গোলরক্ষকের ভুলে ব্যর্থতার ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্ট : ‘বুঝি না সোহেলের মতো গোলরক্ষক কিভাবে বাংলাদেশ দলে বারবার চান্স পায়। সে তো নিত্য এমন বাজে গোল হজম করে। দুই বছর আগে আমি ছিলাম নৌবাহিনীর কোচ। তখনো এই সোহেল ঠিক এইভাবেই গোল খাইয়েছিল। ভাগ্যিস ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দল এগিয়ে ছিল। দলগঠনে পক্ষপাতিত্ব এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হলে এমনটা হবেই।’ ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললেন আবু ইউসুফ। ২০০৮ এর সাফে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের আরেক নামকরা এবং সাফ ও এসএ গেমস মিলে দুটি শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি বিপ্লব ভট্টাচার্যের মতে, ‘খুবই ভাইটাল পজিশন গোলরক্ষক পজিশনটা। বাংলাদেশের ফুটবলে অতীতের সব সাফল্যে বিশাল অবদান ছিল গোলরক্ষকদের। কিন্তু আমরা এবার বাদ পড়লাম কিপারের ভুলে। এই সোহেল তো আগেও ভুল করেছে। তাহলে কেন তাকে দলে নেয়া হচ্ছে।’ অনেকে এ জন্য তীর ছুড়ছেন ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপুর দিকে। যিনি জাতীয় দলের পাশাপাশি ঢাকা আবাহনীরও ম্যানেজার। সোহেলও খেলেন আবাহনীতে। বিপ্লব অবশ্য এ জন্য রূপুকে দোষ দিচ্ছেন না। তার মতে, ‘তাহলে গোলরক্ষক কোচের কাজ কী। তিনি কেন সেরা গোলরক্ষককে নির্বাচন করলেন না।’
এইবার বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার দায় নিতে হচ্ছে সোহেলকে। এ নিয়ে আটবার জাতীয় দল এবং ক্লাব মিলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল খাওয়ালেন তিনি। অবশ্য আমিনুল-বিপ্লবের পর বাংলাদেশ দলে কোনো গোলরক্ষকই আস্থাশীল হতে পারেননি। ব্যর্থতার পাল্লাটা সোহেলেরই বেশি। এর আগে গোলরক্ষক মোস্তাক, হিমেল, মামুন খান, লিটন এবং রানারা দফায় দফায় বাংলাদেশ দলকে ডুবিয়েছেন। ২০১১ সালের দিল্লি সাফে, ২০১৫ এর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে, ২০০৯ এর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ আসরে এবং ২০১৬তে এএফসি কাপে শেখ জামালকে ডুবিয়েছেন সোহেল। এবার সাফের আগে নীলফামারীতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রীতিম্যাচেও সোহেলের ভুলে হার বাংলাদেশের। ২০১২তে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রীতিম্যাচে গোলরক্ষক মোস্তাকের ভুলে ব্যাংককে থাইল্যান্ডের কাছে ৫-০তে হার লাল-সবুজদের। ২০১৩ সাফে বাংলাদেশের ব্যর্থতার নেপথ্য ছিলেন কিপার মামুন খান। ২০১৫ সালে ঢাকায় প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরের কাছে বাংলাদেশের পরাজয়ের পেছনে ছিল গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেলের ভুল। ২০১৫ সালের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সিলেটে মালয়েশিয়ার কাছে বাংলাদেশের পরাজয়ের কারণ ছিল গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটনের ব্যর্থতা।
বাংলাদেশের ভুটান ট্র্যাজেডির পেছনে সেই কিপার। ২০১৬ থিম্পুতে বাংলাদেশের ১-৩ গোলে হারের পেছনে ছিল গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানার ভুল। এবার এশিয়াডে বাংলাদেশ লিড নিয়েও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারেনি। তাও রানার বলের ফ্লাইট মিসের কারণে। যে কারণে সাফের একাদশে তাকে স্থান দেননি কোচ জেমি।
শেখ রাসেলের কোচ সাইফুল বারী টিটুর বক্তব্য, ‘দেশে কি আর কোনো নতুন ভালো মানের কিপার আছে। যার ওপর ভরসা করা যায়। সোহেল নিশ্চয়ই জাতীয় দলের সেরা কিপার। তাই তাকে খেলানো হচ্ছে।’ তার মতে, সোহেল বেশ ভালো সেভ করেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আবার নেপালের বিপক্ষে তার ভুলে টিমকে ভুগতে হলো। আমার মতে, ‘সোহেলের কাউন্সেলিং দরকার। কিপাররা সব সময় ভুল করে। নামদামি গোলরক্ষকরা ১৫-২০ ম্যাচ পর এই পথে পা দেয়। সোহেল মিসটা একটু বেশি করছে।’