ঠিকানা অনলাইন : দুই বছর আগে নিজের জন্মদিন উদ্যাপন করতে গিয়ে গাঁজায় টান মেরেছিল জাস্টিন। এর পর থেকে সে প্রতিদিনই এটি কয়েকবার করে সেবন করছে।
১৫ বছর বয়সী জাস্টিন বর্তমানে পড়াশোনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির একটি স্কুলে। স্কুলটির কাছাকাছি এক কোনায় দাঁড়িয়ে সে বলে, ‘গাঁজা টানলে আমার খুব চিল হয়। তখন কোনো কিছুই আমাকে আর বিচলিত করে না।’
জাস্টিন যখন কথা বলছিল, তখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ধূমপান করতে দেখা যাচ্ছিল। রাস্তার কোনায় থাকা একটি সিগারেটের দোকানে তখন ভিড় জমিয়েছে স্কুলড্রেস আর কাঁধে বইয়ের ব্যাগ ঝোলানো বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে। আধঘণ্টা পরই প্রথম ক্লাসের বেল বাজবে। ক্লাসে ঢোকার আগে তাই ধূমপান সেরে নিচ্ছিল তারা।
কিছু কিছু কিশোর গাঁজা টানে-এমন চিত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে অসংখ্য শিক্ষার্থী ধূমপান এবং গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেও ফাঁক পেলেই গাঁজা, সিগারেট টানছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বিনোদনের অংশ হিসেবে নিউইয়র্কে গাঁজা সেবন বৈধ করা হয়। সে সময় কিশোর বয়সীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের হার আগের কয়েক বছর তুলনায় সর্বনিম্ন ছিল। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে গাঁজা সেবনকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গাঁজা সেবন করে অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় দেরি করে হন্তদন্ত হয়ে তারা ক্লাসে প্রবেশ করছে।
এ অবস্থার জন্য লাইসেন্সবিহীন তামাক-সিগারেট বেচা দোকানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন শিক্ষকেরা। আজকাল স্কুলের বাথরুম এমনকি সিঁড়িগুলোকেও ধূমপানের স্থানে পরিণত করছে শিক্ষার্থীরা। গাঁজার উৎকট গন্ধ সারা স্কুলে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। কিন্তু গাঁজা সেবনের জন্য শিক্ষার্থীদের জবাবদিহির আওতায় আনার ঘটনা খুবই কম।
ব্রুকলিনের একটি পাবলিক স্কুলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন ৪৪ বছরের বিলি। গাঁজা সেবনকারী শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এটি একটি অপ্রতিরোধ্য ঢেউ, যাকে কমানোর জন্য আমরা বৃথাই চেষ্টা করছি।’
এপ্রিল ম্যাকোয় নামের সাবেক এক অধ্যক্ষ নিউইয়র্ক টাইমসকে পাঠানো একটি চিঠিতে বর্ণনা দিয়েছেন কীভাবে ব্রুকলিনের একটি পলিটেকনিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
এপ্রিল লিখেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, অসংখ্য শিক্ষার্থী অল্প বয়সে ক্ষতিকর প্রভাবের কথা না জেনেই দিনকে দিন মারিজুয়ানায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।’ তার মতে, মহামারির পর শিক্ষার্থীরা মন খারাপ আর আইসোলেটেড অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা একে অপরকে গাঁজা সরবরাহ করছে।
নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরটিতে প্রায় দেড় হাজার লাইসেন্সবিহীন তামাক-সিগারেট বিক্রি করার দোকান রয়েছে। শিশুদের মধ্যে গাঁজা টানার প্রবণতা মূলত ওই দোকানগুলোই বাড়িয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় এক কাউন্সিলর জানিয়েছেন, তার এলাকায় গত সেপ্টেম্বরেই ১০টিরও কম তামাক-সিগারেটের দোকান ছিল কিন্তু চলতি বছরের মার্চের মধ্যে সেখানে এখন ৬৪টি দোকান।
জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস সম্প্রতি লাইসেন্সবিহীন তামাক-সিগারেটের দোকান উচ্ছেদের ঘোষণা দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ঠিকানা/এনআই