গত পাঁচ মাসে ইরানে ৩০৭ জন বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর!

আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম। ছবি : সংগৃহীত

ঠিকানা অনলাইন : ইরানে গত বছর হিজাববিরোধী আন্দোলন শুরুর পর থেকেই দেশটিতে ক্রমশ বাড়ছে মৃত্যুদণ্ডের হার। আর আদালতে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তদের বড় অংশই দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে।

বৃহস্পতিবার নরওয়েতে মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) তেহরানের সরকারি তথ্য উদ্ধৃত করে ইরান ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সে দেশে ৩০৭ জনেরও বেশি বন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

এর মধ্যে শুধুমাত্র গত মে মাসেই ১৪২ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে!

আইএইচআর তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ইরানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক মাসের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা।

২০২২ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হার বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

বস্তুত, গত মে মাসে প্রতিদিন গড়ে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে তেহরান কর্তৃপক্ষ।

আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেছেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য হলো সমাজে ভয় ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে বিক্ষোভের বিরুদ্ধে মানুষের মনে ভয় তৈরি হয়। এর অপর উদ্দেশ্য শাসনকে দীর্ঘায়িত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি মৃত্যুদণ্ডের বর্তমান তরঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তা হলে আগামী মাসগুলোতে আরও শত শত লোক হত্যার শিকার হবে।’

আমিরি-মোগাদ্দাম উল্লেখ করেছেন যে, তেহরান কর্তৃক ঘোষিত পরিসংখ্যান গোপন করার কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার তুলনায় অনেক কম।

তিনি বলেন, ‘ইরান সর্বকালের সবচেয়ে বড় সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে। ইরান সেই সংকটের সমাধান করতে না পেরে প্রতিবাদ বন্ধ করতে জনগণকে ভয় দেখানো শুরু করেছে এবং মৃত্যুদণ্ড হলো ভয় দেখানোর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ প্যারাস্তু ফাতেমিও বিশ্বাস করেন যে, মৃত্যুদণ্ডের বৃদ্ধি প্রতিবাদকারীদের রাজপথ থেকে তাদের বাড়িতে ঠেলে দেওয়ার একটি কৌশল।

তিনি বলেন, যখনই শাসনব্যবস্থা রাস্তার প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়, তখনই ইরান মানুষের মধ্যে ভয় জাগিয়ে তুলতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

এপ্রিলের শেষদিক থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি তরঙ্গের মধ্যে ১৯ মে তিনজন প্রতিবাদকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় তেহরান। এরা হলেন– মাজিদ কাজেমি, সাঈদ ইয়াঘুবি এবং সালেহ মিরহাশেমি।

২২ বছর বয়সি মাহসা আমিনির হেফাজতে মৃত্যুর পরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়।

মার্চের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল, ইরানে অন্তত সাতজন ব্যক্তি বিক্ষোভের কারণে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন এবং আরও কয়েক ডজন মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ইরানে এ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ৭৫০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং অন্তত ৩০ হাজার গ্রেপ্তার হয়েছে।

অনেককে মুক্তি দেওয়া হলেও প্রায় ১,৫০০ জনকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং কমপক্ষে ৮০ জন বন্দি ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছে। সূত্র : ইরান ইন্টারন্যাশনাল

এসআর