ঠিকানা অনলাইন : রাজধানীর গুলশানে আরিফ নামের এক যুবক বিকাশের দোকানে গিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা বিভিন্ন নম্বরে পাঠান। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই যুবককে আটকে দেন বিকাশের দোকানি। পরে আরিফের কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসা অহিদুল ইসলাম মিন্টুসহ কয়েকজন তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গুলি ছোড়েন অহিদুল। এতে গুলিবিদ্ধ হন দুই পথচারী।
১৫ জানুয়ারি রোববার বিকেল চারটার দিকে গুলশানের গ্লোরিয়া জিনস কফিস বাংলাদেশ নামে একটি কফিশপের সামনে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করে গুলশান থানার পুলিশ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টুসহ (৪৬) পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।
গুলিবিদ্ধরা হলেন পথচারী প্রাইভেটকার চালক মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আলিম সিকদারের ছেলে। আরেকজন ভ্যানচালক আব্দুর রহিম মিয়া (৫০)। তিনি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ছনের আকনের ছেলে। আমিনুল বর্তমানে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ও রহিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আটককৃত পাঁচজন হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টু (৪৬), ওমান প্রবাসী ও কুমিল্লার লাকসামের বাসিন্দা মো. আরিফ হোসেন (২৪), আরিফের ভগ্নিপতি মনির আহমেদ (৩৫), বিকাশ দোকানি হাবিবুর রহমান আলিম (৩৫) ও দোকানির সহকারী খলিল খান (১৮)।
বিকাশ দোকানি ও তার সহকারীর গ্রামের বাড়ি সিলেটে। তারা গুলশানের গুদারাঘাট এলাকায় থাকেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি, তিনটি গুলির খোসা, চারটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে। পিস্তলটি লাইসেন্স করা বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, গুলির ঘটনার সূত্রপাত একটি বিকাশের দোকান থেকে। বিকেল চারটার দিকে আরিফ নামে এক যুবক গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের হাবিবের বিকাশের দোকানে যান। সেখানে গিয়ে আরিফ বেশ কয়েকটি নম্বরে মোট ৭৫ হাজার টাকা পাঠানোর কথা বলেন। আরিফের কথা অনুযায়ী হাবিব নির্দিষ্ট নম্বরগুলোতে ৭৫ হাজার টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর আরিফের কাছে ৭৫ হাজার টাকা হাবিব চাইলে টাকা না দিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল আহাদ বলেছেন, আরিফ টাকা না দেওয়ায় আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে হাবিব তাকে আটক করেন। আটক থাকা অবস্থায় তিনি তার স্বজনদের বিষয়টি জানান। এরপর আরিফের ফোন পেয়ে টিপু, হুমায়ুন, স্বেচ্ছাসেবক নেতা অহিদুল ইসলাম মিন্টু ও শরিফ ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর বিভিন্নভাবে আরিফকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে আরিফকে ছাড়তে চাননি হাবিব। এতে ঘটনাস্থলে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আরিফকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অহিদুল ইসলাম মিন্টু গুলি করেন। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন।
প্রত্যক্ষদর্শী আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তি জানান, রোববার বিকেলে ডিএনসিসি মার্কেটের চাঁদপুর বিরিয়ানী হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশে থাকা একটি বিকাশের দোকানে এক ব্যক্তি আসেন। এরপর তিনি দোকানির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ৭৫ হাজার টাকা পাঠান। শেষে দোকানি তার কাছে টাকা চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং বলতে থাকেন আমার লোক আসছে। এরপর সেই ব্যক্তির হয়ে সেখানে হাজির হন আরও কয়েকজন যুবক। তারা এ সময় দোকানির সঙ্গে টাকা নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একজন গুলি ছোড়েন। এ অবস্থায় লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর মাঝেও ব্যবসায়ীরা জড়ো হন এবং ওই ব্যক্তিকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আবু সাঈদ আরও জানান, ব্যবসায়ীরা তাকে ধরে সেখান থেকে গ্লোরিয়া জিনস কফি হাউসের সামনে নিয়ে গেলে আরেক দফা গুলি করেন সেই ব্যক্তি। এবার তার গুলিতে একজন ভ্যানচালক ও গ্লোরিয়া জিনস থেকে বের হওয়া এক গ্রাহক আহত হন।
এদিকে যাচাই-বাছাই শেষে পিস্তলটি মিন্টুর লাইসেন্স করা বলে জানতে পেরেছে গুলশান থানার পুলিশ। এর মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ঠিকানা/এনআই