওয়ার মানে হলো, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের ডরমিটরি রুমকে এ কাজে ব্যবহার করছেন। তবে সব কারেন্সি মাইনিংই যে শিক্ষার্থীরা করছেন এমন নয়; হ্যাকাররা অরক্ষিত কোনো কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার আক্রমণ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ের জন্য সেটির হার্ডওয়্যারও ব্যবহার করে থাকতে পারে।
বেশি পরিমাণে কারেন্সি মাইনিং দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, এর অর্থ এর জন্য বিদ্যুৎ ও ডাটা খরচ অনেক বেড়ে যায়। ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ে লাভ করতে হলে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার হয়। এক্ষেত্রে যাদের পুঁজি কম, তাদের বড় সুযোগ করে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ডরমিটরি।
সিসকোর হিসাবে, এ কারণেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও ইউটিলিটি খাত এখন ১ নম্বর ভার্চুয়াল কারেন্সি মাইনার। ম্যাকব্রাইডের ধারণা, এর প্রধান কারণ, এ ধরনের কোম্পানির কম্পিউটারগুলো বেশ পুরনো মডেলের। ফলে সেগুলো সজহজেই ম্যালওয়ার আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, এর মধ্যে কিছু কম্পিউটার ব্যবস্থা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও অন্যান্য ইউটিলিটি সুবিধা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোতে নিন্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য তৈরি করা এবং ম্যাক বা পিসির মতো নিয়মিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার হালনাগাদ করা হয় না। ফলে এগুলো হ্যাকারদের কাছে খুব আকর্ষণীয় মাইনিং রিগ।
কারেন্সি মাইনিং আপাতদৃষ্টিতে নিন্দোষ মনে হলেও দীর্ঘ সময় ধরে মাইনিং হলে বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি ও হার্ডওয়্যারের আয়ু কমিয়ে কোম্পানির ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া মাইনিং ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হলে সেসব কম্পিউটারে অন্যান্য ম্যালওয়্যার প্রবেশ করার দুয়ারও খুলে যায়।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রেকর্ড দাম বৃদ্ধির পর থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে ধারাবাহিক পতন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এ বাজার গোপনে বাড়ছে। সিসকোর হিসাবে ২০১৮ সালের শেষ নয় মাসে কারেন্সি মাইনিং-সংশ্লিষ্ট ইন্টারনেট ট্রাফিক আগের তুলনায় ১৯ গুণ বেড়েছে।