খুর-খচ্চরে গোল্ডেন চান্স?

মোস্তফা কামাল : ‘কাটা বাদল’ সম্বোধন করে আমার এক লেখায় যারপরনাই কষ্ট পেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান বাদল। সময়টা ১৯৯১ সালের শেষ দিকে। তিনি ভাবেননি, কল্পনাও করেননি আমার মতো স্নেহভাজনের কলমে তার নামের সঙ্গে ‘কাটা’ শব্দটি আসবে। সহকর্মী, বন্ধু শওগাত আলী সাগরের (বর্তমানে কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক) মধ্যস্থতায় টিএসসিতে এ নিয়ে বাদলের সঙ্গে মিলমিশ, বোঝাপড়া, দুঃখ প্রকাশ। খ্যাপাটে বাদল ভাই স্তম্ভিত। ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের অধিকার। রাগলেন না। চটলেন না। তার চোখের কোণে পানি। রাগী মানুষ চুপ হয়ে গেলে বা অভিমান করলে এমনই হয়?
ছাত্রলীগের কাউন্সিল সামনে রেখে বিরানব্বইয়ের ৯ জানুয়ারি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে টিএসসিতে খুন হন বাদল ভাই। কিছুটা তথ্য, কিছুটা টুইস্ট করেই লেখায় ঢুকে পড়েছিল ‘কাটা বাদল’ সম্বোধনটি। সেই দহনে এখনো লজ্জিত আমি। বাদল ভাই রাগ-ক্ষোভ নয়, অভিমান করে বলেছিলেন, তার ছাত্রলীগ সেক্রেটারি হওয়া নিশ্চিত প্রায়। এ রকম সময়ে নামের সঙ্গে ‘কাটা’ শব্দটি লাগিয়ে তাকে কলঙ্কিত করা খুব জরুরি ছিল? চিন্তা ও প্রতিবাদের কত দূরদর্শিতা! আজকের বাস্তবতা কোথায়?
নামের সঙ্গে এখন ঠুংডা, ডুঙা, ল্যাংড়া, লুচ্চা যোগ হলেও বাড়তি বেনিফিট আসে। আর প্রচার তো বোনাস। বাজারে চাহিদাও বেশ। আজকের দিনে দেশবন্ধু, নেতাজি, মহাত্মা, বঙ্গবন্ধু, শেরেবাংলা, লাল মওলানা হওয়ার আগ্রহী কজন আছেন? পল্লিবন্ধু বা দীপবন্ধুই-বা হতে চান কেউ? মা-বাপের দেওয়া নামও বেমালুম হয়ে যাচ্ছে। চৌধুরী, খন্দকার, পাটোয়ারী, বেপারীর চলও কমে গেছে। এর চেয়ে ডগ, কুত্তা, কানকাটা, সোনা, গিট্টু ধরনের খেতাব বা উপাধি গর্জিয়াস হয়ে উঠছে না?
নইলে মুরগি মিলন, কালা জাহাঙ্গীর, লেদার লিটন, টোকাই সাগর, সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হান্নান, কুত্তা মিজান, ডগ শিশির, ছ্যাঁচড়া জামাল, কিলার আব্বাস, নাটকা বাবু, গিট্টু নাসির, শ্যুটার লিটন, টুণ্ডা জলিল, জংলি শামীম, ডিব্বা হারুন, আণ্ডা দেলু, চোট্টা হাইবা, চিকা হারুন, চিটার কবির, কাঁকড়া মানিক, সেঞ্চুরি মানিক, বাস্টার্ড সেলিম, ল্যাংটা করিম, খচ্চর হাবিব, পকেট রফিক, ডাইনিং বাবু, ঠ্যাক খাইরু, খুর হাদিছ, টুণ্ডা হারুন, ডাইল খোকন, সোনা মজিব, গোল্ডেন মনিরদের সার্কুলেশন এত বেশি কেন? এসব নামে ডাকলে তারাও তো মাইন্ড করে না। বরং জোশই পায়। মাঝেমধ্যে এদের কেউ কেউ কেন ধরা পড়ছে? কেনই-বা নতুন সোনা, মুরগি, কুত্তা, লেদার, ছ্যাঁচড়া, নাটকা, গিট্টু, টুণ্ডা, ডিব্বা, চোট্টা, বাস্টার্ড, ল্যাংটা, খচ্চর, ঠ্যাক, খুর, ডাইলরা জন্ম নিচ্ছে? বাম্পার ফলনের কারণে গুদামে জায়গা না হওয়ায়?
শুনতে বিশ্রী লাগলেও এসব নামে অসংখ্য মানুষের ভিড়ে তারা কি উদ্ভাসিত নয়? প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখা বা নায়ক-নায়িকার খবরের চেয়ে মানুষ এদের কাহিনিই-বা কেন বেশি পছন্দ করছে? রোমাঞ্চ-থ্রিল বেশি বলে? শহর-বন্দর-জনপদ কোথায় নেই এরা? মাস্তানি, চুরি, ছ্যাঁচড়ামিতে হিরো হওয়ার এমন উদার লীলাভূমি বিশ্বে আর কোথায় আছে?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন