ঠিকানা রিপোর্ট: খান’স টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থীরা নিউইয়র্কের বিশেষায়িত হাইস্কুলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে চলতি বছরেও বিগত বছরের মতো সাফল্য দেখিয়েছে । খানের স্টুডেন্টরা ভাল স্কুল ও কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়ে একদিকে যেমন নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে, সেই সঙ্গে পরিবারেরও সুনাম উজ্জল করছে। পাশাপাশি খানেরও সুনাম বাড়াচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য খান’স টিউটোরিয়ালে কোচিং করে এবার স্পেশাল হাইস্কুলে নাইন গ্রেডে পড়ার সুযোগ পেয়েছে ৩৭১ জন স্টুডেন্ট। তারা লাকি। তাদের সামনে খুলে গেছে নিজের মেধাকে আরও বেশি করে কাজের লাগানোর সুযোগ। অন্য সব শিশুদের চেয়ে তারা অন্য সব বিষয়েও বেশি সুযোগ পাবে। সেই সব কথাই তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে তাদেরকে এটাও মনে করিয়ে দেওয়া হলো তাদেরকে হাইস্কুলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। একটি দিনও নষ্ট করা যাবে না। আগামী চার বছর তারা ভালভাবে সবগুলো সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে, আগামী দিনে তারা ভাল ভাল ও বিশেষ বিশেষ ইউনিভারসিটি ও কলেজগুলোতে পড়ার সুযোগ পাবে। কীভাবে তাদের জীবন আরও বেশি সফল ও স্বার্থক হতে পারে সেই সব বিষয়েও দেয়া হলো দিক নির্দেশনা। সেই সঙ্গে এবার যারা স্পেশাল হাইস্কুলে সুযোগ পেয়েছে তাদেরকে খান’স টিউটোরিয়ালের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট, মেডেল ও পুরস্কার। তারা এই সাফল্যে যেমন খুশী, তেমনি খুশী তাদের অভিভাবকরাও। সেই সঙ্গে খুশী খান’স টিউটোরিয়ালের চেয়ারপারসন নাঈমা খান, প্রেসিডেন্ট ও সিইও ড. ইভান খান। এছাড়াও খুশী খান’স টিউটোরিয়ালের ১১টি শাখার পরিচালক ও ইন্সট্রাকটরবৃন্দ।
বিশেষায়িত হাইস্কুলে সুযোগ পাওয়া স্টুডেন্টদের সাফল্যকে কেন্দ্র করে ও এই উপলক্ষে ৮ এপ্রিল রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা কুইন্স কলেজের কোল্ডেন অডিটোরিয়ামে বসেছিল মেধাবীদের মিলন মেলা। প্রতি বছর খান টিউটোরিয়াল নিউইয়র্কে বিশেষায়িত স্কুলে সুযোগ পাওয়া স্টুডেন্টদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
খানের তরফ থেকে জানানো হয়, খান’স টিউটোরিয়ালে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই বছর বিশেষায়িত স্কুলের মধ্যে স্ট্রাইভেসেন্ট হাইস্কুলে ৭০ জন, ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সে ৯৫ জন, ব্রুকলিন টেকনিক্যাল হাই স্কুলে সুযোগে পেয়েছে ১৩৩ জন। এছাড়াও নতুন স্পেশালাইজড হাইস্কুলে সুযোগ পেয়েছে ৭৩ জন।
খান’স টিউটোরিয়ালের এই অনুষ্ঠানের জন্য আগে থেকেই পুরো প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শিশুদেরকে সম্মানিত করা হয় পুরো বিকেল জুড়ে। বেলা সাড়ে ১২টায় মেধাবী স্টুডেন্টরা তাদের বাবা, মাকে সাথে নিয়ে কুইন্স কলেজে আসতে থাকে। বেলা দেড়টা পর্যন্ত তারা আসে। এরপর অনুষ্ঠান স্থলে আসেন অতিথিরা। বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন খানের নিলয়, খান টিউটোরিয়ালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ড. ইভান খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রুকলিক টেকনিক্যাল হাইস্কুলের ড. ম্যাথিউ মেনড্রি, স্টাইভেসেন্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল এরিক কনট্রেরাস, এনওয়াইএস এ্যাসিসটেন্ট এটর্নী জেনারেল, ফাউন্ডার অব ড্রিম চেয়ার্স এবং ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সেস গ্রাজুয়েট জেসন ক্লার্ক, ন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্কের নাসাও চ্যাপ্টারের রেভারেন্ড এমানুয়েল এ্যাসেস। এছাড়াও ছিলেন খানের চেয়ারপারসন মিসেস নাঈমা খান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নিলয় খান’স টিউটোরিয়ালের ইতিহাস তুলে ধরেন সবার উদ্দেশ্যে। মঞ্চে রাখা হয় মনসুরের পোর্ট ফলিউ। এরপর নিলয় খান টিউটোরিয়ালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ড. ইভান খানকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ইভান খান এই বছরে যে ৩৭১ জন মেধাবী নিউইয়র্কের বিশেষায়িত হাইস্কুলে সুযোগ পেয়েছে সেই জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তিনি সকল ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান।
