গেদুচাচার খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
হাছিনা বিবি,

চিঠির প্রথমেই দেশ-গেরামের লাখো কুঠি পাবলিকের পক্ষ হইতে আপনি অধম নাখান্দা-নালায়েক গেদুচাচার শতকুঠি ছালাম গ্রহণ করিবেন। আশাকরি মহান আললাহ মালিকের অপার মহিমায় একপ্রকার ছহি ছালামতে আছেন। খোদার ফজলে শাহজী বাবার নজর-করমে আমরা কোনোরকমে বাঁচিয়া আছি। প্রতি সপ্তাহের মতো আজও বেশকিছু দরকারি কথাবার্তা লইয়া আপনার সমীপে দুই কলম লিখিতে বসিলাম। আশা করি আগের মতো এই চিঠিখানিতে একবার নজর বুলাইবেন।
পর সমাচার হইলো এই যে,
বিচার বিভাগতো এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাহার পরও দশ বছরেরও বেশি সময় পার হওয়ার বিডিআর হত্যাকাণ্ড, কিবরিয়া হত্যা, আহসান উল্যাহ মাস্টার হত্যাসহ সাড়া জাগানো অনেক হত্যাকাণ্ডের কেন বিচার শেষ হয়না? এই বিচারগুলো আটকিয়া থাকিলে ছোটোখাটো বিচারতো ৩০ বছরেও শেষ হইবেনা।

জননীগো, সুশাসন কায়েমে আপনিতো বন্ধপরিকর। অথচ গত দশ বছরে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ ঢাকায় আপনার দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের অগণিত ছেলে খুন হইয়াছে। কিন্তু ইহার কোনোটার বিচারও হইতেছে না। খুনের বিচার তাৎক্ষণিক না হউক, অন্তত দুই বছরে হইলেও শেষ হওয়া দরকার। না হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হইয়া যাইতে পারে। যাহাতে খুন পান্তাভাতের লাহান হইয়া যাইবে। আইনের শাসন স্বপ্নই থাকিয়া যাইবে?

দেশে মাদক-দুর্নীতি আর জঙ্গির মতো আজ আরেকটা সামাজিক ব্যাধি প্রকটর আকার ধারণ করিয়াছে। তাহা হইলো ধর্ষণ, শিশু হইতে বৃদ্ধ কেহই বাদ যাইতেছেনা। প্রতিদিন এ রকম ৫/৭টা খবর মিডিয়ায় আসিতেছে। এই ব্যাধি নির্র্মূল করিবার জন্য কঠিন আইন বানানোর জন্য বারবার লিখিয়াছি। কহিয়াছিলাম ৯০ দিনে বিচার শেষ করা, এই জন্য ট্রাইব্যুনাল ও সংক্ষিপ্ত বিচার আইন তৈরি, মামলায় ম্যান্ডেটরি মৃত্যুদণ্ড, আপিলের সুযোগ বাতিল ও সাথে সাথে কার্যকরের বিষয় লইয়া একটা আইন পাশ করেন।
এসিড নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড আইন হইবার পর ইহা এখন কহিতে গেলে আর নাই। এই রকম ধর্ষণেও আইন দরকার।

রাস্তায় দুর্ঘটনাতো আর কমিতেছে না। প্রতিদিন মানুষ মরিতেছে। সড়ক আইন সংস্কার করিয়া ইহাতেও রক্তঋণ পরিশোধ বা মৃত্যুদণ্ড করেন আরবের মতো। দেখিবেন, দুর্ঘটনা কমিয়া দিনে দিনে জিরোতে চলিয়া আসিবে। দয়া করিয়া উন্নয়ন-অগ্রগতির বেগবান ঘোড়ার পাশাপাশি সমাজ ও দেশের জন্য এই কামগুলা করেন।

জননীগো, মন্ত্রী ও নেতা ওবায়দুল কাদেরের জন্য আপনি যেইভাবে আপন ভাই ও সন্তানের মতো উদ্বিগ্ন হইয়া চিকিৎসার ইতিহাসে একটা নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করিলেন, তাহা সারা জাতি চিরদিন স্মরণে রাখিবে। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ হইতে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফিরিয়া আসিবার জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে আপনি অনন্য নজির স্থাপন করিয়াছেন। আপনার ডাকে দেশবাসী এই নেতার জন্য দল-মত নির্বিশেষে মসজিদ-মন্দির-গীর্জঅসহ সর্বত্র প্রার্থনা করিতেছে। আপনি তাহাকে কতটা ভালোবাসেন তাহা জনগণ দেখিয়াছে। পদ্মাসেতু, দেশের সকল সড়ক, মেট্রোরেল, পাতাল রেলসহ সকল ব্রিজ, এমনকি কর্ণফুলী টানেলের কাজ-কর্মের মন্ত্রী হিসেবে তাহাকে দায়িত্ব দিয়াছেন। আবার আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের এক নম্বর নির্বাহীর কাজে রাখিয়াছেন। তাইনেও ঘুম-অবসর, সমাজ-সংসার সকলই বাদ দিয়া আপনার দেওয়া দায়িত্ব পালনে দিন-রাত পরিশ্রম করিয়া আজ শারীরিক বিপর্যয়ে পড়িয়াছেন। তাহার চিকিৎসায় যেইভাবে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক ও ভারতের শেঠী বাবু মুহূর্তে দেশে হাজির হইয়া গেলো, তাহাতে দেশবাসীর মনে হইলো তাহারা স্বপ্ন দেখিতেছে।

