ক্ষমতার হার্ডকোরে ভূকম্পনের গুঞ্জন

আদানিতে তোলপাড় ভারত : বাংলাদেশেও এ সংখ্যা অর্ধডজন

বিশেষ প্রতিনিধি : বিশ্বের চলমান স্নায়ুচাপ শিগগিরই ভিন্ন দিকে মোড় নিলে বদলে যাবে রাশিচক্র, আসবে বিশাল সুযোগ, মিলবে প্রচুর অর্থ- এমন অপেক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা যে কারণে চলমান স্নায়ুদ্বন্দ্বে চরম কৌশলী। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ শক্তিধর দেশগুলোকে নানা কৌশলে হাতে রেখে এখন পর্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে এগোচ্ছে দিল্লি-ঢাকা। পরাশক্তির মন্ত্রী-সচিবরাও দূত হয়ে ছুটে আসছেন তাদের দরবারে। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার পথে যাত্রাবিরতি দিয়েও আলাপ সারেন। কিন্তু এ সুখের হাতছানির মাঝে ছেদ ফেলছে দুটি বিজনেস টাইফুনসহ কয়েকটি বিজনেস করপোরেট হাউসের ঘটনা। ভারতে গন্ডগোল পেকেছে আদানি গ্রুপকে নিয়ে। আশপাশে ঘুরছে আরো কয়েকটির নাম। আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা অন্তত অর্ধডজন। সেখানে বিশেষভাবে যোগ হয়েছে বাংলাদেশি এক ধনকুবেরের কোম্পানি।
আদানিসহ ভারতীয় কয়েকটি করপোরেট কোম্পানির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহসহ ক্ষমতাসীন বিজেপি ঘরানার বিশেষ অ্যাজেন্ডার কথা অনেক দিন থেকেই চাউর ছিল। এখন তা বিশ্বগণমাধ্যমের হট আইটেম। বাংলাদেশেও এমন ঝড়ের রসদ বা উপাদান উঁকি দিচ্ছে। সময়ের অপেক্ষায় ইন্টারেস্টেড গ্রুপ। আদানি গ্রুপের ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এশিয়ার শীর্ষ এবং বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ ধনী হয়ে ওঠার গল্প ফিল্মকেও হার মানায়। নাদানের মতো আদানির উত্থান ভবিষ্যতে অন্য দুর্নীতিবাজদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রশ্নে আদানি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গেও পরিচিত হয়ে গেছেন। সেখানে এখন গোলমালের ফ্যাক্টরি। আগামী দিনগুলোতে আদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের, এমনকি বাংলাদেশের কারো কারো ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে ঘুরছে নানা কথা। ক্ষমতার বলয়ে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, শেয়ার মার্কেটসহ অর্থসংশ্লিষ্ট নানা জায়গায় আদানির আত্মীয়, বন্ধু, বিশ্বস্তদের অনেকের ঘুম হারাম।
আমেরিকার লগ্নি-সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এক রিপোর্টে শেয়ারবাজারে আদানি গোষ্ঠীর অবিশ্বাস্য অপকর্ম উঠে আসার পরপরই আদানির ধসের সূচনা। এর পরই প্রকাশ্যে আসে সেবি-সিরিলসহ বিশেষ বিশেষদের সঙ্গে আদানির সম্পর্কের কথা। যার কাছে-কিনারে যাতায়াত বাংলাদেশের কারো কারো। ২০১৬ সালে পানামা দুর্নীতি এবং ২০২১ সালে প্যান্ডোরা পেপার দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়েছিল আদানির। সেখানে ছিল বাংলাদেশের কিছু বিশিষ্টজনের নামও। কিন্তু তখন সব ডাহা মিথ্যা-অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের টাকা দিয়ে জনগণকে নিধনের এ স্মার্টনেস এখন নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতের ক্ষমতাসীনদের জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছে।
আদানির সঙ্গে খায়খাতির রেখেছে বা বিশেষ সম্পর্ক আছে দাবি করে টাকার কুমির হওয়া বাংলাদেশি নক্ষত্রদের সামনে এখন অন্ধকারের ঘনঘটা। যারা বড় অঙ্কের ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে গরিবের ওপর অন্যায়ভাবে ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়েছে, ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, মেগা প্রকল্পে খবরদারি করেছে, ড্রাগ সাম্রাজ্য গড়েছে, আবার মন্ত্রী-এমপিসহ ক্ষমতার নানান পোস্ট পয়েন্টেও কর্তৃত্ব করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের সময় আদানির সঙ্গে হাইপ্রোফাইল সাক্ষাতে এ মহলটি আরো তেজি ও পরাক্রমশালী হয়ে ওঠে। ওই সফরে রাষ্ট্রীয় সূচির আগেই হাসিনা-আদানি বৈঠক হয়। দুই দেশের গণমাধ্যমেই একে দেওয়া হয় বিশেষ ট্রিটমেন্ট। চার দিনের ওই ভারত সফরের প্রথম দিনেই শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠককে দেখানো হয়েছিল বিশাল সাফল্য হিসেবে। তখনকার খবর ছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যারপরনাই প্রশংসা করেছেন আদানির। বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ নিয়ে ভাবতে হবে না। ডিসেম্বরেই (গত বছরের) শেষ হয়ে যাবে গোড্ডা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কাজ। বৈঠকের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারেননি গৌতম আদানি। টুইট করে বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠকটি গৌরবের।’
এর বাইরেও আশাব্যঞ্জক অনেক কথা শোনানো হয়েছে। অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মের মতো ‘পাপ ছাড়ে না বাপকেও’ প্রবাদের মতো অবস্থা সেই আদানি গোষ্ঠীর। কিন্তু যারা তার আলোয় আলোকিত হয়ে অনেক কিছু হাতিয়ে নিয়েছেন, তারা সটকে পড়ছেন। আর ক্ষতি যাদের হওয়ার তা হয়ে গেছে। সামনে আরো হবে। যা আর পুষিয়ে নেওয়ার দিশা নেই।