ড. ইভান খান খান’স টিউটোরিয়াল স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। পাঁচজনকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ইভান খান ড. মনুসর খান এসএইচএসএটি অপরচ্যুনিটি স্কলারশিপের ব্যাপারে কথা বলেন। একে একে পুরস্কার তুলে দেন। কেটি অল স্টার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন দেইস গারিসয়া।
এরপর বক্তব্য রাখেন রেভারেন্ড ইমানুয়েল এ্যাসেস। তিনি তার বক্তৃতায় স্টুডেন্টদের সাফল্যে স্টুডেন্ট ও তাদের পরিবারকে অভিনন্দন জানান। খানের এই সাফল্যকে তিনি ইতিাবচক বলে আখ্যায়িত করেন। আগামী দিনেও খান এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খানের সাফল্যে এই সময়ে তিনি নাঈমা খানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি নাঈমা খান ও তার প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ জানান।
এরপর পুরস্কার প্রদান করা হয় খান’স টিউটোরিয়াল নাইনথ গ্রেড অ্যাওয়ার্ড। এই পুরস্কার লাভ করেন ইয়াসমিন ইয়ূন। ড. ইভান খান এই পুরস্কার তুলে দেন। কেটি অল স্টার অ্যাওয়ার্ড লাভ করে দেইস গার্সিয়া, সে ড. মনুসর খান এসএইচএসএটি অপরচ্যুনিটি স্কলারশিপ লাভ করে। এছাড়াও সর্বোচ্চ স্কোর করার জন্য শ্রে প্যাটেল কে পুরস্কার দেওয়া হয়। সে ৬৬৫ নম্বর পেয়েছে।
এরপর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ব্রঙ্কস সায়েন্স স্কুলের প্রতিনিধি হিসাবে জেসন ক্লার্ক। তিনি তার বক্তৃতায় তার স্কুলে যারা সুযোগ পেয়েছে তারা কেন লাকি সেই ব্যাপারে বক্তব্য তুলে ধরেন। বলেন, তোমরা যারা এই স্কুলে সুযোগ পেয়েছো তারা আগামী দিনে আরও বিভিন্ন সুযোগ পাবে। সেই সব সুযোগগুলো কাজে লাগাবে। আগামী দিনে তোমাদের আরও বড় বড় জায়গায় সুযোগ করে দিবে।
অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে খান’স টিউটোরিয়াল ডাইরেক্টার এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় খানের ১২জন ডাইরেক্টরকে। তিনটি পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধ্যে খান’স টিউটোরিয়াল অল রাউন্ডার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন নুসরাত হক। খান’স টিউটোরিয়াল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন জেবা ইসলাম। খান টিউটেরিয়াল ডাইরেক্টর অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন ফাহিম।
ড. খান এক্সিলেন্স ইন এডুকেশন এ্যান্ড ক্যারিয়ার এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ড. ম্যাথিউ ম্যানডেরীকে। ইভান খান তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি এরপর বক্তৃতা করেন। তিনি বক্তৃতায় বলেন, আমরা এখন কেটির পার্টনার। আমি খানের সাফল্যে খুবই খুশী। আগামী দিনে একসঙ্গে কাজ করবো। তিনি স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা এখন থেকেই উদ্যোগ নাও এবং সব সুযোগ কাজে লাগাও, যাতে আগামী দিনে আরও সফল হতে পারো।
খান’স টিউটোরিয়ালের পক্ষ থেকে হায়েস্ট স্কোরারকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। দুইজন এই পুরস্কার পান। তাদেরকে আইপেড তুলে দেওয়া হয়। শ্রেয় প্যাটেল এই পুরস্কার পান। এছাড়াও স্পেশাল হাইস্কুলের ট্রেনিংয়ের ডিরেক্টরের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষকদের দুটি টিমকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এসএইচএসএটি এর প্রেগাম ম্যানেজার ইউসূফ খানকেও পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা সবাই তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
