
ঠিকানা রিপোর্ট: মহান মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট গণসংগীত শিল্পী মাহবুবুল হায়দার মোহনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী ২৩ মার্চ। তার মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ঢাকা, কুমিল্লা এবং নিউইয়র্কে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ঢাকায় বিশেষ স্মরণ সভা আয়োজন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গণসংগীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদ এবং ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী। এছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এ উপলক্ষে আয়োজিত হবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সমাবেশ এনং কাঙালি ভোজ। ২৩ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় নিউইয়র্ক এর জ্যাকসন হাইটসের খাবার বাড়ী চাইনিজ হলে এ উপলক্ষে আয়োজিত হবে এক বিশেষ স্মরণ সভা। এই স্মরণ সভা আয়োজনে থাকছে মাহবুবুল হায়দার মোহন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন । এখানে উল্লেখ্য, দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এই মহান মুক্তিযোদ্ধা এবং গণসংগীত শিল্পী ২০১২ সালের ২৩ মার্চ ঢাকায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সেবার ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত বিজয় দিবসের পুরো অনুষ্ঠানমালা প্রয়াত মোহনের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
জন্মগত ভাবেই মোহনের মধ্যে ছিল সংগীতের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। চট্টগ্রাম সংগীত পরিষদের একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই শুরু করেছিলেন আনুষ্ঠানিক চর্চা। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবেশ এবং পরিস্থিতির কারণে তাঁকে এক পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার বিপরীতে প্রতিবাদী সংস্কৃতি চর্চায় মনযোগী করে তোলে। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামে সম্মিলিত ২১ উদযাপন কমিটি গঠিত হলে তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী পুনরায় সংগঠিত করার মাধ্যমে সেখানে বেশ কয় বছর অত্যন্ত মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। নানান প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়েও মোহন এই সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
১৯৮৩ সাল থেকে মাহবুবুল হায়দার মোহন ঢাকায় স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন এবং সময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এই সময় তিনি প্রায় নিষ্ক্রিয় ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীকে সচল করার কাজে হাত দেন। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর এ বিখ্যাত সাংস্কৃতিক বক্তিত্ব কাজি বাহাউদ্দিন আহমেদকে আহবায়ক করে সেগুন বাগিচার একটি বাড়িতে ক্রান্তি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৬০ সালে ক্রান্তির অন্যতম মূল প্রতিষ্ঠাতা কামাল লোহানী, আমানুল হক এবং অন্যান্যদেরকেও এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করেন। । নব গঠিত ক্রান্তি ৮৫ সালে প্রভাত ফেরীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে ক্রান্তির যে অগ্রযাত্রা তা অব্যাহত রয়েছে। গেলো বছর তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শ্রদ্ধেয় শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলিকে ‘মাহবুবুল হায়দার মোহন পদক’ প্রদান করা হয়।
দেশ বরেণ্য কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী আমৃত্যু ক্রান্তির সভাপতি থেকে এই সংগঠনকে মহিমান্বিত করেন। তাঁর আগে সাইয়িদ মোয়াজ্জেম হোসেনও কিছুকাল ক্রান্তির সভাপতি ছিলেন। মাহবুবুল আলম চৌধুরী র প্রয়ানের পর মাহবুবুল হায়দার মোহন ও আমৃত্যু ক্রান্তির সভাপতি ছিলেন।। মরহুম মোহনের জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। তাঁর পিতা মরহুম আমিন উল্লাহ মজুমদার ব্রিটিশ রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। বাবার চাকুরীর কারণে তাঁর শৈশব কাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে । তাঁর প্রকাশিত অ্যালবাম এর ভেতর অন্যতম হোল জাগরণের গান “আমার ভালোবাসার স্বদেশ’ গণসংগীত “লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে” ইত্যাদি। তাঁর কণ্ঠে রেকর্ডকৃত কিছু দেশের গান বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রায়ই প্রদর্শন করে থাকে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি থাইল্যান্ড এবং ভারতে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা মোহনের চিকিৎসা সাহায্যার্থে নিউইয়র্কে সাউথ এশিয়ান মিউজিক সোসাইটি বিশেষ বেনেফিট কনসার্টের আয়োজন করে। নিউইয়র্ক বসবাসরত স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠ যোদ্ধা শহীদ হাসানের লেখা এবং সুরে ‘ লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ গানটি মাহবুবুল হায়দার মোহনের কণ্ঠে ব্যপক সমাদৃত হয়। উল্লেখ, ফেসবুকে ‘মাহবুবুল হায়দার মোহন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন পেইজে প্রায় ২০ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে।