ক্ষমতার লন্ডনি রোডম্যাপে তারেক

বিশেষ প্রতিনিধি : ক্ষমতার প্রশ্নে কোনো দিকেই ন্যূনতম ঝুঁকি দেখছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশি-বিদেশি সব দিকই মোটামুটি তার আয়ত্তে। এমনকি দল, সরকার ও বিশেষ শক্তির ভেতরে সামান্যতম সন্দেহ থাকা ব্যক্তি এবং গ্রুপগুলোকেও হয় আয়ত্তে এনেছেন। এমন নির্ভার মুড ও নিছিন্দ্র গ্যারান্টির মধ্যেও বিএনপির দেশান্তরি কান্ডারি তারেক রহমানের সাম্প্রতিক কিছু গতিবিধি সরকারকে কিছুটা চিন্তায় ফেলছে। যেখানে দলের সিনিয়র নেতাই জীবদ্দশায় আর ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন, সেখানে লন্ডন থেকে তারেক রহমান দিয়েছেন ২০২৩ সালে সরকার গঠনের রোডম্যাপ। তার এই ম্যাপ ফাউ না সরকারকে ভয়ে ফেলার চাতুরী, নাকি নেপথ্যে কিছু আছেÑনানা সোর্সে তা খতিয়ে দেখছে সরকারের বিভিন্ন ইনস্টুমেন্ট।
বিএনপিকে শক্তিশালী কোনো ফ্যাক্টরই মনে করে না সরকার। কেবল জেলে নেওয়া হবে না, ঘরে থাকতে দেওয়া হবে-এই নিশ্চয়তায় খুশিতে সরকারের বহু অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা। সরকারের আজ্ঞাবহ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যা দরকার তা-ই করবে বলে জানিয়েই রেখেছে। শেখ হাসিনাকে কওমি জননী খেতাব দেওয়া হেফাজতে ইসলাম এই সরকারকে ‘আমাদের সরকার’ বলেছে প্রকাশ্যে সমাবেশে। এও বলেছে, আরো ১০০ বছর ক্ষমতায় থাকুক এ সরকার। এর পরও সাবধানতায় কোনো কমতি দিচ্ছেন না শেখ হাসিনা।
তারেক রহমান গত মাস কয়েক অনেকটা বেখবরের মতোই থেকেছেন। অতিসম্প্রতি রহস্যজনকভাবে তৎপর হয়ে উঠেছেন তিনি। আবার যোগাযোগ শুরু করেছেন জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে। গত কিছুদিনে অন্তত ১৬-১৭টি জেলা-উপজেলার বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কথা বলেছেন তিনি। সামনে ‘ভালো খবর’ আছে বলে নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে। কিন্তু ঘটনা বা ছক সম্পর্কে কিছুই বলছেন না।
কিসের ভিত্তিতে, কার চালে পড়েছেন তারেক রহমানÑকেবল সরকার নয়, দলের একাধিক গ্রুপও নেমে পড়েছে তারেকের ক্ষমতার রোডম্যাপের রহস্য ভেদের মিশনে। নানা তথ্য পেলেও এখন পর্যন্ত নির্ভর করার মতো খবর নেই তাদের কাছে। ভারতের ক্ষমতাসীন একটি গ্রুপের সঙ্গে তার নতুন সখ্য অনেকের জানা। সরকারের কাছেও রয়েছে এর হালনাগাদ তথ্য। সরকার এ নিয়ে মোটেই বিচলিত নয়। পাত্তা দিতেও রাজি নয়। কারণ ভারতের মোদি সরকারের মেইনস্ট্রিম কেবল শেখ হাসিনার সরকারের সহযোগীই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে তোয়াজও করে। চীনের আধিপত্য ঠেকাতে বাংলাদেশকে পরম বন্ধু হিসেবে পেতে ভারতের সাম্প্রতিক চেষ্টা-তদবির শেখ হাসিনার জন্য উপভোগ করার মতো। বাংলাদেশে চীনা আধিপত্য কমাতে সরকারের সঙ্গে খাতির জমানোর হেন চেষ্টা নেই যা না করছে ভারত।
ভারতীয় নতুন হাইকমিশনার দোরাইস্বামীর এ-সংক্রান্ত কিছু তৎপরতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে রীতিমতো কৌতুকের পর্যায়ে। তবে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশের অন্যান্য দলের কিছু নেতা, ব্যবসায়ী, আমলার সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের কিছু ব্যক্তির যোগাযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিরক্তিকর পর্যায়ে। এই ঘোড়া ডিঙানোকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না তিনি। ক্ষেত্রবিশেষে সন্দেহও করছেন। এর পেছনে লন্ডনি কানেকশন বা নতুন কোনো ইকুয়েশন আঁচ করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং সেনাবাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা এএসইউর মুখোমুখি ভূমিকা, সেনাবাহিনীপ্রধানের টেলিফোন ফাঁসের মতো নজিরবিহীন কিছু ঘটনাও তাকে ব্যথিত করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি। সেটাও এরই মধ্যে শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন তিনি। এসবের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে দেশান্তরি তারেক, চীন, ভারত বা দেশি-বিদেশি অন্য কোনো শক্তির সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।