নিজস্ব প্রতিনিধি : বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আইনমন্ত্রী ও সরকারের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে গভীর বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কয়েক দিন আগে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের আগে জেলে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তার দুদিন পরই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে।
সরকারপ্রধানের এই ঘোষণা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করবে বলেই সরকারি মহল ধারণা করছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সরকারি ঘোষণার পর বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সম্মেলন হলো, বাস-লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে ছাড়াও সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ হয়। এ অবস্থার মধ্যেও সমাবেশ সফল হয়েছে। দুদিন আগেই নেতাকর্মীরা হেঁটে বিভিন্নভাবে বরিশাল শহরে আসেন। লঞ্চ-বাস মালিক-শ্রমিকেরা তাদের বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট পালন করেন। প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির সমাবেশের আগে তাদের ধর্মঘট কেন? তাদের দাবি-দাওয়া এতই যৌক্তিক হলে তারা বছরের অন্য সময়ে তাদের কর্মসূচি পালন করলেন না কেন? এতেই মনে করা হচ্ছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই ধর্মঘট পালিত হয়।
বেগম খালেদা জিয়াকে পুনরায় জেলে পাঠানোর হুমকি বিএনপির নেতাকর্মীদের দমিত করেনি। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও মনে করছেন, এটা সরকারের কৌশলমাত্র। সরকারের হুমকি নেতাকর্মীদের আরো বেশি করে উজ্জীবিত করেছে। সরকারবিরোধী কর্মসূচি সফল করতে এ হুমকি তাদের অনেক বেশি সক্রিয় ও সোচ্চার করেছে, যার প্রতিফলন ঘটে সিলেটের সমাবেশেও।
বেগম খালেদা জিয়াকে এখনই জেলে পাঠানোর পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা যায়। তবে অদূর ভবিষ্যতে বিএনপি বেপরোয়া কার্যক্রম চালালে খালেদা জিয়াকে বর্তমান মুক্ত জীবনে থাকার সুযোগ আর নাও দেওয়া হতে পারে। দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া দণ্ডিত। দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিশেষ কিছু সুবিধা দিয়ে তাকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ও হাসপাতালে রাখা হয়। শারীরিক অবস্থার মারাত্মক উদ্বেগজনক অবনতি হয়েছে দাবি করে বিএনপি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জোর দাবি করা হয়। সরকার তার বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার প্রকৃত শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রেখে আসছে। অবস্থা ভয়ংকর উদ্বেগজনক বা অস্বাভাবিক কিছু নয় নিশ্চিত হয়েই সরকার বিএনপির নেতাদের বক্তব্য, অভিযোগ আমলে নেয়নি। তবে মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে গুলশানে ফিরোজায় থাকতে দেওয়া হয়।
ফিরোজা বিশাল অট্টালিকা হলেও বেগম খালেদা জিয়া এখানে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ছয়জন কর্মচারী, পাচক, দারোয়ান রয়েছেন। ডাক্তাররা নিয়মিত পরীক্ষা করেন। ছোট ভাই ইসকান্দার মির্জা মাঝেমধ্যেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছিলেন। বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যও দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। আত্মীয়স্বজনদেরও আসতে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। ছোট ভাইকেও আসতে দেওয়া হচ্ছে না। তার সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ইসকান্দার মির্জার কাছ থেকে খালেদা জিয়ার মনোভাব, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে তথ্য পেত সরকার। বিএনপির মহাসচিবসহ কোনো পর্যায়ের কোনো নেতাকেই দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আত্মীয়স্বজনেরাও সে সুযোগ আর পাচ্ছেন না। একমাত্র ডাক্তারকে আসা ও খালেদা জিয়াকে শারীরিকভাবে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা একজন ডাক্তার। খালেদা জিয়ার কাছে তিনি যতক্ষণ থাকেন, ততক্ষণ সরকারের লোকও সঙ্গে থাকে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখানে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। সশস্ত্র পুলিশ, সরঞ্জামাদিও বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে পুরোনো জেলখানায় যে কক্ষে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়, সে ঘর নতুন করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারেও খালেদা জিয়াকে নেওয়ার বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে তার জন্য বিশেষ কিছু সুবিধাসহ কক্ষের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সরকার কখন খালেদা জিয়াকে গুলশান থেকে জেলখানায় স্থানান্তর করে, তা নিশ্চিত নয়। তবে এটা নিশ্চিত, খালেদা জিয়াকে জেলে ফেরত পাঠানোর কথা নিছক হুমকি নয়।