খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে সংলাপ, ব্যাচেলেটের প্রস্তাবে বিএনপি

ছবি সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের পরামর্শ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্যথায় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো পরিবেশ নেই।

১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আগের দিন ঢাকা সফর নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর করতে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা ও আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কেও আমরা সরকারকে সব স্টেকহোল্ডার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে বসে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছি।

বিএনপি নেতা বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো সংলাপ হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকার পদত্যাগ না করবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করবে, সংসদ বিলুপ্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না।

খালেদা জিয়া এখন মুক্ত হলেও তার ১৭ বছরের সাজা রয়েছে, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে স্থগিত আছে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের পাঁচ বছরের সাজা হয়। একই বছর উচ্চ আদালত সেই সাজা বাড়িয়ে করে ১০ বছর। আবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালত অন্য একটি রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সাত বছরের সাজা দেয়। এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেও তার মীমাংসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিএনপি।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত হয়। এরপর তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর আরও তিন দফা সাময়িক মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হয়, যেটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে।

বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, তার আবার হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনো হয়নি।

সকাল থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে যেকোনো সময় হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে।

ফখরুল বলেন, ‘ম্যাডাম খুব ভালো আছেন। তার প্রতিটি টেস্টের রিপোর্ট ভালো। টেস্টে কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতাল থেকে সর্বশেষ বাসায় আসার পর এমন কিছু হয়নি যে এই মুহূর্তে হাসপাতালে যেতে হবে। মূলত হচ্ছে অসুস্থতার মধ্যে তিনি সুস্থ আছেন। আপনারা কোথায় কী শুনেছেন, কীভাবে এটা ছড়ানো হলো বুঝতে পারলাম না।’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও জবাব দেন ফখরুল, ‘যে বুলেট শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, বেগম জিয়া সেই বুলেট আপনাকেও ছাড়েনি’- সড়কমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা তো ভয়ংকর কথা, এই বুলেটের কথা যদি তিনি বলে থাকেন, তাহলে আমার সন্দেহ হয়, আমি জানি না-শুনিনি কিন্তু তাহলে বোঝা যাবে তিনি পুরোপুরিভাবে এই ধরনের একটি চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত আছেন।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তারা রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চান এবং জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত পরিকল্পনা রয়েছে কি না সেই প্রশ্ন নিশ্চয় আসে। এটা তাকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে। কারণ, তিনি দায়িত্বশীল সরকারের মন্ত্রী, এটা প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। তিনি যদি বলে থাকেন যে আমি এটা বলিনি, তাহলে তাকে এটা বলতে হবে। তিনি যদি বলে থাকেন তাহলে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’

এ সময় বিএনপির মিডিয়া সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

ঠিকানা/এনআই