জননীগো, শেঠী বাবুকে কহিয়া আমাদের দেশে সিঙ্গাপুর ও ভারতের লাহান ঢাকা-চট্টগ্রামে অন্তত দুইটা আন্তর্জাতিকমানের বড় হাসপাতাল তৈয়ার করেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের মতো চিকিৎসকের পাশাপাশি বিদেশি চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। পাবলিক চিরদিন আপনাকে মনে রাখিবে। মুক্তিযোদ্ধাদের যাহারা ভাতা পাইতেছিলো, তাহারা তালিকায় আসিয়াছে কঠিনভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর। এনএসআইসহ সকল গোয়েন্দা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তাহাদের সব পরীক্ষা করিয়াছে। আজ যখন ডিজিটাল সনদের সময় আসিয়াছে, তখন হঠাৎ করিয়া তাহাদের একাংশকে প্রশ্নবিদ্ধ করিবার কাজটি ঠিক নহে। ইহাতে হাজার হাজার মামলায় এই মন্ত্রণালয় জর্জরিত হইবার আশঙ্কা আছে। মুক্তিযোদ্ধারা আর বড় জোর ১০ বছর থাকিবে। ইহার পর দুই-একজন জীবিত থাকিতে পারে। জীবনের শেষভাগে আসিবার এই সময়ও যদি বাছাইয়ের নামে ভেলকীবাজী চলে, তাহা হইলে মরণের পর কি সঠিক তালিকা করিবেন? আপনার দেওয়া সনদ লইয়া সরকারের প্রজ্ঞাপন আছে। আপনার কার্যালয় গোয়েন্দা রিপোর্টও যাচাই-বাছাই করিয়া ইহা দিয়াছে। এই সনদধারী আর খালেদা জিয়া ও অন্যদের সনদধারী কি একই জিনিস? দয়া করিয়া বিষয়টা ভালোভাবে নিতে কহেন। বক্তৃতা দিয়া বা ডিসিদের ফোন করিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কেহ যেন অপমানিত না করে।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাও আজ হতাশায়। কেন জাতির পিতার দেওয়া ৩০ ভাগ কোটা আজ অন্ধকারে। আপনার প্রতি তাহাদের অগাধ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস। বিষয়টা আন্তরিকভাবে দেখিতে কহিয়া দেন।

গত সপ্তাহে হাইকোর্ট একটা মুক্তিযোদ্ধার মামলার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন রাখিয়াছে ৪৭ বছর পরেও কিসের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই? কি কারণে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এই হয়রানি? এই রকম ভেজাইল্যা কাম করিলে ৪০ হাজার রিট ও মামলায় মন্ত্রণালয়ই অচল হইয়া যাইবে।
ভূমিতে খতিয়ান তৈরি, মিউটেশন ও খাজনা হালনাগাদ করা একটা আদালতি কাজ ছিল। অনেকে জমি থাকার পরও এক গণ্ডা জমি বেচিতে পারিতেছিলোনা। ভূমিমন্ত্রী এই দুর্নীতির আখড়া ভাঙ্গিয়া দিতে ডিজিটাল খতিয়ান চালু করিয়াছেন। এখন অনলাইনেই খতিয়ান পাওয়া যাইবে। মন্ত্রী জাবেদ চাচা কহিয়াছেন, সারাদেশে দুই-চার মাসের মধ্যে ইহা চালু হইয়া যাইবে। পাবলিককে আর ঘুষ দিতে হইবে না।

ভূমি দুর্নীতি দেশের সেরা দুর্নীতি। ইহা শেষ না করিলে পাবলিকের ছিদ্দত শেষ হইবেনা। সেগুনবাগিচার কাইউম নেতায় কহিলো, এশাদ চাচা ৩০ বছরও তার অধিক বছরের জন্য সরকারি লিজের সম্পত্তি আর নতুন করিয়া লিজ নিতে হইবে না বলিয়া আইন জারি করিয়াছিলেন। ২০০৫ সালে মন্ত্রী মওদুদ আহমেদ ভূমিনীতিতে মেয়াদ শেষে নবায়ন করার আদেশ জারি করিয়া আজ রাজউক অনুমোদিত সেগুনবাগিচার ভবনগুলোতে জটিলতা তৈয়ার করিয়াছে। এই জটিলতা নিরসনে ভূমিমন্ত্রীকে কহেন একটা প্রজ্ঞাপন জারি করিয়া দিতে। মানুষ দুই হাত তুলিয়া আপনার জন্য দোয়া করিবে।
চোখ কান খোলা রাখিবেন। এইখানেই শেষ করিতেছি। বিশেষ কি।
ইতি,
আপনারই ৬৮ হাজার গেরামের
নালায়েক নাখান্দা অধম
গেদুচাচা
গ্রন্থনা : খ.ম.হ. তাং ৯ মার্চ-২০১৯