পুরস্কার প্রদানের পর বক্তৃতা করেন স্ট্যাইভেস্টেন স্কুলের প্রিন্সিপাল এরিক কনট্রেয়ার্স। তিনি বলেন, তোমরা বিশেষায়িত স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছো এটা তোমাদের জন্য বড় সুযোগ। আগামী দিনে তোমাদের সামনে আরো অনেক সুযোগ আসবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, আজকে তোমরা যে সাফল্য অর্জন করেছো এর পেছনে তোমাদের যেমন অবদান আছে তেমনি পরিবারেরও অবদান আছে। খানেরও অবদান রয়েছে। আগামী দিনে আরও সাফল্যের জন্য আরও কষ্ট করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী চার বছর কষ্ট করতে পারলে এবং সেখানে সফল হলে পরে আগামী দিনে ভাল কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আসবে। আগামী আট বছরের পরিশ্রমই এনে দিবে জীবনের বড় সাফল্য। তিনি বলেন, সেটি করতে পারলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
এই পর্যায়ে ইভান খান এসএইচএসএটি ইন্ট্রাক্টরদের মধ্যে ইন্সট্রাকটর অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন। দুটি টিমকে পুরস্কার দেওয়া হয়। একটি পুরস্কার লাভ করে জ্যামাইকা আর অপরটি এস্টরিয়া। এই সময়ে টিমের সদস্যরা মঞ্চে আসেন।
এই পর্যায়ে নাঈমা খান তার বক্তৃতায় বিশেষায়িত হাইস্কুলে সুযোগ পাওয়ার জন্য স্টুডেন্টদেরকে অভিননন্দন জানান। সেই সঙ্গে অভিনন্দন জানান অভিভাবকদেরকে। তিনি বলেন, আপনাদের সন্তানরা বিশেষায়িত হাইস্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, এই জন্য আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন। স্টুডেন্ট তোমাদেরও অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। তিনি বলেন, আপনারা আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছেন এই জন্য ধন্যবাদ। আপনারা আগামী দিনেও আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন। যাতে আপনাদের আগামী সন্তান কিংবা অন্য সন্তানদের জন্য আমরা কাজ করবো। তাদেরকে আমরা সুযোগ করে দিতে চাই বিশেষ স্কুলে সুযোগ পাওয়ার জন্য তৈরি করতে। তিনি বলেন, আপনারা সন্তানকে সময় দিন। তাদের সামনে যে সুযোগগুলো আসেবে সেগুলো কাজে লাগান।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে যোগ দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশেনের কর্মকর্তা নূর এলাহী মিনা। তিনি স্টুডেন্টদের অভিনন্দন জানিয়ে বৃক্ততা করেন।
প্রথমেই পুরস্কার প্রদান করা হয় লাগোরডিয়া হাইস্কুল ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস, স্ট্যাটান আইল্যান্ড টেকনিক্যাল, হাই স্কুল ফর ম্যাথ সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এট সিটি কলেজ, হাই স্কুল অব আমেরিকান স্টাডিস এট লেহম্যান কলেজ, কুইন্স হাইস্কুল ফর দ্য সায়েন্সেস এট ইয়র্ক কলেজ, ব্রুকলিন লেটিন হাইস্কুল, ব্রুকলিন টেকনিক্যাল, ব্রঙ্কস হাইস্কুল অব সায়েন্সেস, স্টাইভেসেন্ট হাইস্কুল। তারা লাইনবন্ধ হয়ে একে একে মেডেল গ্রহণ করেন।
এরপর স্টাইভেসেন্ট স্কুলে সুযোগ পাওয়া ও সর্বোচ্চ স্কোর করা দুইজনকে পুরস্কার করা হয়। তারা হলেন, মোহতাহা ইসলাম ও শ্রে প্যাটেল।
খান’স টিউটোরিয়ালের সিইও ও প্রেসিডেন্ট ড. ইভান খান তার বক্তৃতায় এই বছর যারা স্পেশালাইজড হাইস্কুলে চান্স পেয়েছে তাদেরকে অভিনন্দন জানান। অভিভাবকদেরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমার খুব ভাল লাগছে গর্বিত পরিবারগুলি দেখে। বলেন, আমি আমার ছেলেমেয়েদের এসএইচএসএটি পরীক্ষার জন্য আগামী দিনে প্রস্তুত করবো আশা করি। এখন ৬ তম বা ৭ তম গ্রেডে যারা আছে তাদেরকে খানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। বলেন, আগামী দিনের পরীক্ষার জন্য আমাদের ক্লাসগুলি ভরছে। স্টুডেন্টরা যোগ দিচ্ছে। আমরা পরবর্তী বছর আরও ৩৭১ টি কিংবা তার বেশি স্টুডেন্ট তাতে বিশেষায়িত স্কুলে সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।